সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » সম্পাদক বলছি » আন্তর্জাতিক চরমপন্থা পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদেরই সৃষ্টি
আন্তর্জাতিক চরমপন্থা পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদীদেরই সৃষ্টি
পক্ষকাল ডেস্ক: নোয়াম চমস্কি বলেন, It’s the USA, not Iran,that is the main threat to world peace particularly for the Middle East.
চরমপন্থা হলো সমাজের প্রচলিত নিয়ম-নীতিকে অগ্রাহ্য করে এমন কোন পথ ও মত অবলম্বন করা যাতে অপরের চিন্তা-ধারা ও মানবিক অধিকারকে ক্ষুন্ন করে। চরমপন্থার সংজ্ঞায় কূটনীতিকোষে বলা হয়েছে, কোন রাজনৈতিক চিন্তার ফলাফল, ভালো-মন্দ সম্ভাব্যবতা, যৌক্তিকতা, প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি নির্বিচারে শেষ সীমায় নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা এবং শুধু সম্মুখ সংঘর্ষে আসাই নয়, বিরোধী পক্ষকেও খতম করাও লক্ষ্য (২০১৪:২৯৬)।
চরমপন্থা হলো এমন একটি মত ও পথ যেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের বাইরে চিন্তা-ভাবনা যা শান্তিপূর্ণ চিন্তাধারার প্রতি চরম অনীহা। ইহা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পৌছানোর জন্য যে কোনো ধরনের মাধ্যম হয়ত তা প্রচলিত সমাজ বিধিকে উপেক্ষা করে, বিশেষ করে অপরের জীবন, স্বাধীনতা ও মানবিক অধিকারের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করে। তবে ইসলামিক চরমপন্থা হলো, প্রচলিত ইসলামিক চিন্তা-ধারার বাইরের ভাবনা যা ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে যেকোনো ধরনের পথ ও মত অবলম্বন করতে পারে।
আজ চরমপন্থা বিশ্ব শান্তির জন্য বড় বাঁধা। সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামি চরমপন্থা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি বড় অংশ হয়ে গেছে। পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদই এর মূল কারণ। পাশ্চাত্যের অস্ত্র ব্যবসার বিস্তৃতি ও মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদের আহরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমেরিকা আজ সারাবিশ্বে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের শেখ বা রাজা-বাদশাগণ নিজেদের টিকিয়ে রাখতে সেই খাঁদে পা দিচ্ছেন। পাশ্চাত্য শক্তিকে আশ্রয় দিয়ে খাল কেটে কুমির এনেছেন। মুসলিম ঐক্যের কবর রচনা করেছেন।
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ফিলিস্তিন হতে শুরু করে আফগানিস্তান, ইরাক, লেবানন ও সিরিয়া, এশিয়াতে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা, ভারত, চীন, পাকিস্তান, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এবং খোদ ব্রিটেন ও আমেরিকাসহ সবখানেই আজ চরমপন্থার ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিংশ শতাব্দীর পুরোটা সময় জুড়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকট যত বেশি আলোচিত হয়েছে, অন্য কোনো সংকট এত বেশি আলোচিত হয়নি (বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর, ২০১২)। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এক্ষেত্রে নজর কাড়ার মত। কেন এত তৎপরতা?
