শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা ফিরছেন আওয়ামী লীগে
বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীরা ফিরছেন আওয়ামী লীগে
পক্ষকাল সংবাদঃ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থীদের দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে দলের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় বিদ্রোহীদের যদি ফিরিয়েই নেওয়া হবে, তাহলে দলে শৃঙ্খলা থাকবে কীভাবে? আর এই বিদ্রোহীদের কারণে পৌর ও ইউপি নির্বাচনে যে প্রাণহানি হয়েছে, তার দায় কে নেবে?
সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে দলটির দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যাঁরা প্রার্থী হয়েছিলেন, তাঁদের আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সাধারণ ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাথমিক সদস্য হতে বহিষ্কৃত প্রত্যেককেই নিজ নিজ ইউনিটে আবেদন করতে হবে। এরপর প্রাথমিক সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার বিষয়টি তাঁদের কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে কেউই আর তাঁদের আগের পদে ফিরতে পারবেন না। এ জন্য তাঁদের নিজ নিজ ইউনিটের পরবর্তী সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
দলের দপ্তর সম্পাদক এ কথা বললেও দলের অন্য নেতারা বলছেন, ইউপি নির্বাচনে শতাধিক মানুষের প্রাণ হারানোর বিষয়টিকে এতটা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। ছয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত হন ১১৬ জন। এই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক ৭১ জন। তাঁদের বেশির ভাগই মারা গেছেন দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারিতে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এক মূল্যায়নে দেখা গেছে, ইউপি ভোটে প্রতি তিনজন দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। বিদ্রোহীদের কারণেই এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে দলটির অনেকে মনে করেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় থাকা সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, এটা কেবল মৌখিক সিদ্ধান্ত। এটা এখনো পার্টির কার্যবিবরণীতে আসেনি। গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি জানানো হয়নি। ফলে সিদ্ধান্তটি এখনো পাকা নয় বলে তাঁর ধারণা। দলটির আরেক জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এটা করা হয়েছে, ঠিক আছে। তাহলে বিদ্রোহীদের কারণে যে এত প্রাণহানি হলো এর দায় কে নেবে?
আওয়ামী লীগের তিনজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, দুজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চারজন সাংগঠনিক সম্পাদক ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেন, কাউন্সিল হলো আওয়ামী লীগের একই সঙ্গে আবেগ ও উৎসব। কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ উৎসব থেকে কেউ যেন বাদ না পড়েন। আর আওয়ামী লীগ মনে করে, ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি আসবে। ওই নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র আড়াই বছর। এ সময় দলের একটা বড় অংশকে বহিষ্কার করে রাখলে দল দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। দলীয় কার্যক্রম থেকে বিদ্রোহীদের দূরে ঠেলে রাখলেও আগামী নির্বাচনেও তাঁরা দলের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেনম এমন আশঙ্কাও আছে। তাই বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ওই নেতাদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের পর সব কটি স্থানীয় নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে। সংসদে দলের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সরকারের সব কটি স্তরে দলের নেতারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বিরোধী দলগুলোও কোণঠাসা। এ অবস্থায় বহিষ্কৃত নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করে রেখে লাভ কী? আর জাতীয় সম্মেলনে এই বহিষ্কৃত নেতারা অংশ না নিতে পারলে দলে বিভাজন বাড়তে পারে-এই আশঙ্কাও রয়েছে। এ জন্যই বিদ্রোহীদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনেক যোগ্য নেতা টাকার কাছে হেরে গিয়ে দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন। এরপরও তাঁরা বহিষ্কারের শাস্তি পেয়েছেন। এখন সম্মেলনের আগে দলে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত সঠিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকার চায় ঐক্য। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের মধ্যে ব্যাপক হানাহানি হয়েছে, এটা সত্য বলেই আমরা মনে করি। তবে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে যেন এর প্রভাব না পড়ে, সেটার জন্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমা করা সেই প্রক্রিয়ারই অংশ।’
আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, তাঁরা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন যে বা যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয়ভাবে তাঁদের দাপটই বেশি। দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতে তাঁরাই প্রাধান্য পাচ্ছেন। আর অন্যরা নিষ্ক্রিয় থাকায় দলের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেকে লিখিত কিংবা মৌখিকভাবে অনুরোধ করেছেন। এর ফলে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের এমন সিদ্ধান্ত এল।
সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনে করছেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের পর এখন তাঁরা স্বপদে বহাল হয়ে গেছেন। বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদত হোসেন ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত হন তিনি। শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের যে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। স্বপদে ফেরা যাবে না, এমন কথা সত্য নয়।’
শরীয়তপুরের রুদ্রকর ইউনিয়নের সভাপতি হয়েও দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন হাবিবুর রহমান ঢালী। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করে। কিন্তু ইউনিয়নের সব দলীয় কর্মসূচি তাঁর সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত হতো। তিনিও মনে করেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরপরই তিনি এখন আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে ফিরেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘যাঁরা সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদন করবেন, তাঁরাই কেবল দলের প্রাথমিক সদস্য হবেন। তবে কেউই তাঁর পূর্বের পদে ফিরতে পারবেন না। এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’