শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১

Daily Pokkhokal
শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » পশুত্ব যেন জেগে না ওঠে: প্রধানমন্ত্রী
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » পশুত্ব যেন জেগে না ওঠে: প্রধানমন্ত্রী
২৬৩ বার পঠিত
শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পশুত্ব যেন জেগে না ওঠে: প্রধানমন্ত্রী

---পক্ষকাল ডেস্কঃ
শিশুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে ‘হেল্পলাইন’ এর উদ্বোধন করে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, “সমাজকে সচেতন করতে হবে। মানুষের মধ্যে সু-প্রবৃত্তি থাকে, কু-প্রবৃত্তিও থাকে।… সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সচেতনতা সৃষ্টি কতে হবে, মানুষের মধ্যে যেন পশুত্ব জেগে না ওঠে।”

দিনাজপুরে পাঁচ বছরের এক শিশুর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ‌্যে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চাইল্ড হেল্পলাইন ১০৯৮ এর সেবা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ইউনিসেফের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালনায় সারা দেশে এই কার্যক্রম চলবে। যে কোনো শিশু ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে ঝুঁকি বা নির্যাতনের কথা জানিয়ে সহায়তা চাইতে পারবে।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনানুষ্ঠানিকভাবে এই হেল্পলাইনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৭৯টি বাল্যবিয়ে ঠেকানো গেছে এবং ২ হাজার ৭০টি শিশুকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তার পাশাপাশি আইনি সেবা দেওয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচিকে শিশুদের সুরক্ষার একটি ‘মহৎ উদ্যোগ’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, সমাজের সকল স্তরের মানুষ এর সুফল পাবে। অনুষ্ঠানে নির্যাতিত কয়েকজন শিশুর সঙ্গেও তিনি কথা বলেন।

আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কল সেন্টারে ফোন করে শেখ হাসিনা এই হেল্পলাইন সেবার উদ্বোধন করেন।

অপর প্রান্ত থেকে অপারেটর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি হেসে বলেন, “আমি শিশু না। আমাকে অবশ্য ৭০ বছর বয়স্ক শিশু বলা যেতে পারে। আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

“এই হেল্পলাইন উদ্বোধন করলাম। যারা এখানে কাজ করবেন, তারা সচেতন থাকবেন। আমরা আমাদের মতো চেষ্টা করব, এই শিশুদের কীভাবে সাহায্য করা যায়। যখনই কোনো শিশু বিপদে পড়বে, তারা এখানে ফোন করে সাহায্য পাবে। যারা অপরাধ করবে তারাও ভয় পাবে।”

বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হল না। তাকে লেখাপড়া শেখাতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবার সুযোগ দিতে হবে।”

ভবিষ‌্যতে অন-লাইনে বিচার নিষ্পত্তির ব‌্য‌বস্থা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কারাগারের সঙ্গে একটা কোর্ট রুম থাকবে। যে সমস্ত আসামি একটু ভয়ঙ্কর প্রকৃতির, যাদের আনা নেওয়া একটু সমস্যা… ওখানেই আদালত থাকবে, ওখানেই তাদের আইনজীবীরা থাকবে এবং অন-লাইনে বিচার হবে। শিশু আদালতের জন্য এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ।”

হেল্পলাইনে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী অপারেটরের কাছে জানতে চান, “একজন ৭০ বছরের শিশু হিসাবে আমি কী সহায়তা পেতে পারি?”

জবাবে ১০৯৮-এর অপারেটর জানান, তথ্য সহায়তা সেবা, আইনি সেবা, কাউন্সিলিং সেবা, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং ঝুকিপূর্ণ অবস্থা থেকে শিশুকে উদ্ধারে সহায়তা পাওয়া যাবে। এছাড়া স্কুলে কোনো সমস্যা হলেও শিশুরা বলতে পারবে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেকে এ সুযোগের অপব্যবহার করতে চাইবে। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।”

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের শান্তি নিবাসে থাকা শিশুদের সঙ্গেও কথা বলেন, যাদের নির্যাতনের হাত থেকে উদ্ধার করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, শান্তি নিবাস ৫০ আসনের হলেও এই মুহূর্তে সেখানে ৬৫ জন রয়েছে। এর মধ্যে মেয়শিশু ৫৬ জন; আর নয় জন ছেলে শিশু।

প্রধানমন্ত্রী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ১৭ বছরের এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলেন, যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মেয়েটি প্রধানমন্ত্রীকে জানায়, যারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ‘কঠিন শাস্তি’ চায় সে।

মেয়েটিকে স্বাবলন্বী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তোমাকে তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।”

জবাবে মেয়েটি জানায়, সে শান্তি নিবাস থেকে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া করতে চায়।

এই শান্তি নিবাসে থাকা মাগুরার সারিখার আরেক তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। কোরবানীর ঈদের দুদিন পর মেয়েটিকে ‘বিক্রি করে দেয়’ তার স্বামী।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী আরেক কিশোরীর পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়েছিল এক প্রবাসীর সঙ্গে। সেখান থেকে সমবয়সী এক ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যায় মেয়েটি। পরে তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুরের শান্তি নিবাসে রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিদেশে চাকরি করে বলেই তার সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে, এই বিপদ যেন কেউ না করে।”

শান্তি নিবাসে থাকা শিশুদের শিক্ষা ও কারিগরী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেওয়া এক কিশোরী ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ছেলে-মেয়েরা বিপদে পড়লেই যে সাহায্য পাবে, এটা আমাদের সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে অপরাধ প্রবণতাটাও কমে যাবে।”

সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সকলেরই মা-বোন আছে, নিজের সন্তান আছে। নিজের সন্তানের নিরাপত্তা দেওয়া যেমন দায়িত্ব। অপরের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়াও তাদের দায়িত্ব। এটা মনে রাখতে হবে- অন্যের মেয়ের ক্ষতি করতে গেলে, নিজের বোন বা মেয়েরও ক্ষতি হতে পারে।”

সমাজকল্যাণ সচিব মো. জিল্লার রহমান, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলী এবং ইউনিসেফের সারা বোরদাস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বাগেরহাটের মংলায় নির্মিত ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার কনক্রিট গ্রেইন সাইলো ও মংলা-ঘষিয়াখালী খননকৃত চানেল ও এর ড্রেজিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।



আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)