এ প্রশ্নের উত্তর ‘দি ইকোনমিস্ট’ কোন রাখঢাক না রেখে যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য তুলে ধরেছিল। দ্যা ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- যুক্তরাষ্ট্র একটি শব্দ “তেল” ছাড়া কিছুই বোঝেনা। যত লোকই মারা যাক, তবুও তা চালিয়ে যেতে হবে। মানুষ তার ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাধ্য হয়ে পরদেশে পাড়ি জমাচ্ছে এবং দূর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ অকাতরে তাদের জীবনকে বিলিয়ে দিতে হচ্ছে। এদের সৃষ্টিতে সর্বাগ্রে কাজ করেছে পশ্চিমা শক্তি তথা আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। ভৌগোলিকগতভাবে মধ্যপ্রাচ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। বিশেষ করে, এখানকার তেল সম্পদ এখন আমেরিকার বড় লক্ষ্য।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে “চরমপন্থা” কথাটির খুব একটা প্রচলন ছিল না। আর আত্মঘাতি বোমা হামলা সেটি ছিল ধারণাতীত। যা প্রতিনিয়ত আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ইসলামী চরমপন্থা আজকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি বড় অংশ হয়ে গেছে। তবে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে, ইসলামিক স্টেটের মত চরমপন্থার জন্মের অন্যতম কারণ পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ। যুগে যুগে মানুষ তার মাতৃভূমি বা স্বকীয়তা রক্ষা করতে জীবন দিয়ে হলেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রতিরোধ করে নিজেকে বা দেশকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।
যেমন- খোদ আমেরিকাতে যেসব আদিবাসী (রেড ইন্ডিয়ান) ছিল তারা ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আর এর মধ্যে আফ্রিকা হতে নিয়ে আসা অনেক সহিংস্র দাসও ছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ফিলিপাইনের লোকজন স্পেনের উপনিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে এবং ১৮৯৮ সালে আমেরিকা দখল করলে তখন তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছিল। তেমনি ১৮০০ দশকে দক্ষিণ আফ্রিকার জুলু সম্প্রদায় ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েছিল।
সাম্রাজ্যবাদের উদ্দেশ্য শুধু দখলদারিত্ব নয় বরং সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ও ব্রিটিশরা নিজস্ব মত ও বিশ্বাস বিশেষত নিজ ধর্ম চাপিয়ে দিতে কোনো রকম পরোয়া করেনি। এ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ঠিক তেমনি মধ্যপ্রাচ্যে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে উঠে পড়ে লেগেছে। যার অনবদ্য ফল হিসাবে ইসলামী চরমপন্থার জন্ম হয়েছে।
পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কিছু কিছু দেশে উপনিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেও অন্যান্য রাষ্ট্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, আমেরিকা এবং ইইউ-এর সরাসরি হস্তক্ষেপের ফলে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে অভ্যুত্থান এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। মূলত ১৮০০ দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন কর্তৃক ইরানে তেলের খনি দখল করে তা নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল। যে অ্যাংলো পার্সিয়ান তেল কোম্পানি-এর মালিকানা লাভ করেছিল তার অধিকাংশ শেয়ার ছিল ব্রিটিশ সরকারের। ইরানি জনগণ নিজস্ব তেলের মালিকানা বিদেশিরা হওয়ায় এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। ইরানি সরকার তেলের মাত্র ১৬ শতাংশের মালিকানা ভোগ করত। কিন্তু, জনগণের দাবির মুখে ১৯৫০ সালে ইরানি সংসদ দেশের তেলের সেক্টরকে জাতীয়করণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ মোসাদ্দেক “জাতীয় ইরানি তেল কোম্পানী” প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু, পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী (আমোরিকা ও ব্রিটিশ) শক্তির এ সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি। তারা জোগসাজসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মোসাদ্দেক সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রেজা শাহকে ক্ষমতায় বসায়। রেজা শাহ ক্ষমতায় এসে আবারো পাশ্চাত্যের তেল কোম্পানির দ্বার খুলে দেন। শুধু তাই নয়, আমেরিকা তাকে সামরিক সহায়তা এবং গোপন বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাকি ২৬ বছর ইরানিদের উপর নির্মমতা চালিয়েছে।
