মঙ্গলবার, ১৬ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » খালেদার কেক না কাটার কারণ ভিন্নঃ প্রধানমন্ত্রী
খালেদার কেক না কাটার কারণ ভিন্নঃ প্রধানমন্ত্রী
পক্ষকাল সংবাদঃ
পনের অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন না করাকে ‘রাজনৈতিক উদারতা’ হিসেবে দেখলে ভুল হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, ছেলে কোকোর জন্মদিন পালন করতে পারবে না বলেই বিএনপি নেত্রী জন্মদিন পালন করেননি।
মঙ্গলবার রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন উদযাপন না করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আহ্বানের প্রেক্ষাপটে এবার বন্যা এবং সরকারি নির্যাতন-নিপীড়নকে কারণ দেখিয়ে কেক কাটেননি খালেদা।
দিনটিতে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল করেছে বিএনপি।
শেখ হাসিনা বলেন, “যার জন্মদিন এই তারিখে না, শুধুমাত্র আমাদেরকে আঘাত দেওয়ার জন্য, যেদিন আমরা শোকে কাঁতর, বাবা হারিয়েছি, মা হারিয়েছি, ভাই হারিয়েছি সেই ব্যথায় যেদিন ব্যথিত থাকি, সেদিন আরেকজন কেক কেটে সেজেগুজে জন্মদিন পালন করে।”
“কালকে শুনলাম কেক যে কাটবেন না। এটাকে অনেকে রাজনৈতিক উদারতা হিসাবে দেখাতে চাচ্ছেন। আসল ঘটনা কী সেতো আমি জানি। ১২ আগস্ট তার ছেলে কোকোর জন্মদিন। কাজেই কোকোর জন্মদিন যেহেতু করতে পারবে না, সে মারা গেছে… তাই নিজেরটা করবে না। এটা হলো বাস্তব কথা।”
“সেটাই ছিল তার উদ্দেশ্য। যেহেতু ১২ই আগস্ট তার ছেলের জন্মদিন, ছেলে মারা গেছে মা হয়ে আর কী করবে। এটা রাজনৈতিক উদারতা নয়। কেউ যদি এটা মনে করেন, ভুল করবেন।”
খালেদা জিয়ার ‘অন্য জন্মদিনের’ হদিস পাওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “তাছাড়া সে করবে কী, এটাতো তার জন্ম দিন না। পাসপোর্টেতো অন্য তারিখ বা প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময় অন্য তারিখ দিয়েছে।”
“শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার জন্য, আমাদেরকে আঘাত দেওয়ার জন্য এ দিনটাকে বেছে নিয়েছিলো ফুর্তি করাতে…১৫ আগস্ট উৎসব করে জানিয়ে দেয় খুনিদের তাদের সাথে সে আছে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের হারানোর পর দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা এবং পরবর্তীতে দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পর ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকার সময় নিজের ছোট বোন শেখ রেহানার বিয়ের সময় লন্ডনে যেতে না পারার মনোকষ্টের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
“তার বিয়ের সময় আমি যেতে পারি নাই। যেতে পারি নাই একটাই কারণে। টিকেটের খরচ জোগাড় করা লন্ডনে যেয়ে থাকার খরচ কাছে ছিল না।”
আবেগাল্পুত হয়ে তিনি বলেন, “আমি পরিবারের একমাত্র সদস্য। ওর বিয়েতে থাকতে পারিনি। যেতে পারলাম না। ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা ওরকম ছিল না। কার কাছে বলব। আর আমাদের যে স্বভাব, কারো কাছে হাত পাতার… কিছু নেওয়া…কষ্ট করে বুকে চেপে রেখেছি কারো কাছে নত হয়নি। ৮০ সালে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় আসলেন। উনি শুনলেন, রেহানা সন্তান সম্ভবা… তিনি আমার টিকিটের ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা সব করে দিলেন।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান দিল্লি সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জিয়াউর রহমান যতদিন বেঁচে ছিল ওই বাড়িতে (ধানমন্ডির ৩২ নম্বর) আমাকে যেতে দেয়নি। বিনিময়ে অনেক কিছু দিতে চেয়েছিল। একজন খুনির কাছ থেকে কিছু নেওয়া আমার রুচিতে ছিল না।”
“আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির হিসেবে সফরে গিয়েছিল। বারবার আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছে। আমি দেখা করি নাই। ৮০ সালে যখন লন্ডনে, তখনও জিয়াউর রহমান লন্ডনে গিয়ে দেখা করতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, খুনির চেহারা আমি দেখতে চাই না।”
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, উপদেষ্টমণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ।