মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » নব্য জেএমবির নেতৃত্বে একই ছাতার নিচে আসার চেষ্টায় জঙ্গিরা
নব্য জেএমবির নেতৃত্বে একই ছাতার নিচে আসার চেষ্টায় জঙ্গিরা
পক্ষকাল ডেস্কঃনব্য জেএমবির নেতৃত্বে ‘পুরনো’ জেএমবি, আনসারুল্লাহ ও হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্য দিয়ে জঙ্গিরা সবাই আবার একই ছাতার নিচে আসার চেষ্টা করছে। গোয়েন্দারা এমন তথ্য পেয়েছেন। এর আগে প্রথমে তারা আনসারুল্লাহ ও পরে ‘জুনুদ আল তাওহীদ ওয়াল খিলাফাহ’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ নব্য জেএমবির নেতৃত্বেই জঙ্গিরা সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছিল। সম্প্রতি পুলিশ ও র্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে নব্য জেএমবিও ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাদের শীর্ষ অনেক নেতা ও অর্থদাতা গ্রেফতার কিংবা পুলিশি অভিযানে নিহত হয়েছে। তবে জঙ্গিদের তৎপরতা থেমে নেই। জেএমবির পলাতক নেতা সোহেল মাহফুজের নেতৃত্বে আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
গোয়েন্দারা জানান, দেশে এ পর্যন্ত সাতটি জঙ্গি সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে আছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এটিবি), যা পরে ‘আনসার আল ইসলাম’ নামে আত্মপ্রকাশ করে। জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুত তাহরীর, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলাম, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) ও শাহাদাত আল হিকমাও রয়েছে নিষিদ্ধের তালিকায়।
এছাড়া, কালো তালিকাভুক্ত হিযবুত তওহিদ, উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত, ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (আইডিপি), ইসলামি সমাজ, তৌহিদ ট্রাস্ট, তা-আমির উদ-দ্বীন বাংলাদেশ (সংগঠনটিকে ‘হিজবে আবু ওমর’ নামেও ডাকা হয়), আল্লার দল, কালেমা-ই জামাত, হিযবুল মাহাদী, জামায়েতুল মুসলেমিন ও ইসলামি দাওয়াতি কাফেলার সদস্যরাও আল কায়েদা ও আইএস-এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টা করছে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে ২০০৫ সালে একটি সাংগঠনিক কাঠামোতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে জঙ্গিরা। কিন্তু ২০০৭ সালে জেএমবির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর সেই সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু গোপনে তারা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জের অভিযানে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী ২০১৪ সালের শুরুর দিকে জেএমবির হাল ধরলে সংগঠনটির কার্যক্রমে নতুন মাত্রা পায়। আগে ছিনতাই, ডাকাতি করে অর্থ সংগ্রহ করলেও তামিম চৌধুরী যুক্ত হওয়ার পর অর্থের জন্য তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর আবারও হোঁচট খায় জঙ্গিরা। এছাড়া, গত ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবি’র আরেক শীর্ষ নেতা ও অর্থের যোগানদাতা সারোয়ার জাহান ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ।
বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সারোয়ার জাহান, তামিম চৌধুরী, তানভীর কাদেরী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের মৃত্যুর পর সোহেল মাহফুজের নেতৃত্বে জঙ্গি সংগঠনগুলো সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা মহানগর পুলিশের মাসিক অপরাধ বিষয়ক সভায়ও পুলিশ কমিশনারের বক্তব্যে জঙ্গিদের সংগঠিত হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশে পুলিশ কমিশনার বলেন, জঙ্গি দমনে পুলিশের সফলতায় উদাসীন হওয়া যাবে না। সহযোগীদের উজ্জীবিত করতে জঙ্গিরা আবারও পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছে বলে সবাইকে সতর্ক করে দেন তিনি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, নব্য জেএমবির নেতৃত্বে আনসারুল্লাহসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠন সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে তারা এখনও সফল হতে পারেনি।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলামও কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের জানান, নব্য জেএমবির নেতৃত্বে জঙ্গিরা আবারও একই ছাতার নিচে আসার চেষ্টা করেছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় সেই চেষ্টা এখনও সফল হয়নি।