রেজা শাহ ক্ষমতায় এসে শুধু তেলের মালিকানা পাশ্চাত্যকে প্রদান করেনি বরং অনৈসলামিক কর্মকান্ড যেমন- মদ্য পান, ক্যাসিনোতে জুয়াখেলা, পতিতালয় ইত্যাদির মাধ্যমে ইরানি সমাজকে কলুষিত করতে থাকে। ইরানি জনগণ ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লা খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব সাধন করে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদকে রুখে দিতে সমর্থ হয়। এ বছরেই ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্রে পরিণত হল। ধীরে ধীরে পাশাপাশি দেশগুলোতেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলতে লাগল।
পাশ্ববর্তী লেবাননে প্রতিষ্ঠিত হল হিজবুল্লাহ নামক কট্টরপন্থী ইসলামী দল। আফগানিস্তানে রাশিয়ার বাড়াবাড়ির কারণে প্রতিষ্ঠিত হল মোজাহিদীন গ্রুপ। আর এ মোজাহিদীন গ্রুপের প্রায় দশ হাজার সদস্য ছিল সৌদী আরবের। যারাই পরবর্তীতে ওহাবী চরমপন্থা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ু যুদ্ধের অংশ হিসেবে আফগানিস্তানের মোজাহিদীনদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ সরবরাহ করতে লাগল। ১৯৮০ দশকে আমেরিকা প্রায় ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলারের অস্ত্র আফগানিস্তানে সরবরাহ করে। আর তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এসব মোজাহিদীনকে “মুক্তিযোদ্ধা” হিসেবে অভিহিত করেন।
এদের অন্যতম ছিলেন আমেরিকার পৃষ্ঠপোষকতায় বড় হওয়া ওসামা বিন লাদেন। যাকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মূল হোতা হিসেবে আমেরিকা বিবেচনা করে। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান রাশিয়া হতে মুক্ত হলে ১৯৯৬ সালে মোজাহিদীনদের মাঝে খন্ড যুদ্ধের পর তালিবান সৃষ্টি হয়। তারা একটি কট্টরপন্থী সরকার গঠন করল। ১৯৯৩ সালের ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট-এর একটি কলামে ওসামা বিন লাদেনকে একজন বড় যোদ্ধা হিসাবে বিবেচনা করা হয়; সন্ত্রাসী হিসেবে নয়। কিন্তু, উপসাগরীয় যুদ্ধকে উপলক্ষ করে যখনই মুুসলিম রাষ্ট্র হতে আমেরিকার সৈন্য-সামন্ত সরানোর পক্ষে মতামত দেন তখনই তিনি রাতারাতি সন্ত্রাসী বনে যান।
আমেরিকার মূল সূত্র হলো- কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী। আর একটি কথা প্রচলিত আছে যে, আমেরিকা যার বন্ধু তার আর শত্রুর দরকার হয়না। এভাবেই আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে আল-কায়েদা, মোজাহিদীন ও তালিবান সৃষ্টিতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে। ৯/১১ আক্রমণের পর বিশ্বের প্রেক্ষাপট পুরো পরিবর্তন হলো। আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ নতুন রূপ নিল। এর প্রেক্ষিতে জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০১ সালে আফগানিস্তান এবং ২০০৩ সালে ইরাকে জাতিসংঘের কোনরূপ অনুমতি না নিয়ে আক্রমণ করে। যা ছিল আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
যুদ্ধের প্রথম দিকে আল-কায়েদার তেমন কোন অংশগ্রহণ না থাকলেও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যখন অভ্যন্তরীণ কলহ বেড়ে যায় তখন ব্যাপকহারে আল-কায়েদা ও অন্যান্য চরমপন্থী দলগুলো বিশেষত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর উত্থান হয়। সাদ্দাম হোসেনের উৎখাতের পর অনেক বেকার আর্মি অফিসার চরমপন্থী দলের সাথে যোগ দেয়। আল কায়েদা আর তালেবানদের মাঝে চরমপন্থী গ্রুপ ইসলামী স্টেটের সাথে যোগ দেয়। ২০১১ সালে তারাই সিরিয়া ভেতরে ঢুকে দিনদিন শক্তিশালী হয়ে উঠে। আজ তারা সিরিয়া ও ইরাকের একটি বড় অংশ দখল করে চরম হিংস্রতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছে ইসরাঈল নামক এক বিষফোঁড়া। যার কারণে আজও মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আসেনি। ক্ষুদ্র পরিসরে আরব নিধন আর বৃহত্তর পরিসরে চলছে মুসলমানদের উপর অত্যাচার। এসব কারণে জন্ম দিচ্ছে সন্ত্রাসবাদ আর সন্ত্রাসবাদী বলে খ্যাত সংগঠনগুলো। মজার ব্যাপার হলো, এসব কথিত সন্ত্রাসবাদ আর সন্ত্রাসবাদীদেরকেও প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে পশ্চিমা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য। (সূত্র : আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের ইতিকথা)।
মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমান বিট্রিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.জে.বেলফোর বিট্রিশ জায়নিস্ট ফেডারেশন- এর সভাপতি লর্ড রথচাইল্ডকে একটি চিঠি দেন। যার উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের জন্য একটি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করা। ইতিহাসে ইহাই “বেলফোর ঘোষণা” হিসেবে পরিচিত। এর ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণে মিসর, জর্ডান, লেবানন ও ইরানের সাথে ইসরাঈলের যুদ্ধ বেঁধে যায়। পরবর্তীতে এর জের ধরে ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালে আরো দু’টি যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
জাতিসংঘ-এর নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ৩০৮ নং প্রস্তাব মোতাবেক ইসরাঈলের অধিকৃত আরব এলাকা ফিরিয়ে দেবার কথা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত আজও কার্যকর হয়নি। অধ্যুষিত এলাকায় একটি ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈল-এর জন্মের মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য সংকটের যাত্রা শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ-ই পাশ্চাত্যশক্তির অন্যতম লক্ষ্য। আরববিশ্বে আমেরিকা নিজের প্রয়োজনে যেমন মোজাহিদীন, তালিবান ও ওসামা বিন লাদেনকে তৈরি করে স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে পরবর্তীতে তা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির জন্য বুমেরাং হয়ে গেছে।আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসাকে চাঙ্গা রাখতে তৈরি করছে চরমপন্থী আর জঙ্গিগোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ার তেলের কুপগুলোর একটা বড় অংশ আইএসের দখলে। এ জঙ্গীগোষ্ঠী প্রতিদিন গড়ে ২ মিলিয়ন ডলার আয় করছে কালোবাজারীতে তেল বিক্রি করে।
আরেকটি তথ্যে বলা হয়, প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হচ্ছে। এর মূল্য ৩২ কোটি ডলার। অবাক করা বিষয় হলো- এ তেল তুরস্ক দিয়ে সরবরাহ হচ্ছে এবং ইসরাঈল এর প্রধান ক্রেতা। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার এটা অন্যতম কারণ। আন্তর্জাতিক বড় বড় তেলের কোম্পানীগুলো আজ ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তাই আরেকটি যুদ্ধ আসন্ন মনে হচ্ছে।
অপরদিকে লিবিয়াতে তেলের উপর তিনটি পশ্চিমাদেশের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। ইতালির জ্বালানি তেলের ২৯ ভাগ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্সের নির্ভরশীলতা ১৪ ভাগ আর স্পেনের ১০ ভাগ। পৃথিবীর যে কয়েকটি আন্তর্জাতিক খ্যাত কোম্পানি মধ্য এশীয় অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পুঁজি লগ্নি করেছে বা করবার চেষ্টা করছে তার মধ্যে বৃহত্তম আমরিকার কোম্পানি ইউএনওসিএএল এবং সোকাল।
সম্পদ লুট-এর একটি অতি সাধারণ বিষয়। প্রায় দেড়শত বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাস এবং মেক্সিকোর অর্ধেকের বেশি কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিল। আর সেই সময় তুলার ব্যবসা ছিল জনপ্রিয় এবং লোভনীয়। বর্তমান তেল যেভাবে পৃথিবীর শিল্পাঞ্চলকে উসকে দিচ্ছে তুলা সে সময় একইভাবে শিল্পবিপ্লবের ইন্ধন যুগিয়েছিল।
সৌদি আরবে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ বিলিয়র ডলারের অস্ত্রের ব্যবসা। এ অঞ্চলে যুদ্ধ লাগলে আমেরিকার অস্ত্রের ব্যবসা বেড়ে যাবে। আর আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা আরো চাঙ্গা হয়ে উঠবে। মার্কিন ভূখন্ডের বাইরে বিশ্বের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক এলাকার একটি হলো এই উপসাগরীয় অঞ্চল। বাকি দুটো হল-এশিয়া প্যাসিফিক এবং পশ্চিম ইউরোপ। এ অঞ্চলের ভৌগোলিক গুরুত্বের কারণ-এ অঞ্চলের তেল সম্পদের প্রাচুর্য। সারা বিশ্বের মোট তেলের দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ন্ত্রণ করে আরবদেশগুলো। একটি রিপোর্টে বলা হয়-শুধু ইরাক ও কুয়েতের কাছে আছে বিশ্বের বিশ ভাগ তেলের নিয়ন্ত্রণ।
