রবিবার, ২ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার » শরণার্থী শিশুদের মুখে হাসি ফুটানো এক ‘স্মাগলার’
শরণার্থী শিশুদের মুখে হাসি ফুটানো এক ‘স্মাগলার’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সিরিয়া। সেখানে মানুষের জীবনের কোনো দাম নেই, শিশুদেরও নেই শৈশব। জীবনের কঠিন বাস্তবতা তাদের চেনা। তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না, ভয় পায় আহত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকা। খেলনার চেয়ে বোমা যারা বেশি চেনে সেইসব শিশুদের হাতে খেলনা তুলে দিতে ১৬ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পাড়ি দেয় রামি আদম।
সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের কাছে জনপ্রিয় মুখ রামি আদম। তিনি বিভিন্ন ধরনের খেলনা, উপহার দিয়ে এইসব শিশুদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যাচ্ছেন বিগত চার বছর ধরে। সিরীয় বংশোদ্ভূত এ ফিনিশ যুবক আলেপ্পোর ‘খেলনা চোরাকারবারী’ হিসেবে পরিচিত!
গত চার বছরে আঠাশবারেরও বেশি রামি ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কি থেকে সিরিয়া গেছেন শিশুদের মধ্যে উপহার পৌঁছে দিতে। ফিনল্যান্ড থেকে বিমানে তুরস্কে পৌঁছানোর পর তিনি খেলনাভর্তি ৭০ কেজি ওজনের বস্তাটি নিয়ে পায়ে হেঁটে পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা পাড়ি দিয়ে সিরিয়ার প্রবেশ করেন। ওই রাস্তাটিই ব্যবহার করেন কারণ সরকারি সীমান্তে চলাচল বন্ধ। কখনও কখনও এ পথ পাড়ি দিতে ১৬ ঘণ্টাও লেগে যায়।
এছাড়া অনুদান সংগ্রহ করতে রামি একটি ফিনিশ-সিরিয়া অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তুলেছেন। শরণার্থী শিবিরে স্কুল প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
রামি তার এ কাজের অভিজ্ঞতায় বলেন, যুদ্ধ শিশুদের বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বয়সেই তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তাতে প্রাপ্তবয়স্ক বলেই বিবেচনা করা যায়। এখানে শিশুরা মৃত্যুকে ভয় পায় না, ভয় পায় আহত হয়ে বেঁচে থাকা। তারা বলে, মরে গেলে আর চিন্তা নেই! এসব শিশুর হাতে খেলনা তুলে দেয়ার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। খেলনা পাওয়ার পর তারা যে হাসিটা দেবে, যে কৃতজ্ঞতা জানাবে তাতে আপনার মনেই হবে না তারা তাদের বাড়ি, স্কুল, তাদের খেলনা সব হারিয়ে ফেলেছে। এ ছোট নায়কেরা ভবিষ্যতে সিরিয়ার নেতৃত্ব দেবে। তাদের এ ভয় ও অস্থিরতা থেকে দূরে রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
শরণার্থী শিশুদের সাথে রামি আদম স্মৃতি আউড়ে তিনি বলেন, ছয় বছরের এক মেয়ে শিশুর কথা তার মনে গেঁথে আছে। মেয়েটি তেমন কথা বলে না। একদিন তাদের বাড়িতে এক অভিযানে সরকারি বাহিনীর সদস্যরা তার বাবাকে আলমারিতে বন্ধ করে রেখে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তার মাকেও ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সে এতো চিৎকার করেছে যে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আমি তাকে কয়েকবার দেখতে গেছি। তাকে একটি বার্বি ও কিছু খেলনা ঘোড়া উপহার দিয়েছি। সবসময় তার প্রতিক্রিয়া একই, একটি সুন্দর হাসি!
রামি সম্প্রতি ১২ দিনের সিরিয়া সফর শেষে ফিরেছেন। তিনি বেশ কয়েকটি এলাকায় খেলনা সরবরাহ করেছেন। এর মধ্যে একটি শরণার্থী শিবির রয়েছে যা গত চার বছর সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু তিনি অবরুদ্ধ আলেপ্পো শহরের পূর্ব দিকে যে শহরে নিজে বড় হয়েছেন সেখানে যাওয়ার একটি নিরাপদ উপায় খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তিনি বলেন, এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। যখন হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে দেখবেন আপনার শহর আপনার সামনে কিন্তু আপনি সেখানে যেতে পারছেন না…।
সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতির শেষ হওয়ার পর রামি ফিনল্যান্ডে ফিরে গেছেন। এরই মধ্যে তার প্রতিষ্ঠিত দফতরে ভয়াবহ বিমান হামলায় নয়জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে তার ঘনিষ্ট দুই বন্ধুও রয়েছে। রামি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সিরিয়া ফিরে যাওয়ার আশা করছেন, কিন্তু তিনি কোনো আশা খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, আমি শুনেছি অনেক মানুষ মারা গেছে। আমি আমার পরবর্তী সফর নিয়ে ভয় পাচ্ছি। কিন্তু যদি আবার যাই তাহলে তালিকায় প্রথমে থাকবে বাচ্চাদের জন্য খেলনা।