রবিবার, ২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » আ.লীগের সম্মেলন: নেতাদের ১/১১ কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
আ.লীগের সম্মেলন: নেতাদের ১/১১ কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে
পক্ষকাল সংবাদ
আর কদিন বাদেই বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বিশতম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলনে কে কি পদ পাচ্ছেন, কারা বঞ্চিত হচ্ছেন এই নিয়ে চলছে আলোচনা। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করছে গত আট বছর আগের এক-এগারো’য় নেতাকর্মীদের ভূমিকা। ওই সময়ে দলে নেতাদের কার কি ভূমিকা ছিল,আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে তা বেশ জমে উঠেছে।
জানা গেছে, শীর্ষ পর্যায়েও এক-এগারো নিয়ে আলোচনা চলছে জোরেশোরে। নেতাদের ব্যক্তিগত অফিস, দলীয় কার্যালয় ও বাসার ড্রয়িং রুম সর্বত্রই এখন এক-এগারো’র আলোচনা। দুই-চার জন নেতা একত্রিত হলেই শুরু হয়ে যায় আলোচনা। এক-এগারো’র অবদানের কথা স্মরণ করে পুরস্কার পেতে চান, তখন যারা মাঠে ছিলেন তারা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যারা রাজনীতি থেকে দূরে সরে ছিলেন, পালিয়ে বেড়িয়েছেন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তারা আবার সরব হয়ে উঠেছেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পদ-পদবীর প্রত্যাশা করছেন তারা। আর তাতেই আপত্তি এক-এগারো’র সময়ে মাঠে থাকা নেতাদের। যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন অথবা পালিয়ে বেড়িয়েছেন,এখন তাদের পদ-পদবী পাওয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান সে সময়ের সরব থাকা রাজনীতিকরা।
আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির অন্তত পাঁচ জন নেতা বলেন, এক-এগারো’র সময়ে কোনও কোনও নেতা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) পক্ষে কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দয়া-দাক্ষিণ্য নিয়েছেন। আমরা যারা নেত্রীর পক্ষে ছিলাম, তারা আমাদের সমালোচনা করেছেন। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে তারা আবার পদ-পদবীর আশা করছেন, বিভিন্নভাবে তদবির করছেন। তারা আবারও নেতা হলে দুঃসময়ে নেত্রীর পাশে থাকবেন না। দলের জন্যে কাজ করবেন না। তাদেরকে নেতা বানানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন বলেন, ‘গত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনীতিতে কিছু পরীক্ষিত নেতা তৈরি হয়েছেন। সেই সময়ে আমাদের দলের কিছু নেতা সাহসের পরিচয় দিয়ে রাজনীতি করেছেন। শেখ হাসিনাকে মুক্ত করার আন্দোলন করেছেন। আবার কিছু নেতা ছিলেন, যারা এক-এগারো’র সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সেই নেতারা ক্ষমাও পেয়ে গেছেন। তবে শেখ হাসিনা সব ভুলে গেছেন, এটা আমি মনে করি না।’ এক-এগারো’র সরকারের সময়ে মাঠে থাকা সাহারা খাতুন আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই ওই দুঃসময়ের কথা নেত্রীর মনে আছে।’
গত কয়েকদিনে রাজনৈতিক নেতাদের বাসা, অফিস ও ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, এক-এগারো’র আলোচনায় সরব রয়েছেন তারা।এমনকি এক-এগারো’র রাজনৈতিক পটভূমিকে কেন্দ্র করে যাদের ভাগ্য খুলেছিল তারা কেউই চাচ্ছেন না, সেই সময়ের পালিয়ে থাকা নেতারা দলে ফিরে আসুক। তারা বলছেন, দুঃসময়ে যারা পালিয়ে থাকেন তারা সব সময়েই পালিয়ে থাকবেন। সুতরাং তদের দলে ফেরার সুযোগ না দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেখানে যাতায়াত করা নেতারা সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন স্মৃতিচারণা করছেন। এরমধ্যে বেশি আলোচনা হচ্ছে সভাপতি শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনে কাদের পাওয়া গেছে, আর কাদের পাওয়া যায়নি। কারা সেই সরকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন এসব। তবে এক-এগারো’র কথা ভুলে গিয়ে বর্তমানে অনেক নেতাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরব হতে শুরু করেছেন। তারা শেখ হাসিনার আশেপাশে এবং ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়েও যাতায়াত করছেন। কিন্তু তাদের এই তৎপরতা এক-এগারো’র সময়কার সাহসী নেতারা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তারা বিতর্কিত সেসব নেতাদের তখনকার ভূমিকা নিয়ে এখনকার আলোচনায় তুলোধুনা করছেন। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থেকে শুরু করে ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াতকারী নেতারা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এক-এগারো রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। সব কিছুতেই এক-এগারো সামনে আসবে এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘সেই সময়ে যারা মাঠে ছিলেন তারা এদলের জন্যে পরীক্ষিত ও ত্যাগী, এটার প্রমাণও তারা দিয়েছেন।’ মতিয়া বলেন, ‘তবে সেই সময়ের কথা ভুলে গেছেন শেখ হাসিনা। তিনি ক্ষমাশীল, তাই সবাইকে ক্ষমাও করে দিয়েছেন।’
জানাগেছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত সপ্তাহের শেষের দিকে সম্মেলন প্রস্তুতির একটি সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক-এগারো’র স্মৃতিচারণা করেন। মূলত সেদিন থেকেই ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক-এগারো নিয়ে আলোচনার ডালপালা ছড়ায়। এরপর শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গণভবনেও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় এক-এগারো’র স্মৃতি বর্ণনা করেন। দলের শীর্ষ দু’নেতার মুখ থেকে এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটায় পরবর্তীতে এক-এগারো সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
জানাগেছে, এক-এগারো’র সময়ে মাঠে ছিলেন এমন নেতারা মনে করেন, শেখ হাসিনার সেই দুর্দিনে তারাই পাশে ছিলেন এবং রাজনীতি করেছেন। সুতরাং আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্যে তারা পরিক্ষীত সৈনিক। আর যারা পালিয়ে বেড়িয়েছেন, বিভিন্ন ছুঁতোয় দেশের বাইরে গিয়ে আয়েশি জীবন-যাপন করেছেন, তাদের নেতা হওয়া সুযোগ নাই।