মধ্যপ্রাচ্যের নতুন পট তৈরির জন্য আমেরিকা নতুন নকশা তৈরি করেছে। কয়েকবছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওয়েসলি কার্ক ৭টি দেশের পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন- ইরান, সিরিয়া, লেবানন, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইরাক। ইতোমধ্যে লিবিয়া ও ইরাক পরিবর্তন হয়েছে। সিরিয়া পরিবর্তনের পথে।
অধ্যাপক তারেক শামসুর রহমান বলেন, ২০২০ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে মানচিত্র আঁকতে হবে। সৌদি আরব ভেঙ্গে যাওয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও ইরাক একাধিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া ইত্যাদি হল তার বাস্তবতা। সুক্ষ্মভাবে দেখা যাচ্ছে, এতে লাভবান হচ্ছে শুধু পশ্চিমা বন্ধু ইসরাঈল। তিনি আরো মতামত ব্যক্ত করেন যে পশ্চিমা শক্তি তুরস্ক, সিরিয়া এবং ইরাকের বিশেষ অঞ্চল নিয়ে আইএসের মাধ্যমে আরো একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবছে।
জিমি কার্টারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জিগনিয়ে ব্রিজেনস্কি মত পোষণ করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি অপরিহার্য সাম্রাজ্যবাদী ভূ-কৌশল হলো ষড়যন্ত্র বিষয়ক গোপন চুক্তি বা সহযোগিতা প্রতিহত করা, শাসিতদের বা অনুগতদের মধ্যে নিরাপত্তা নির্ভরতা বজায় রাখা, শাসকদের প্রভাবিত নিরাপত্তা নির্ভরতা বজায় এবং অসভ্য বা বর্বর ব্যক্তিদের একত্রিত হতে না দেয়া।
২০১১ সালের জের ধরে সারা আরব জাহানে যে নব চেতনা জাগ্রত হয়েছিল তা কিন্তু তত বেশি এগুতে পারেনি। মিশরে গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে জোড়পূর্বক হটিয়ে দিয়ে গণহত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে ইসলামিক ব্রাদারহুডের অস্তিত্বকে আজ বিলীন করে দিচ্ছে সামরিক সরকার। তবে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি তিউনিসিয়াতে। মূলত, ইসলামিক স্টেট আমেরিকার সৃষ্টি।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেন, There are elements of truth in claims that the invasion of iraq led to the creation of the Islamic State.
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই অধিকাংশ আরব রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মোড়লগীরি ধরে রাখার জন্য ১৯৪৮ সালে অবৈধভাবে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈল প্রতিষ্ঠা করে। এর জন্য ফিলিস্তিনবাসী ইসরাঈল কর্তৃক নিষ্পিষিত হচ্ছে।আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা করছেনা। এ ধরনের নির্মমতার ফলে নিরুপায় হয়ে তারা আত্মরক্ষার জন্য পাশ্চাত্য বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলছে। অনেকক্ষেত্রে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অনেকে জড়িত হয়ে পড়ছে। ইন্তেফাদা আন্দোলন, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য হামাসের তীব্র প্রতিরোধ ইত্যাদি চরমপন্থা বেঁছে নিতে বাধ্য করছে। ঠিক একইভাবে ইসরাঈল ও আমেরিকার যোগসাজসে লেবাননে আক্রমনের কারণে হিজবুুল্লাহর মত দল প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছে। ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের চেয়েও আল-কায়েদা ও তালেবান অধিক পরিমাণে চরমপন্থী। আবার আল-কায়েদা ও তালেবানের চেয়েও বেশি চরমপন্থী আইএস।
সম্প্রতি সিআইএ-এর অন্যতম মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক গ্রাহাম ফুলার বলেন- ”I think the United states one of the key creators of [ISIS]. The United states did not plan the formation of ISIS, But its destructive interventions in the Middle East and the war in Iraq were the basic causes of the birth ISIS.”
