বুধবার, ২৪ আগস্ট ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » বিএনপি কি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, প্রশ্ন হাসিনার
বিএনপি কি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, প্রশ্ন হাসিনার
পক্ষকাল ডেস্কঃ
বিএনপির নতুন কমিটিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের থাকার প্রসঙ্গ তুলে দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে কি না- সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার নিজ কাযালয়ে ‘দুস্থ, অস্বচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সহায়তা ভাতা/অনুদানের চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এসময় সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুমোদিত বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ৫০২ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটিতে জায়গা পেয়েছে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত প্রয়াত আব্দুল আলীমের ছেলে।
অনুষ্ঠানে নতুন কমিটিতে কারা স্থান পেয়েছে- সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যেসব যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের সাথে জড়িত, এদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা করেছে, যাদের বিচার হয়েছে বাংলার মাটিতে; তাদেরই বংশধর, তাদেরই ছেলেপেলে, তাদেরকে নিয়ে যদি কোনো দল গঠন করা হয়, তাহলে সেই দল কি এই দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? সেই দল কি এদেশের মানুষের জন্য শান্তি আনতে পারে?”
শেখ হাসিনা বলেন, “তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, তারা দেশের মানুষের শান্তিতে বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, এটা হল বাস্তবতা।”
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে অর্থ ঢেলে বিদেশে লবিং করার অভিযোগ তুলে বিচার চলতে থাকবে বলে জানান তিনি।
“আমাদের যে সিদ্ধান্ত তাতে আমাদের অটল থাকতে হবে। আপনারা জানেন যে, আমরা তাতে থাকবো। কারণ আমার ক্ষমতা হারানোরও ভয় নেই, জীবন হারানোরও ভয় নেই।”
শেখ হাসিনা এসময় জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, “কিন্তু এখানে অনেক বিভৎস ঘটনা দেখি, যেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না।
“জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আজকে সমগ্র জাতি সোচ্চার। আপনাদেরও আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই যে, আপনারাও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন; আরও সোচ্চার হবেন- সেটাই আমি আশা করি।
“জনগণের মাঝে যদি আমরা সচেতনতা গড়তে পারি তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।”
প্রধানমন্ত্রী এসময় দেশের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উচু করে চলতে হবে।”
তিনি সাংবাদিকদের জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা ও আবাসন সুবিধাসহ তার সরকারের বেশকিছু পদক্ষেপও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতারা নবম ওয়েজ বোর্ডের দাবি জানালে সে বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমার কাছে দাবি করার প্রয়োজন হয় না। ট্রাস্টের দাবি আপনারা কেউ করেননি।
“অষ্টম ওয়েজ বোর্ড আমরা দিয়েছি। আপনারা নবমের দাবি তুলেছেন। এখানে মন্ত্রী আছেন, আমি বলবো, যথাযথ ব্যবস্থা নিতে।”
পাশাপাশি সাংবাদিকদের ‘দায়িত্বের সঙ্গে কর্তব্য’ পালনের পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
“স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু সে স্বাধীনতা ভোগ করতে হলে দায়িত্বও পালন করতে হয়, দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব।”
এসময় গুলশানের ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা ও বিডিআর বিদ্রোহের সময় টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংবাদপত্র সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা আমাদের দেশেই ভোগ করে। কিন্তু মাঝে মাঝে যেসব ঘটনা ঘটায় তাতে অসুবিধায় পড়ে যেতে হয়।”
এজন্য সাংবাদিকদের নীতিমালা মেনে চলতে হবে- মন্তব্য করেন অনলাইন নীতিমালা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সমালোচনা যেন গঠনমূলক হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখারও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
“একটাই উদ্দ্যেশ্য ছিল, আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।”
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড ও হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় যখন থাকে তখন জঙ্গিবাদকে উস্কে দেয়।
“সাংবাদিক, লেখক, শিক্ষক কেউই বাদ যায়নি তাদের অত্যাচারের হাত থেকে। সাংবাদিকদের ধরে নিয়ে যে অকথ্য নির্যাতন করেছে, অনেকেই সে নির্যাতনের চিহ্ন এখনো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন।”
ইতোমধ্যে একজন সাংবাদিক হত্যার বিচার হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বাকীদের হত্যার বিচারও আমরা করবো। সে ব্যাপারে আপনাদের সকলের সহযোগিতা দরকার।
“এখানে আমি কেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে আসিনি। একটা কথা মনে রাখবেন আমিতো সব হারিয়ে এসেছি। তাই আমার হারাবার কোন ভয় নেই। নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণে।”
শেখ হাসিনা এসময় তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের পাশপাশি সংবাদপত্রে জড়িত থাকার কথাও উল্লেখ করেন।
“তিনিও একসময়, যখন ছাত্র রাজনীতি করেছেন তখন পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেই সময় নিজে হাতে করে পত্রিকা বিক্রি করা থেকে শুরু করে পত্রিকায় কাজ করা, সেটাও তিনি করেছেন। কাজেই আমি কিন্তু আপনাদেই পরিবারেরই একজন।”
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ১৯৬ জন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে মোট এক কোটি ৪০ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন পাসের পর ট্রাস্ট গঠন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানান, পাঁচ কোটি টাকা ‘সিড দিয়ে’ এ তহবিল গঠন করা হলেও ‘অর্থশালীরা’ কেউ এ তহবিলে দান করেননি।
আগামীতে অর্থশালীরা এ তহবিলে দান করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক চৌধুরী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী।