গ্রেপ্তার ছিলেন ওই যুবক, মৃত্যু ‘অভিযানের সময়’
পক্ষকাল ডেস্কঃ রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বুলেটবিদ্ধ একটি লাশ মর্গে নিয়ে কয়েক ঘণ্টা রাখঢাকের পর পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তারের পর ওই যুবককে নিয়ে অভিযানের সময় ‘সহযোগীদের গুলিতে’ তার মৃত্যু ঘটে।
সোমবার ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশটি নেয়। প্রথমে হাসপাতালের নথিতে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে’ লেখার পর তা কেটে ‘বুলেট ইনজুরি’ লেখা হয়।
এরপর সংশ্লিষ্ট কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই মুখ খুলছিলেন না। ১১ ঘণ্টা পর ওই যুবকের মৃত্যুর কারণ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) ইউসুফ আলী।
তিনি বলেন, নিহত যুবকের নাম আল আমীন ওরফে রবিন ওরফে মজিদ ওরফে আকাশ। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২০টি মামলা রয়েছে।
ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে রবিনের লাশটি নিয়ে গিয়েছিলেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই মাজেদুল হক।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, এসআই মাজেদুল লাশটি আনার পর প্রথমে ‘সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে’ বলে হাসপাতালের নথিতে লেখা হয়। পরে তা কেটে ‘বুলেট ইনজুরি’ লেখা হয়।
ওই যুবকের দেহে বুলেটের ছয়টি ক্ষতচিহ্ন দেখেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিনিধি।
এসআই মাজেদুল হকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ‘পরে কথা বলছি’ বলে কল কেটে দেন। এরপর আর ফোন ধরেননি তিনি।
এই যুবকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির কর্তব্যরত কর্মকর্তা এসআই বাচ্চু মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাড়ে ৪টায় অজ্ঞাত এই যুবকের লাশ শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ রেখে গেছে। এর বেশি আমার আর কিছু জানা নেই।”
এই ধরনের ঘটনায় বাচ্চু মিয়ার কাছে তথ্য পাওয়া গেলেও এবার না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেউ আমাকে কোনো তথ্য দিচ্ছে না।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাতিরঝিল এলাকায় রাত ৩টার দিকে একটি ক্রসফায়ারে রবিন মারা গেছে বলে শুনেছি।”
শিল্পাঞ্চল থানার ওসি আব্দুর রশিদের সঙ্গে কথা বলতে অসংখ্যবার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা এসআই সঞ্জয় বলেন, ‘নিষেধ’ থাকায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না তিনি।
এ নিয়ে ‘সংবাদ সম্মেলন’ হবে জানালেও কখন, কোথায় হবে, তা তখন জানাতে পারেননি এই এসআই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের শিল্পাঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি জানেন বলে একাধিক পুলিশ সদস্য জানান।
প্রায় ১০ ঘণ্টা পর সোমবার দুপুরে কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেন, “আমি প্রফেশনাল লোক। আমি কিছু বলব না। মিডিয়া শাখা আছে, সেখান থেকে বলা হবে। সেখানে জানানো হয়েছে।”
তার কথার সূত্র ধরে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) ইউসুফ আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বেলা ২টায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কী হয়েছে, খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। খবর পেলেই জানানো হবে।”
এর দেড় ঘণ্টা পর তিনি নিহতের পরিচয় জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, রবিনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরপর তাকে নিয়ে রোববার রাতে অভিযানে নেমেছিল পুলিশ।
“রবিন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার একটি গ্রুপ হাতিরঝিল মহানগর ব্রীজের পূর্ব উত্তর কোণে জড়ো হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন তাকে নিয়ে থানা পুলিশের একটি দল সেখানে গেলে তারা (সহযোগী) পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এই গুলিতেই রবিন গুলিবিদ্ধ হয়।”
গুলিবিদ্ধ রবিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
রবিনের ‘সহযোগীরা গুলি ছুড়লেও’ কোনো পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার এবং কাউকে গ্রেপ্তারের কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই এই ঘটনায় শিল্পাঞ্চল থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে।
রবিনকে কবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়েও কিছু বলা নেই পুলিশের করা এজাহারে।