মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | সম্পাদক বলছি » একের পর এক অভিযানেও রাজধানী ছাড়ছে না জঙ্গিরা
একের পর এক অভিযানেও রাজধানী ছাড়ছে না জঙ্গিরা
পক্ষকাল ডেস্ক
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একের পর এক অভিযানের মুখেও রাজধানী ছাড়ছে না জঙ্গিরা। গোয়েন্দারা বলছেন, এখনও রাজধানীতে জঙ্গিদের আস্তানা রয়েছে। গোপনে সেগুলো সুরক্ষার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা। এই আস্তানাগুলো আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গুলশানে অভিযানের পর পাওয়া গেল কল্যাণপুরের আস্তানা। এরপর রূপনগর। তারপর নারায়ণগঞ্জের আস্তানায় অভিযানের পর আজিমপুরে পাওয়া গেল গুরুত্বপূর্ণ আস্তানা। তিনি বলেন, এতকিছুর পর জঙ্গিদের তো রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি। আমরা ধারণা করছি, রাজধানীতে তাদের আরো আস্তানা আছে ।
এদিকে জঙ্গি মদদ দেওয়ার অভিযোগে আলোচনায় এসেছে তিন শিক্ষকের নাম। তাদের একজন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অপর দু’জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের পাকিস্তানের ইসলামাবাদে হাবিব ব্যাংকে একটি একাউন্ট রয়েছে। সেখান থেকে টাকা আসারও প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। অন্য দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে দু’টি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ দুই নেতাকে হত্যার অভিযোগ। তারা ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পরপর কয়েকটি ঘটনার পর রাজধানী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু রাজধানীতে থাকা আস্তানাগুলোতেই অবস্থান করছে তারা। এই মুহূর্তে যেসব জঙ্গি বা তাদের স্ত্রীরা পালিয়ে আছেন তাদের অধিকাংশ রাজধানীতেই আছেন বলে মনে করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। এই আস্তানাগুলো খুঁজে পাওয়া গেলে জঙ্গি তত্পরতার প্রাথমিক সমাধান পাওয়া যাবে।
র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জঙ্গিরা রাজধানীতে থাকলেও আমাদের তত্পরতাও আছে। এই মুহূর্তে জঙ্গিদের বড় ধরনের কিছু করার সুযোগ নেই। কারণ তারা কোণঠাসা। তবে রাজধানীতেই তাদের পক্ষে লুকিয়ে থাকা সম্ভব। কারণ এখানে কেউ কাউকে চেনে না। বরং গ্রামাঞ্চলে গেলে সেখানে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর জঙ্গিদের একটি তালিকাও তো আমাদের হাতে আছে।’ তিন শিক্ষকের বিষয়ে তদন্ত করেছে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সংস্থার একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, আরও তিনজন শিক্ষকের নাম তদন্তে এসেছে। এদের একজন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের। পাকিস্তানের ইসলামাবাদে হাবিব ব্যাংকে তার একাউন্ট রয়েছে। যার নম্বর- ২২৬৩/১৯। পটুয়াখালির কলাপাড়ায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক শাখায় তার একটি একাউন্ট রয়েছে। ওই একাউন্টে পাকিস্তান থেকে টাকাও এসেছে। ওই শিক্ষক এই একাউন্টে লেনদেন করেন। আমাদের পটুয়াখালি প্রতিনিধি ওই ব্যাংকে খোঁজ নিতে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। ওই শিক্ষক তিনটি বিয়ে করেছেন।
এদিকে ১৯৯০ সালে শিবির-বিরোধী আন্দোলনে হামলা চালিয়ে তত্কালীন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারুককে হত্যা করে ছাত্রশিবির। ফারুকুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। এই হত্যা মামলায় অন্যতম একজন আসামি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ছাত্রজীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের বড় দায়িত্বে ছিলেন। গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তদবির করে নিজের স্ত্রীকে একই বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কাঠিরহাটে। তার বিরুদ্ধে জঙ্গিদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এছাড়া ১৯৯৪ সালে ৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একনম্বর গেট এলাকায় অবরোধ পালন করার সময় ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হুদা মুছাকে হত্যা করে ছাত্র শিবির। নূরুল হুদা মুছা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। ছাত্রজীবনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতেন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ছিলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ এবং দর্শন বিভাগের দু’জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি ইতোমধ্যে আমরা অবহিত হয়েছি। এই বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি এখনো তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বলেন, জঙ্গি-বিরোধী অভিযানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। রাজধানীসহ দেশের যেখানেই থাকুক, জঙ্গিদের খুঁজে বের করা হবে। সর্বত্র পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে বলেও তিনি জানান।
- See more at: http://www.bdtimes365.com/national/2016/09/20/139132#sthash.6sAn3WUn.dpuf