সোমবার, ১০ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » আকাশের মা বোন জেএমবি’র আত্মঘাতি স্কোয়াডের সদস্য!
আকাশের মা বোন জেএমবি’র আত্মঘাতি স্কোয়াডের সদস্য!
পক্ষকাল সংবাদঃ
নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি’র ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার নিহত ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গান্ধাইল ইউনিয়নের বরইতলায়। বাবা-মা তার নাম নাম রেখেছিলেন ফরিদুল। তবে জেএমবিতে যোগ দেওয়ার পর সংগঠন থেকে ছদ্মনাম দেওয়া হয় আকাশ। শুধু নিজে নয়, জঙ্গি দলে যোগ দেওয়ার পর মা ও বোনদেরও নব্য জেএমবিতে টেনেছিল আকাশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আকাশের মা ও দুই বোন এখন কারাগারে।
শনিবার গাজীপুরের পাতারটেকে জঙ্গিবিরোধী ‘অপারেশন জলোচ্ছ্বাস’ অভিযানে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে নিহত হন জঙ্গি কমান্ডার ফরিদুল ওরফে আকাশ। নিজ গ্রামে তাকে সবাই ফরিদুল হিসেবেই চেনে। এলাকায় সে আকাশ নামে পরিচিত নয়।
সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক ইন্সটিউটের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে ডিপ্লোমা পাশ করেন ফরিদুল। তার বিরুদ্ধে গত বছরেই জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠে। গত বছরের অক্টোবরে ডিবি পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রাঘবাড়িয়ায় বেশ ক’জন জঙ্গি আটক হন। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিতে সে সময় ফরিদুল ওরফে আকাশের নাম চলে আসে। ডিবির দায়েরকৃত জঙ্গি মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি ছিল সে।
উত্তরাঞ্চলে একের পর এক টার্গেট কিলিংয়ের অন্যতম প্রশিক্ষক আকাশ গত এক বছর থেকে নিজ এলাকায় ফেরারি ছিল। তার মা ও দুই বোন জেএমবির ফিদায়ী হিযরত বা আত্মঘাতী ইউনিটের সক্রিয় সদস্য। ফরিদুলের প্ররোচনায় তার মা-বোনসহ অনেকেই জেএমবির কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশ তার মা ও দু’বোনকে আটক করে। আদালতে ১৬৪ ধরায় তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আকাশের মা ও বোনসহ আত্মঘাতী দলের চার নারী সদস্য বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছে।
স্ত্রী ও দুই মেয়ে আটক হওয়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন আকাশের বাবা কাঁচামাল ব্যবসায়ী আবু সাঈদও। কাজিপুরের বরইতলা গ্রামে বেশ কয়েকবার গিয়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ডিবির অভিযানের পর ছোট মেয়ে সুমাইয়া বর্তমানে বগুড়ার ধুনুটের ভবনগাঁতী গ্রামের নানারবাড়িতে আছেন।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল বগুড়ার শেরপুরের কুঠিবাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত জেএমবির উত্তরাঞ্চলের নেতা সিরাজগঞ্জ সদরের শিয়ালকোল ইউনিয়নের জামুয়া গ্রামের অধিবাসী তরিকুলের হাত ধরেই জঙ্গি কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় আকাশ। শায়েখ আব্দুর রহমানের অনুসারী জঙ্গি নেতা তরিকুল বোমা বিস্ফোরণে নিহত হওয়ার আগে বেশ কয়েকবার তিনি কাজিপুরের বরইতলা গ্রামে ফরিদুলের বাড়িতে এসেছিল। তখন আকাশ ও তার স্বজনরা তরিকুলের মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এরপরই নব্য জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের সামরিক কমাণ্ডারের পদ পায় সে।
আকাশের মা বোনদের গ্রেফতারের পর সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন জানান, জঙ্গি সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের পরামর্শে জেএমবিতে নারী সদস্য নিয়ে ফরিদুল দেশব্যাপী ফিদায়ী হামলার জন্য আত্মঘাতী ইউনিট গঠন করে। সেই আত্মঘাতী ইউনিটে আকাশ তার নিজের মা ও দু’বোনসহ বেশ ক’জন প্রতিবেশীকে সম্পৃক্ত করে। আত্মঘাতী ইউনিটটি মূলত তার মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠে। আত্মঘাতী দলের বেশ কয়েকজন সদস্যকে সামরিক ও বোমা বিস্ফোরণ প্রশিক্ষণ দিয়ে হামলার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ফিদায়ী জেহাদ বা আত্মঘাতী হামলায় জন্য এসব নারী সদস্যদের প্রস্তুত করা হতো। হামলার আগে অবিবাহিত নারী সদস্যদের ভালো ঘরে বিয়ে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ঘর-সংসারি করারও প্রলোভন দেখানো হতো। আকাশের মাধ্যমে হাই কমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতো নারী সদস্যরা।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিনের নির্দেশে ডিবি পুলিশের ওসি মো. ওয়াদেুজ্জমানের নেতৃত্বে কাজিপুরের বরইতলা গ্রামে জঙ্গিবিরোধী গোপন অভিযান পরিচালিত হয়। ওই অভিযানে আত্মঘাতী ইউনিটের ৪ সক্রিয় সদস্য আটক হয়। আটককৃতরা হচ্ছে, আকাশের মা ফুলেরা বেগম (৪৫), তার দুইবোন শাকিলা খাতুন (১৮) ও সালমা খাতুন (১৬) এবং প্রতিবেশী কাঠমিস্ত্রি রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৩৫)। ফুলেরা বেগম ছাড়া বাকি ৩ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে নিজেদের আত্মঘাতী সদস্য বলে স্বীকার করেছেন।
সিরাজগঞ্জ পলেটেকনিক ইন্সটিটিউটের রেজিস্ট্রার ফিরোজ আহম্মেদ রবিবার বলেন, ফরিদুল ইসলাম ওরফে আকাশ প্রায় দেড় বছর আগে এখান থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে পাস করে চলে গেছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতোই সে এখানে লেখাপড়া করতো।
ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে প্রায়ই গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন প্রতিষ্ঠানে আসতো। সে যে এতো বড় জেএমবি নেতা বা সামরিক কমান্ডার তা আমরা আগে জানতে পারিনি। পরবর্তীতে তা মিডিয়ায় জেনেছি।’
সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সেকেন্ড অফিসার রওশন আলী রবিবার দুপুরে বলেন, ‘প্রায় এক বছর থেকেই ফরিদুলকে খুঁজছিলাম। সে ফেরারি ছিল।’
পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ রবিবার দুপুরে জানান, ‘গত বছরের অক্টোবরে ডিবি পুলিশের অভিযানে জেলার উল্লাপাড়ার রাঘবাড়িয়ায় বেশ ক’জন জঙ্গি আটক হয়। আটককৃতদের স্বীকারোক্তিতে সে সময়ই আকাশের নাম চলে আসে। ডিবির দায়েরকৃত মামলায় সে চার্জশিটভুক্ত আসামি। আটককৃত নারী জঙ্গিদের সবাই তাদের জবানবন্দিতে আকাশের প্রত্যক্ষ প্ররোচনা ও প্রলোভনের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।’