
শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সংখ্যালঘুদের ওপর ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী
সংখ্যালঘুদের ওপর ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী
পক্ষকাল সংবাদঃবিভেদ-বিভাজনের সর্বনাশা নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ‘সার্জিক্যাল অপারেশন’ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এদেশে হিন্দুদের ওপর যতো জুলুম-নির্যাতন, তাদের জোত-জমি দখল, তাদের দেবালয়সহ বাড়ীঘরে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তার জন্য দায়ী একমাত্র আওয়ামী লীগ।
শনিবার (১২ নভেম্বর) সকালের রাজধানীর নয়াপল্টনের এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হিন্দু মহাজোটের নেতাদের বক্তবের সঙ্গে আমরা সম্পুণভাবে একমত। কারণ সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর বিভাজনে আমরা বিশ্বাস করি না। নাসিরনগর ইস্যুতে শুধুমাত্র মন্ত্রী ছায়দুল হক না, গোটা সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর এই মুর্হুতে পদত্যাগ দাবি করছি।
রিজভী বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দল ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জানমাল, সম্ভ্রমের ওপর ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে সাতক্ষীরায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি জবরদখলের মদদ দেয় আওয়ামী লীগ নেতা, লালমনিরহাটে হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার মামলা না নিয়ে উল্টো আটক করা হয় অভিযোগকারীকে, নেত্রকোণার মদনে মন্ডপে পুজা কমিটির ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা, ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে সংখ্যালঘু পরিবারকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয় আওয়ামী ইউপি চেয়ারম্যান, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ২০১৩ সালে মুক্তগাছায় হিন্দু বাড়ীতে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা-ভাংচুর চালানো হয়, সিলেটে মন্দিরে সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করে এক আওয়ামী লীগ নেতা। একই সালে পাবনার সাথিয়ায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রশ্রয়দাতা হিসেবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে দেশের মানুষ সোচ্চার হয়। এছাড়া ঐ সালে অসংখ্য হিন্দুদের এলাকা, বাড়ীঘর, সহায়-সম্পত্তির ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, ফরিদপুরে হিন্দুদের জায়গা দখলের প্রতিবাদ করতে গেলে একজন দোর্দণ্ড প্রভাবশালী মন্ত্রীর নির্দেশে প্রবীর শিকদার নামে একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও কক্সবাজারের উখিয়া, রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে ব্যাপক হামলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণে তাদের সম্পত্তি দখল, লুটপাট, মঠমন্দির ভাংচুর, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ সকল অপকর্মের হোতা হচ্ছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর আশ্রিত লোকেরা।
সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের ঘরবাড়ী ও মন্দিরে হামলা-ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিবেদনের ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতা সুষ্পষ্টভাবে উঠে এসে এসেছে। এই ঘটনা যে স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রীর কোন্দলের বহি:প্রকাশ সেটি আর কারো জানতে বাকী নেই। মন্ত্রী ছায়েদুল হক এর পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশ প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেছে।
রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে গাইবান্ধায় সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা গুলি ও পিটিয়ে চারজন সাঁওতাল আদিবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এই ঘটনা কেবল বর্বরোচিত ও অমানবিকই নয়, এটি শাসকগোষ্ঠীর পশুপ্রবৃত্তির এক নিষ্ঠুর ও নিকৃষ্ট উদাহরণ। ঐ এলাকাজুড়ে এখন বিভিষিকা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। শুধু পুরুষ মানুষরই নয়, নারী ও শিশুরাও ভয়ে এলাকাছাড়া হয়েছে। এই বিভৎস ঘটনা আওয়ামী ধর্মনিরপেক্ষতার একটি উজ্জল অধ্যায়।
আওয়ামী লীগের এই সমস্ত কুকীর্তি একমাত্র ৭১ এর হানাদার বাহিনীর বর্বরতার সাথেই তূলনা করা যায় এমন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আমি গাইবান্ধায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি, নিহতদের পরিবার পরিজনকে সমবেদনা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুস্কৃতিকারীদের বিচার দাবি করছি।
অবৈধভাবে ক্ষমতাদখলকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সুশাসনের কখনোই কোন ঐতিহ্য তো ছিলোই না বরং দখল, লুটপাট, অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎই হচ্ছে তাদের জীবনদর্শণ। এরা যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিনই জনগণের অঙ্গীভুত সকল সম্প্রদায়ের প্রার্থনা, আরাধনা, উপাসনালয়, নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন কোনটিরই কোন নিরাপত্তা থাকবে না। বর্তমান শাসকগোষ্ঠী রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন, যুক্তি ও বিবেকবর্জিত নৈরাজ্যপ্রসুত।