বৃহস্পতিবার, ১ জানুয়ারী ২০১৫
প্রথম পাতা » রাজনীতি » মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই : আওয়ামী লীগ
মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই : আওয়ামী লীগ
পক্ষকাল ডেস্ক : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে মিথ্যাচার হিসেবে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ বলেছে, এ দেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে না। মধ্যবর্তী নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছেন। তবে খালেদা জিয়া যতই চেষ্টা করুক ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারবেন না।
বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যুদ্ধাপরাধী ছাড়া যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। তবে মধ্যবর্তী নির্বাচন কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে এ দেশে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৯ সালে এ দেশে নির্বাচন হবে। এখন বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা নয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছিল বরাবরের মতো মিথ্যা আর ভুল তথ্যে ভরপুর। বিএনপির রাজনীতিই হচ্ছে মিথ্যা। মিথ্যাচার করা তাদের রাজনৈতিক চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য তারা দিন দিন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আলোচনা হতে পারে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। তবে সেই আলোচনায় যুদ্ধাপরাধী কিংবা জঙ্গিবাদী দলগুলোর সঙ্গে নয়। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। সেজন্য তারা (বিএনপি) ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করতে চায়। তাদের প্রতিহত করতে হবে। ৫ জানুয়ারি বিএনপির কর্মসূচি প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবার আছে। সে ব্যাপারে আমরা কিছু বলবো না। তবে কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে জঙ্গি তৎপরতা চালালে অবশ্যই সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল হিসাবে এ অবস্থায় জনগণের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বলবো, নতুন বছরে আপনি ভয়ানক ‘ডাইনি’ রূপে আবির্ভূত হবেন না। বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে সরকার তার দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ উন্নয়ন খালেদা জিয়ার চোখে পড়ছে না অথবা জেনেও তিনি ভুল তথ্য তুলে ধরছেন।
সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ ডলারের মতো। বর্তমান সরকারের আমলে তা ১২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ওই সময় ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করতো। বর্তমানে কমে তা ২৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। অথচ বিএনপির সময় তা ৬ বিলিয়ন ডলারের কম ছিল।
হাছান মাহমুদ বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধ করতে তারা (বিএনপি-জামায়াত জোট) হত্যা অগ্নি সংযোগ ও মানুষ খুন করেছে। কিন্তু নির্বাচন বানচাল হয়নি। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়েছিল বলেই দেশে গণতন্ত্র সমুন্নত আছে। আবারও বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা শুরু করেছে। স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধী জঙ্গি জামায়াতকে নিয়ে ২০ দলীয় জোট করে সে অপচেষ্টা আবার শুরু হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, তারেকের বক্তব্যকে খালেদা জিয়া সমর্থন করে তিনি প্রমাণ করেছেন তারেককে সুশিক্ষা দিতে পারেননি। তবে তারেক রহমান ও খালেদার বক্তব্যে ইতিহাস বিকৃত হবে না। জনগণ ইতিহাস জানে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দী, একেএম এনামুল হক শামীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই সরকার ব্যবসাবান্ধব : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এই সরকার ব্যবসাবান্ধব। আমি ব্যবসা করি না, ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াই আমার সরকারের কাজ। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি খাতকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’
২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা-২০১৫ বৃহস্পতিবার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। রপ্তানি উন্নয়নব্যুরো ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিরোধী দল বিএনপির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতিতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এসে তারা এলিট শ্রেণী গড়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেয়নি। তারা যাতে আর কখনোই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে তার জন্য সকলকে সজাগ থাকতে হবে। খুনের রাজত্ব আর বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশে বিরাজিত শান্তিপূর্ণ সহনশীল পরিবেশের কারণে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। যার সুফল দেশের জনগণ পাচ্ছে। এ কারণে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। কিন্তু এ দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের মধ্যে চিন্তা ও আস্থার উন্নতি হয়েছে। যে কোনো দেশকে উন্নত করতে হলে চিন্তা ও আস্থার উন্নতি দরকার। যারা ত্যাগ করে সৃষ্টি করে। তারা কিন্তু সৃষ্টিকে ধ্বংস করে না। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ উন্নত হবে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে হয়। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের কল্যাণে কাজ করে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে তারা ক্ষমতাকে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের চাবিকাঠি বলে মনে করে।’
তিনি বলেন, ‘উদারীকরণের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যের বাজারে যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে তেমনই প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। এই বিষয়কে মাথায় রেখেই আমাদেরকে এগোতে হবে। এই সময়ে বাংলাদেশকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমাদেরকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশকেই এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০৫০ সালের জন্য বাংলাদেশ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ বছরের জন্য ওই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩.২ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্য পূরণে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাণিজ্য বসতি। এই বাণিজ্য প্রসারের জন্য নতুন নতুন আন্তর্জাতিকমানের পণ্য উৎপাদন নিশ্চিত করে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নিজস্ব ব্র্যান্ড থেকে আমাদেরকে অর্থ আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।’
আর্থ সামাজিক উন্নয়নের বিস্তর ফিরিস্তি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্জন অনেক ক্ষেত্রেই ইর্ষণীয়। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে মামলা করে সমুদ্র সমস্যা মিটিয়ে ফেলায় দেশের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি ব্লু-ইকোনোমি নামের একটি অনুষ্ঠান হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক রিজার্ভ নিয়ে এক সময় অনেক বেশি চিন্তা হত। এখন আর রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আজ পর্যন্ত বৈদেশিক রিজার্ভ রয়েছে ২২.৩৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। দৈব দূর্বিপাকের জন্য সাধারণত তিন মাসের খাদ্য কেনার জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ করা হয়। এখন আমাদের যে রিজার্ভ রয়েছে তাতে সাত মাসের খাদ্য কেনা যাবে। মাথা প্রতি আয় ৬৩০ ডলার থেকে বেড়ে ১২০০ ডলারে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফিতি ডাবল ডিজিট থেকে ৬.২ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জুলাই মাসের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেনে উন্নিত হবে। এই সড়ককে ভবিষ্যতে ছয় লেনে উন্নিত করা হবে। রেল আর নৌপথে সস্তায় পণ্য পরিবহন করা যায়। সড়ক, রেল ও নৌপথের উন্নয়ন করে যোগাযোগের সমস্যা দূর করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন বন্ধ করে দেশের চাকা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন বাড়িয়ে এ সমস্যা সমাধান করেছি। পাশাপাশি সোলার এবং বায়োগ্যাস ইত্যাদি ব্যতিক্রম ব্যবস্থাসহ পাশাপাশি বিদ্যুৎ কেনারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজউল ইসলাম চৌধুরী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।