সুতরাং ইহা আমাদের কাছে স্পষ্ট যে, পাশ্চাত্য শক্তি তাদের নিজেদের প্রয়োজনে আজ সারাবিশ্বে চরমপন্থাকে উষ্কিয়ে দিচ্ছে। ফকোইস্ট তত্ত্বের মূল মন্ত্রকে অনুসরণ করছে আইসিস বা আইএস। আল কায়েদা আর আইএস-র প্রতিযোগিতা শুরু হয় আল-কায়েদার পূর্বতন কৌশলগত পরিবর্তন হওয়ার পর। এই কৌশল শুরু হয় তিউনিসিয়াতে ২০১০ সালে আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর। ২০১১ সালের মধ্যে সমগ্র আরব বিশ্ব, বিশেষ করে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেন এবং সর্বশেষ সিরিয়ায় সরকার হটাও আন্দোলন শুরু হওয়ার পর।
ততদিনে আল কায়েদার অঘোষিত নেতৃত্ব চলে যায় আয়মান আল জাওয়াহিরির অনুসারীদের হাতে। আল কায়েদা আরব বসন্তে সমগ্র আরব বিশ্বে শাখা স্থাপন করে। যেমন- আল-কায়েদা ইন মাগরেব, আল-কায়েদা ইন এরাবিয়ান পেনিনসুলা, আল-কায়েদা অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলা এবং আল-কায়েদা ইন ইরাক। আল-কায়েদা ইন ইরাক-এর নেতৃত্বে ছিলেন জারকাবি। ২০১১ সালে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর আল-কায়েদা নতুন নেতৃত্ব পুরাতন খোল পাল্টিয়ে ফেলে; যার বাইরে থাকে আল-কায়েদা ইন ইরাক। তবে জারকাবি আল-কায়েদার নতুন কৌশল সমর্থন করতে পারেনি। আল কায়েদা হতে বের হয়ে ‘আল কায়েদা ইন ইরাক’ রূপান্তরিত হয় ইসলামিক স্টেট রূপে।
জারকাবির মৃত্যুর পর ক্রমেই আইএস গড়ে উঠে, শক্ত হতে থাকে ভিত এবং সাদ্দাম হোসেনের সাবেক সামরিক বাহিনীর সুন্নি সদস্যরা যোগ দেয়। যারা আল-কায়েদা এবং আইএস নিয়ে গবেষণা করছেন তাদের মতে, বর্তমান আইএস-এর কৌশল আল কায়েদা হতে ভিন্ন। আল কায়েদা মূলত মাও সেতুং এর গেরিলা কৌশল অবলম্বন করে বিস্তার লাভ করে। অপরদিকে অস্ত্র-অর্থ থাকা আইএস চে গুয়েভারার “ফকোইস্ট” কৌশল ধারণ করে।
আর এ আগ্রাসী গেরিলা তত্ত্বের তাত্ত্বিক উদ্ভাবক ছিলেন ফ্রান্সের বিপ্লবী চিন্তাবিদ রেগিস ডেবরে। এ তত্ত্বকে শাণিত করেন গুয়েভারা তার কিউবার বিপ্লবে। ফকোইস্ট তত্ত্বের মূল মন্ত্র হলো সুযোগ বা পরিবেশ তৈরির অপেক্ষায় নয়; শক্তি সঞ্চয় করে টার্গেটের ওপর পূর্ণ শক্তি নিয়ে আক্রমণ রচনা করতে হবে এবং বিভিন্ন আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মধ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরি কারে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
অপরদিকে, মাও সেতুং জনযুদ্ধের যে তত্ত্ব দিয়েছেলেন তাতে প্রথমে জনগণকে সাথে নেয়ার এবং জনসমর্থনের (তা যত গৌণই হোক) প্রয়াস নিয়ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার পর চূড়ান্ত লক্ষ্যে যাওয়ার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা। ধীরে ধীরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আফ্রিকাতে বিস্তৃত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আজ সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আফ্রিকাতে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন কিছুদিন আগে মালিতে তথাকথিত ইসলামী চরমপন্থীরা হামলা চালিয়েছে। একই হামলা হল বুরকিনাফাসোতে। মালির উত্তরে তুয়ারেগ অঞ্চলে চারটি জঙ্গী সংগঠন জিহাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। একিউআইএম, মোজওয়া, এএমবি ও আনসারে দ্বীন। পাশাপাশি মৌরিতানিয়া ও নাইজারে তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে।
