মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বাংলাদেশও পাকিস্তানের পরমাণু বোমার আওতায়!
বাংলাদেশও পাকিস্তানের পরমাণু বোমার আওতায়!
পক্ষকাল ডেস্কঃ
পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পরোক্ষ হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে পরমাণু বোমাও ছুঁড়তে পারেন তারা।
এ হুমকির পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের মনেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, পাকিস্তান পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়লে কী হতে পারে? ভারতের কোন কোন শহর পাকিস্তানের পরমাণু বোমার টার্গেট হতে পারে? এতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে কি না? ক্ষতি হলে আমাদের কোন কোন এলাকায় ক্ষতি হবে?
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হলে যে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা স্পষ্ট করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হোক সেটা আমরা চাইনা। এতে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
এদিকে একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতের প্রভাবশালী হিন্দি দৈনিক জাগরণের খবরে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে তার আওতায় আসতে পারে কলকাতাও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বেশ কিছু জেলা। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা ও চুয়াডাঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি জেলা পরমাণূ বোমায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পত্রিকাটির খবরে বলা হয়, পরমাণু বোমা নিক্ষেপের জন্য পাকিস্তানের হাতে একাধিক মিসাইল আছে। যেমন ‘নসর’। পাকিস্তানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র হল ‘হাতফ’। গজনির সুলতান মাহমুদের নামে তৈরি পাকিস্তানের ‘গজনভি’ ক্ষেপণাস্ত্র। আরেক সেনানায়ক আহমদ শাহ আবদালির নামে তৈরি পাকিস্তানের এই ‘আবদালি’ ক্ষেপণাস্ত্রও পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির পাল্লা ৬০ থেকে ৩২০ কিলোমিটারের মধ্যে।
এছাড়াও পাকিস্তানের হাতে রয়েছে ‘ঘুরি’ ও ‘শাহিন’ নামের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলির রেঞ্জ ৯০০ থেকে ২৭০০ কিলোমিটার। অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ব্যবহার করলে দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, জয়পুর, আহমদাবাদ, পুণে, নাগপুর, ভোপাল, লখনউয়ের মতো শহর পাকিস্তানের পরমাণু বোমার টার্গেট হতে পারে। এমনি বাংলাদেশও।
জাগরণের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের কাছে আছে ‘পৃথ্বী’ ক্ষেপণাস্ত্র। এর রেঞ্জ ১৫০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার। এছাড়াও আছে বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ‘অগ্নি’। অগ্নির রেঞ্জ ৭০০ কিলোমিটার থেকে ৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ পাকিস্তানের এমন কোনও শহর নেই যাকে ভারত চাইলে টার্গেট করতে পারবে না- ইসলামাবাদ, রাওয়ালপিণ্ডি, করাচি, লাহোর, নওশেরার মতো বড় শহর মুহূর্তের মধ্যে ভারতের ছোঁড়া পরমাণু বোমায় ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ভারতের কাছে ১১০ থেকে ১২০টি পরমাণু বোমা আছে। পাকিস্তানের কাছে আছে ১২০ থেকে ১৩০টি। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধ হলে শুধুমাত্র এই দুই দেশই যে বিধ্বস্ত হবে, তা নয়, সেইসঙ্গে গোটা বিশ্ব চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ভারতের একটি গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, তিন বছর আগে করা এক গবেষণা বলছে, ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। অন্তত ২০০ কোটি মানুষ নিহত হবে। পৃথিবীজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানবসভ্যতা।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে এও বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সীমিত পর্যায়ে পারমাণবিক যুদ্ধ হলেও বিশ্বের আবহাওয়াম-লের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়্যার এবং ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি নামে দুটি সংগঠন ২০১৩ সালেএই গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
সংগঠন দুটি ২০১২ সালের এপ্রিলে গবেষণাটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশ পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ালে ১শ’ কোটিরও বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
পরে ২০১৩ সালে গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’দেশের সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে চীনের ওপরে প্রভাবের বিষয়টি বাদ রেখেই তারা ২শ’ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশংকা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়াম-লে যে কার্বণ অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে সুদূর আমেরিকাতেও কমপক্ষে এক দশক সময় ধরে কৃষি উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে।
এ কণার প্রভাবে চীনে প্রথম চার বছরে গড়ে ২১ শতাংশ ও পরের ছয় বছর আরও ১০ শতাংশ ধান, গমের উৎপাদন কমে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা মার্কিন পরমাণু বোমায় দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
এখন পারমাণবিক বোমা আরও শক্তিশালী, আরও ভয়ংকর। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ওই গবেষণায় বলা হয়, এখন কোনো পারমাণিবক যুদ্ধ মানেই তা মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার শামিল।