সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ট্রেন বিকল ভোগান্তি ঘরমুখো মানুষের
ট্রেন বিকল ভোগান্তি ঘরমুখো মানুষের
পক্ষকাল সঙ্গাব্দ ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে সিলেটগামী একটি ট্রেন বিকল হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখো ট্রেনের যাত্রী হাজার হাজার মানুষ।
রবিবার সকাল পৌনে ৭টায় সিলেটের কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যাওয়া ১৫ মিনিটের মাথায় পারাবাত এক্সপ্রেসের দুটি কোচের ‘এয়ার প্রেসার ব্রেক আউট’ হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসও বিমানবন্দর স্টেশনের আগে ক্ষিলওখেতে একই সমস্যায় পড়ে।
এতে অন্তত ১১টি ট্রেনের সূচিতে কয়েকঘণ্টার বিলম্ব হয়; কমলাপুর স্টেশনে বিভিন্ন গন্তব্যের অপেক্ষমাণ হাজার হাজার যাত্রী পড়েন ভোগান্তিতে।
পারাবতের পেছনেই আটকা পড়ে থাকে সকাল ৭টায় কমলাপুর ছেড়ে আসা সোনারবাংলা এক্সপ্রেস; তেজগাঁও স্টেশনে বসে থাকে তিস্তা এক্সপ্রেস।
এছাড়া রাজশাহীর ধুমকেতু এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতী, নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের মহুয়া এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জের ঈদ স্পেশাল, গাজীপুরের জয়দেবপুর এক্সপ্রেস, জামালপুরের তারাকান্দির অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেসকে কমলাপুর স্টেশনের বসে থাকতে হয়।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুটি ট্রেনের পারাবতের ‘এয়ার প্রেসার ব্রেক’ ঠিক করে দেওয়ার পর ফের ট্রেন ছেড়ে যেতে শুরু করে।
কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানান, “পারাবত ট্রেনটি বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ভ্যাকুয়াম সমস্যার কারণে আটকে থাকায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার লাইন ‘ব্লক’ হয়ে যায়।
“এ কারণে তিস্তা তেজগাঁওয়ে ও সোনারবাংলা খিলক্ষেতে আটকে পড়ে। এছাড়া আরও অন্তত সাতটি ট্রেন কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি।”
“আমাদের লোকজন এগুলো মেরামত করে দিয়েছে। দুপুরের পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে।”
এর মধ্যে সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস কমলাপুর ছেড়ে যায় বেলা সোয়া ১২টায় এবং সকাল ১০টার একতা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় বেলা পৌনে ১২টায়।
রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতি, মোহনগঞ্জগামী মহুয়া এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জের ঈদ স্পেশাল, গাজীপুরের জয়দেবপুর এক্সপ্রেস এবং তারাকান্দি রুটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস নিধারিত সময়ের পর ছেড়ে যায়।
এর মধ্যে ধুমকেতু আগের দিনেও দেরি করে ছেড়েছে। রোববারও ভোর ৬টায় এই ট্রেনের কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৭টার আগে স্টেশনে এসে পৌঁছাতে পারেনি। পরে এটি প্রায় ৪ ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ১০টা ৪০মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যায়।
উত্তরার গৃহিনী ফেরদৌসী পারভিন সন্তানদের নিয়ে যাবেন রাজশাহী। কমলাপুর থেকে উঠলে সিট পাবেন না ভেবে বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে কমলাপুরে এসেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, বাড়ি যেতে খুব মন করে। কিন্তু পথের এ ভোগান্তির কথা ভাবলে আর যেতে ইচ্ছে করে না।
সকাল সাড়ে ৮টার দেওয়ানগঞ্জ স্পেশালের আবদুর রহমান শিপন সপরিবারে সাড়ে ৭টায় স্টেশনে এসেছেন। নিধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় ভোগান্তির কথা বললেন তিনিও: “এখানে প্রচণ্ড গরম। বাচ্চারা খুব কান্নাকাটি করছে। কখন ছাড়বে বলতে পারছি না। আমাদের কেউ কিছু বলছেওনা।
পরে বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যায়। ৯টা ৪০ মিনিটের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় বেলা ১১টা পঁচিশ মিনিটে।
এছাড়া সকাল পৌনে ৮টার মহানগর প্রভাতী সোয়া ৯টায়, সোয়া ৮টার মহুয়া এক্সপ্রেস ১০টায়, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সাড়ে ৮টার পরিবর্তে ১০টা ৩৫ মিনিটে ছেড়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৯টার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস কমিউটার ১০টা ১০ মিনিটে ছাড়ে। বেলা ৯টায় ছাড়ার কথা থাকলেও রংপুর এক্সপ্রেস ছাড়ে বেলা সোয়া ১২টায়।
এদিকে ঈদযাত্রার পঞ্চম দিন রোববারও কমলাপুর স্টেশনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। এর মধ্যে একতা, রংপুর, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও দেওয়ানগঞ্জের বিশেষ ট্রেনে বেশি যাত্রী ছিল। ভেতরে জায়গা না পেয়ে ওঠেন যাত্রীরা; নারী ও শিশুরাও।
রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ই সেটি স্টেশনে আসে; প্লাটফরমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীরা তাতে উঠে পড়ে।
একই অবস্থা দেখা গেছে, দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেসেও। সেটার ইঞ্জিনের ওপরও যাত্রীরা চড়ে বসেন। পরে তাদের নিয়েই ইঞ্জিনটি পরিবর্তন করা হয়।
অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে কমলাপুরে আসা যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামতে গিয়েও বিপত্তিতে পড়েন।
দিনাজপুর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকা আসা যাত্রী তুষার আহমেদ এক বছর বয়সী কন্যকে ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে বের করলেও স্ত্রীকে নিয়ে নামতে পারছিলেন না। ভিড় ঠেলে প্লাটফরমে নামতে পারলেও অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
“কর্তৃপক্ষ জানে এখানে অনেক ভিড় হবে। তারপরও যারা ট্রেন থেকে নামবে তাদের জন্য তারা কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। এখানে এতো পুলিশ, তারা তো আমাদের নিরাপদে নামার ব্যবস্থা করতে পারতো।”