বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত ভারতের প্রভাবে নয়: শাহরিয়ার
সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত ভারতের প্রভাবে নয়: শাহরিয়ার
পক্ষকাল ডেস্কঃ ইসলামাবাদের সার্ক সম্মেলন বয়কট ভারত দ্বারা প্রভাবিত নয় জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, পাকিস্তানের হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপের কারণে ঢাকা নিজ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ চারটি দেশ অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর আগামী নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় দক্ষিণ এশিয়ার এই আঞ্চলিক জোটের শীর্ষ সম্মেলন ইতোমধ্যে স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।
কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ভারতের সার্ক সম্মেলন বয়কটের ঘোষণার মধ্যে বাংলাদেশও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত কাঠামান্ডুতে সার্ক সচিবালয়কে জানায়।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার মঙ্গলবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ওই সময়ে বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যস্ততার’ কারণে ইসলামাবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া হচ্ছে না।
তবে একদিন বাদে বুধবার আগের বক্তব্য থেকে সরে এসে তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জল ঘোলা করার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘একটি দেশ’ নিয়মিত হস্তক্ষেপ করে যাওয়ার কারণেই বাংলাদেশ ইসলামাবাদ সম্মেলন বয়কটের পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছে
শাহরিয়ার আলম (ফাইল ছবি)
শাহরিয়ার আলম (ফাইল ছবি)
“এটা (অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ) এমন একটা পরিবেশ তৈরি করেছে, যা সম্মেলন আয়োজনের জন্য উপযোগী নয়।”
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার নাম উল্লেখ না করলেও স্পষ্টতই পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ায় গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনীতিক টানাপোড়েন চলছে।
বয়কটের সিদ্ধান্তের জন্য ভারত সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। কাশ্মিরে সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার জন্য ইসলামাবাদের মদদ রয়েছে বলে নয়া দিল্লির দাবি। এনিয়ে জাতিসংঘের চলতি সাধারণ অধিবেশনেও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায়।
এরপর মঙ্গলবারই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিকাশ স্বরূপ ইসলামাবাদ সম্মেলন বয়কটের কথা জানিয়ে পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, সন্ত্রাস ও সহযোগিতা একসঙ্গে চলতে পারে না।
ভারতের এই সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ উল্লেখ করে পাকিস্তান এক বিবৃতিতে বলে, “তাদের অজুহাতের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য হচ্ছে, সমগ্র বিশ্ব জানে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হোতা এবং অর্থদাতা ভারত।”
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ভারতের প্রভাবে চলে বলে পাকিস্তানের অনেক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে আসছেন।
যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদের দণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান জামায়াতের নেতারা বলেছিলেন, নয়া দিল্লি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে।
ভারত শাসিত কাশ্মিরের উরিতে সেনা ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার পর সন্ত্রাস দমনে নয়া দিল্লির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ।
১৮ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পর নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ভারতের সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, উরির ঘটনার পর সার্ক সম্মেলন আয়োজনের পরিবেশ আছে বলে তিনি মনে করেন না।
সার্ক, দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের আঞ্চলিক জোট
সার্ক, দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের আঞ্চলিক জোট
তবে শাহরিয়ার বলেন, সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ‘একান্তই নিজস্ব’।
“এর সঙ্গে অন্য দেশের সিদ্ধান্তের কোনো সম্পর্ক নেই।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, বঙ্গবন্ধু এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে অতীতে কখনও আপস করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।
বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি আফগানিস্তান ও ভুটানও এবারের সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলো হচ্ছে- নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ।
দক্ষিণ এশিয়াকে এক সূত্রে গাঁথার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৫ সালে গঠিত জোট সার্ক এখনও আশার সঞ্চার ঘটাতে পারেনি। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের পথে বারবারই দিশা হারিয়েছে এই জোট।
সার্ক গঠনে বাংলাদেশের উদ্যোগের কথা স্মরণ করে শাহরিয়ার বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ এখনও অঙ্গীকারাবদ্ধ।
“ঢাকা বিশ্বাস করে যে, আরও উপযোগী পরিবেশেই কেবল (আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায়) সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।”