মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | রাজনীতি » পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুসঙ্গত, বেগবান এবং সর্বোচ্চ বিকাশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব অপরিহার্য
পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুসঙ্গত, বেগবান এবং সর্বোচ্চ বিকাশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব অপরিহার্য
ভারতের দু’বছর পর চীনের স্বাধীনতা অর্জন। এরপর ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৯ পুরো তিনটি দশক। বিস্ময়কর উন্নতি সাধন। ‘৭৯তে খোলা দুয়ার নীতি গ্রহণ। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের নীতি বাস্তবায়ন। শুরুতে বৃটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনে পুঁজি বিনিয়োগকে তেমন পাত্তা দেয়নি। প্রথম এগিয়ে এসেছিল জার্মানী। ভক্সওয়াগন সাংহাইতে বিনিয়োগ শুরু করে। জার্মানীর পথ অনুসরণ করে য়ুরোপের অন্যান্য দেশও অধিকতর মুনাফার লক্ষ্যে চীনে বিনিয়োগে ঝাঁপ দেয়। বৃটেন সহ যারা চীনে দেরীতে বিনিয়োগ করতে এসেছে তারা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতোমধ্যে নিজেরাই পিছিয়ে পড়েছে। যখন বুঝতে পেরেছে তখন ঢের দেরী হয়ে গেছে।
‘৭৯ থেকে ২০১৬। তিন যুগের অধিক কাল। এরমধ্যে মহাচীনের অগ্রগতি বিস্ময়কর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৮০ কোটি। ল্যান্ড ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী ৯৫ কোটি। এক্সপ্রেসওয়ে, হাইওয়ে সবমিলিয়ে উন্নত সড়কপথ ৩৫ লক্ষ কিলোমিটার। দেশটির প্রায় শতভাগ গ্রামীন জনপদ এক্সপ্রেসওয়ে-হাইওয়ের সাথে সংযুক্ত। বিশ্বের সর্বোচ্চ বুলেট ট্রেন লাইনের অধিকারী। ইয়াংজি নদীতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বহুমুখি বাঁধ নির্মাণ করে প্রাথমিক স্তরে ১৮,৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। রাজধানী বেজিং থেকে তিব্বতের রাজধানী লাসা পর্যন্ত দুর্গম ও ব্যয়বহুল রেলপথ নির্মাণ। বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন। বিশ্ববাণিজ্যে আমদানী-রপ্তানীতে শীর্ষস্থান দখল। স্টীল, সিমেন্ট, কয়লা, তেল পরিভোগে শীর্ষস্থান। বিশ্বে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদনে শীর্ষে। মহাকাশ বাণিজ্যে দ্বিতীয় স্থানে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে চীন যোগ দিতে চাইলে মার্কিনীরা বাধা দেয়। এখন চীনারা নিজেরাই মহাকাশে স্টেশন নির্মাণ করছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বিশ্বে শীর্ষে। বৈদেশিক বিনিয়োগে তরতর করে শীর্ষ স্থানে উঠে যাচ্ছে। আফ্রিকা মহাদেশে চীনের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ৬০ বিলিয়ন ডলার। গত দশকে আর্থিক প্রবৃদ্ধির সুফল ৬০ কোটি মানুষের দারিদ্রাবস্থা থেকে মুক্তি। ৫০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল নিয়ে চীন একাই বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যাংক খুলে বসেছে। দুনিয়ার পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর অবকাঠামো নির্মাণে শর্তহীনভাবে ঋণ দিচ্ছে। অর্থনীতির আকার প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার (পিপিপি অনুযায়ী)। প্রতি বছরের বৃদ্ধি ১৫% হারে। মহাচীন এখন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোন উপনিবেশ ছাড়াই, লুটপাট ছাড়াই, পররাজ্যগ্রাস ব্যতিরেকে, যুদ্ধবিগ্রহ বাদ দিয়ে স্রেফ উৎপাদন ও বাণিজ্যের পুঁজিবাদী নিয়ম অনুসরণ করে মনুষ্য সভ্যতার ইতিহাসে এরূপ অদৃষ্টপূর্ব সাফল্য কী করে অর্জিত হলো? মনে পড়ছে, ১৯৭৯তে অর্থনৈতিক সংস্কার চালুকালে ত্রিকালদর্শী বুড়ো দেঙশিয়াওপিংয়ের অমোঘ বাণীটি, “বিড়াল শাদা কি কালো সেটি আমাদের ধর্তব্যের বিষয় নয়; আদত কথাটি হচ্ছে বিড়ালটি ইঁদুর মারে কিনা!” সত্যিই কমিউনিস্টের কাছে পুঁজিপতি সাদা না কালো, দেশী না বিদেশী এটি কোন প্রশ্ন নয়; আদতে পুঁজিপতিটি মুনাফা অর্জন করে মজুরি ও কর প্রদান করে কিনা! সুতরাং, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বাস্তবিকই প্রমাণ করে দেখিয়ে দিয়েছে যে, পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুসঙ্গত, বেগবান এবং সর্বোচ্চ বিকাশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব অপরিহার্য। এর কোন বিকল্প নাই।
আবুল খায়ের