মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » ই-পেপার | ব্রেকিং নিউজ | শিক্ষা ও ক্যারিয়ার | সম্পাদক বলছি » হাত-পা বিহীন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা ‘নিক’!
হাত-পা বিহীন এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা ‘নিক’!
পক্ষকাল ডেস্ক
নিক ভুজিসিক, হাত-পা বিহীন অথচ প্রাণশক্তিতে ভরপুর অদ্ভুত এক মানুষ। বিশাল বিশাল হলরুম ভর্তি মানুষ এখন তার কথা শোনার জন্য জড়ো হয়। তিনি শত প্রতিকূলতার মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য ‘আশা’র অপ্রতিরোধ্য ও অপরিহার্য ক্ষমতার বাণী মানুষের মধ্যে বিলি করেন। শরীরের চারটি প্রধান অঙ্গবিহীন মানুষটির আত্মবিশ্বাস দেখে যে কেউ অভিভূত না হয়ে পারে না।
নিকের বয়স এখন ৩২ বছর। জন্ম থেকেই তার কোনো হাত-পা নেই। শুধু উরুর কাছ থেকে ছোট্ট পায়ের মতো একটি অঙ্গ বেরিয়ে গেছে যা তাকে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করে সোজা হয়ে থাকতে সহায়তা করে। ছোটবেলা থেকেই বাস্তব জীবনের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হয়েছে। সেসব কিছু উতরে গিয়ে এখন তিনি সবার প্রেরণাদানকারী এক সম্মোহনী ক্ষমতাধর বক্তা।
নিকের এই শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কোনো ব্যাখ্যা নেই। চিকিৎসা বিজ্ঞান এখনো এর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এই সমস্যাকে বলা হয় টেট্রা-অ্যামেলিয়া সিনড্রোম। বাম উরু থেকে বের হওয়া ছোট্ট অঙ্গটি দিয়ে তিনি অনেক কিছুই করতে পারেন। দাঁড়ানো, টাইপ করা এমনকি বলে লাথি দিতেও পারেন তিনি।
এছাড়া তার আছে অ্যাড্রেনাল হরমোন জনিত সমস্যা। এটা স্বীকারও করেন অবলীলায়। তবে তিনি এতে কেয়ার করেন না। নিয়মিত সাঁতার এবং দুঃসাহসিক স্কাই ডাইভিং করেন নিক।
অবশ্য হাত-পা বিহীন নিকের ভেতর এই আত্মবিশ্বাস এমনিতেই আসেনি। এর জন্য নিজের সাথে তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বেড়ে ওঠা নিক বাল্যকাল থেকেই চরম বিষন্নতায় ভুগতেন। স্কুলের সহপাঠীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। এই পরিস্থিতিতে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে ধীরে ধীরে জীবন নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করেন নিক।
১৭ বছর বয়সে তার হাইস্কুলের এক দারোয়ান তাকে জনসমক্ষে বক্তৃতা করার জন্য উৎসাহিত করেন। খুব শিগগিরই তিনি অভূতপূর্ব সাড়া পান।এই ক্যারিশমাটিক ব্যক্তি এখন সারা দুনিয়া ভ্রমণ করছেন আর প্রেরণাদায়ী বক্তৃতা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে অভিভূত করছেন, অনেককে দিচ্ছেন নতুন করে বেঁচে থাকার প্রেরণা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি।
ইতোমধ্যে ৫০টি দেশ ঘুরেছেন তিনি। তার শ্রোতা প্রধানত সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী আর স্কুলগামী শিশু। নিকের আত্মজীবনীমূলক বই Love Without Limits প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে স্ত্রী ক্যানি এবং দুই বছরের শিশুপুত্রকে নিয়ে বসবাস করছেন। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তাদের দ্বিতীয় সন্তান আসছে। নিক Life Without Limbs নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালান। একই সঙ্গে Attitude is Altitude নামের একটি সংগঠনও রয়েছে যা প্রণোদনামূলক বক্তৃতা এবং দুর্বলদের ঠাট্টাবিদ্রুপ না করার জন্য প্রচারণা চালায়।
উনি শামুকের মত শরীর বাকিয়ে চলাফেরা করেন। প্রথমে মাথা ফ্লোরে ঠেকান। তারপর শরীরকে ভাজ করে সামনে এগোন। পা না থাকলেও আল্লাহ পাক তার শরীরের এক চিপা দিয়ে দুইটি আঙ্গুল বের করে দিয়েছেন। উনি দুই আঙ্গুল দিয়ে মিনিটে ৪৭টি ওয়ার্ড টাইপ করতে পারেন। উনি এই দুই আঙ্গুল নিয়ে দুইবার গ্রাজুয়েশান করেছেন। ফাইনান্সিয়াল প্লানিং ও অ্যাকাউন্টিং। আমরা অনেকে অবশ্য দুইবার জন্ম নিয়েও দুইবার গ্রাজুয়েশানের কথা ভাবতেই পারি না।
নিক একজন মটিভেশনাল স্পিকার। ৫৩ বার রিজেক্ট হওয়ার পর উনি প্রথম বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান। বক্তৃতার মঞ্চে নুলা লোককে উঠতে দেখে ১০০০ জন শ্রোতার মধ্য থেকে ৯৯০ জন উঠে চলে যান। ঐদিন কেবল মাত্র ১০ জন শ্রোতা অবশিষ্ট ছিলেন। যদিও নিক এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ লোককে অনুপ্রাণিত করেছেন।
নিক লাভ ম্যারেজ করেছেন। উনার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, “আপনার সন্তান হলে তাদেরও যদি হাত পা না থাকে, তাহলে কি হবে।” উনি উত্তরে বলেছিলেন, “আমি তাকে আরেকটি ভুজিসিক নিক বানাবো।”