যত বাধাই আসুক বিচার চলবে: হাসিনা
পক্ষকাল ডেস্কঃ
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরে স্বজনহারাদের বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন তিনি।এক্ষেত্রে যত বাধা-ই আসুক না কেন বিচার চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে হাসিনা বলেছেন, “এদেশের মানুষের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত।”
১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানীতে এক আলোচনায় শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার আমরা করেছি। বিচারের রায় আমরা কার্যকর করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়ও আমরা কার্যকর করেছি, করে যাচ্ছি। এটা অব্যাহত থাকবে।”
পঁচাত্তরে বাবা-মাসহ স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করে বলেন, শেখ হাসিনা বলেন, “যারা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন, তাদের দুঃখ আমি বুঝি, আর কেউ না বুঝুক। একাত্তরে যারা আপনজন হারিয়েছেন, তাদের ব্যথা-বেদনা আমি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।
“আমার পিতা-মাতা, ভাইয়ের হত্যার যেমন বিচার করেছি তেমনি যারা আপনজন হারিয়েছেন, নিশ্চয় তাদের বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। নিশ্চয় সে বিচার আমি করে যাচ্ছি। আমি করে যাব- এটাই আমার প্রতিজ্ঞা, তাতে যত বাধা, যত কিছুই আসুক।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার শুরু হয়। এরইমধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আজম, আল-বদর নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মীর কাসেম আলীর মতো শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
এরইমধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়েছে নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
এখন ফাঁসির অপেক্ষায় আছেন মীর কাসেম আলী, যিনি একাত্তরে চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত গোলাম আজম কারাগারেই মারা গেছেন। একই সাজায় সাঈদী এখন কারাগারে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী: “তাদের সহযোগিতায় প্রতিটি অন্যায়ের বিচার করতে পেরেছি।”
রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে বিকালে ছাত্রলীগের আলোচনায়
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষার কথা জানান শেখ হাসিনা।
“যে চেতনায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সে চেতনায় আবার বাংলাদেশকে গড়ে তুলব।”
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ইতিহাস ভুললে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। আল-বদর আর রাজাকারদের হাতের ক্রীড়ানক হয়ে আমরা থাকতে পারি না।”
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে বাধা সৃষ্টির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না। অর্ডিন্যান্স জারি করে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করল।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হয়ে শেখ মুজিবের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দেন।
“আর ওই খুনিরা সেদিন বলেছিল, ‘আমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি। কে আমাদের বিচার করবে?’ তারা বিবিসিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল যে, কে তাদের বিচার করবে?”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তদন্তের জন্য ১৯৮০ সালে লন্ডনে নোবেলজয়ী শন ম্যাকব্রাইটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “স্যার টমাস উইলিয়াম বাংলাদেশে আসবেন বঙ্গবন্ধু হত্যার তদন্ত করতে। তিনি যখন ভিসা চাইলেন, জিয়াউর রহমান তাকে ভিসা দেয় নাই। আসতে দেয় নাই।
“কেনো দেয় নাই? চায় নাই এই কারণে যে, এই হত্যার সঙ্গে যে সে জড়িত ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঘটনা থেকেই তো তা প্রমাণিত হয়। তার সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়।”
ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান বক্তব্য দেন।