অমিতাভ জয়া রেখার বাস্তব জীবন নিয়ে ‘সিলসিলা’
বিনোদন ডেস্ক
রেখাকে নিয়ে বচ্চনদের বাড়িতে তখন দুর্যোগের ঘনঘটা। রেখা যেন অমিতাভ-জয়ার সাজানো বাগানে সাপ হয়ে এসেছিলেন। এ পর্যায়ে বলিউডে রাষ্ট্র হয়ে গেল, অমিতাভ-জয়ার বিয়েটা আর টিকছে না। ডিভোর্স হচ্ছে!
তবে অমিতাভের বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত বিষয়টিকে বেশি দূর যেতে দিল না। সময়মত মুখ খুললেন অমিতাভ। ‘আমি ডিভোর্সে বিশ্বাস করি না। জয়াকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্তটা একদম সঠিক ছিল। অতি উত্তম সিদ্ধান্ত।’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন অমিতাভ।
অমিতাভ ঠিকই সহজে বিষয়টির সমাধান দিয়ে দেন। তবে ঠিক উল্টো পথে হাঁটেন রেখা। ‘স্টারডাস্ট’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেখা বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো আপত্তি ছিল না জয়ার, কিন্তু যখন দেখল আমরা মনে মনে অনেক দূর এগিয়ে গেছি, সেটা জয়া মেনে নিতে পারেনি। একদিন আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিল জয়া। ওদের বাড়িতে। সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত পর্যন্ত বেশ গল্প হল। একটা মুহূর্তের জন্যও অমিতাভের নাম উঠল না আমাদের আড্ডায়। কিন্তু আমি যখন বেরিয়ে আসছিলাম, জয়া বলল, শোন আর যাই-ই হোক, আমি কিন্তু কখনো অমিতকে ছেড়ে যাব না।’
অমিতাভ-জয়ার সংসার টিকে গেল। রেখা থাকলেন সমান্তরাল দূরত্বে। কিন্তু মুখরোচক এ কাহিনি পর্দায় দেখার এবং দেখানোর একটা বাসনা ছিল দর্শক ও প্রযোজকদের। প্রযোজকদের একটা অংশ চেষ্টা করছিলেন তিনজনকে এক ফ্রেমে আনতে। যদিও তার কিছুদিন আগেই জয়ার স্বামী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রেখার সঙ্গে আর কোনো দিন কাজ করবেন না। কেটে গেলো আরও বেশ কিছুদিন।
সময়টা ১৯৮০ সালের ২১ অক্টোবর। কাশ্মিরের শ্রীনগরে ‘কালিয়া’ ছবির শুটিং চলছে। একরাতে অমিতাভের সঙ্গে দেখা করলেন যশ চোপড়া। এক সাক্ষাৎকারে যশ চোপড়া বলেছিলেন, খাবারের টেবিলে অমিতাভের সঙ্গে আমার কথা হয়। কথা প্রসঙ্গে অমিতাভ আমার কাছে জানতে চাইল ‘আপনার কী মনে হয়, এর যুতসই কাস্টিং কী হতে পারে।’ আমি বলেছিলাম, ছবিতে তোমার (অমিতাভের) জীবনে তৃতীয় মহিলার ভূমিকায় রেখাকেই দেখতে চাই। স্ত্রীর ভূমিকায় জয়া বচ্চন। মাত্র ৫ মিনিট সময় নেন অমিতাভ। তারপর রাজি হন। শর্ত ছিল অভিনয়ের প্রস্তাব যশ নিজে জয়াকে দিক। ওর সাহসে কূলাবে না।
পরদিন, ২২ অক্টোবর অমিতাভ-যশ মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যশ চোপড়া প্রস্তাব দেন জয়াকে। কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না জয়া। এমনকি তিনি সিনেমার গল্পটাও শুনতে চাননি প্রথমে। একসময় অনেক কস্টেমস্টে গল্পটা শোনানো হলো। গল্প শুনে জয়া একেবারে ভাবলেশহীন হয়েই বসে ছিলেন। শেষ দিকে গল্পের চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত জয়া চরিত্রটা করার জন্য এতটুকুও আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু শেষ দৃশ্যটার কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান জয়া। সেই বিখ্যাত দৃশ্যটা, যেখানে অমিতাভকে জয়া বলছেন ‘আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে’। হয়ে গেল একটা কালজয়ী রোমান্টিক ছবি, সিলসিলা।
সূত্র: ইয়াসির উসমানের লেখা ‘রেখা দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বই থেকে।