নাইজেরিয়াতে ইসলামি জঙ্গীগোষ্ঠীর বোকোহারামের নৃশংস ঘটনা আজ সারাবিশ্বের নজর কাড়ছে। দেশটির ৩৬টি প্রদেশের ১৪টিতে এ সংগঠনটি অত্যন্ত শক্তিশালী। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পৃথিবী দুইটি পরাশক্তিতে আবদ্ধ হয়। শুরু হয় শীতল যুদ্ধ। সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জেহাদে অবতীর্ণ হয়েছিল। রাশিয়া ভেঙ্গে গিয়ে পুঁজিবাদী শক্তির জয় জয়কার হল। পৃথিবী ক্রমেই একক স্বৈরাচারের দিকে মোড় নিল। ইসলাম প্রেম পশ্চিমা বিশ্বে ১৯৭৯-৮৯ পর্যন্ত জন্ম দিয়েছে শতের বেশি জিহাদী সংগঠন।
আর সেগুলোই আজ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আখ্যা দিয়ে তথা কথিত “সভ্যতার সংঘাত”-এর দিকে পৃথিবীকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমেরিকা ইরাক, আফগানিস্তান ও সিরিয়ার ব্যাপারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেও যেসব দেশে তাদের সমর্থিত রাজতন্ত্র রয়েছে তাদেরকে সার্বিকভাবে আগলিয়ে রেখেছে। আমেরিকা মূলত স্বাধীনতার কথা বললেও পৃথিবীর অনেক দেশে বিশেষত ফিলিস্তিন, কাশ্মীর ও চেচনিয়ার আন্দোলনকে সেভাবে সমর্থন করছেনা।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাঈল। এর বিপক্ষে কথা বলতে গিয়ে অনেক নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। আর এ রকম সমস্যাকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে হামাস, পিএফএলপি ও আল-কায়েদার মত বহুল আলোচিত সংগঠনসমূহ। শীতল যুদ্ধের পরবর্তীতে আফগানিস্তানে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে কট্টরপন্থী তালেবান ও আল-কায়েদা গোষ্ঠী। আবার ইরাকে আমেরিকার আক্রমণের কারণে গড়ে উঠেছে সভ্যতা বিধ্বংসী চরমপন্থী গোষ্ঠী আইসিস।
সম্প্রতি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী হওয়ায় পুরো বিশ্ব বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্যে আরো অস্তিরতা বাড়বে বলে অনেকে ধারণা করছেন। কিন্তু, আমার মনে হয়, হিলারী বা ট্রাম্প যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা মুদ্রার এপিট আর ওপিট। কারণ, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে (১৯১৪-১৯১৮) আমেরিকা মিত্র শক্তির পক্ষেই ছিলেন। যে যুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। আর সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডেমোক্রেট দলীয় উড্রো উইলসন।
আর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) ৬ বছরের যুদ্ধে অনেক মানুষকে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে হয়েছে। শুধু ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্টের এ্যাটম বোমা হামলায় প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার লোক মারা যায়। সে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্র্যাংলিন ডি রুজভেল্ট। তিনিও ছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের। একইভাবে বলতে গেলে কোরিয় যুদ্ধ, ১৯৪৮ সাল হতে ইসরাঈলের মধ্যপ্রাচ্যে নৃসংশতা, কিউবায় (১৯৬১-১৯৬২) মার্কিন হামলা, আফগানিস্তান দখল (২০০১), কর্নেল গাদ্দাফিকে নির্মমভাবে হত্যা, আজকে রক্তাক্ত সিরিয়াসহ সবকিছুর পিছনে হয়ত ডেমোক্রেট দলীয় নয়ত রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্টের হাত রয়েছে।আজও বিশ্বের যেকোনো দেশের বড় অঘটনের পিছনে কলকাঠি নাড়ছেন খোদ আমেরিকা।
মূলত, নব্য-উদারতাবাদের এ যুগে আমেরিকা তার ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য কোনো কাজ করা বাদ দিচ্ছেনা। সারাবিশ্বে চরমপন্থী উত্থানের মাধ্যমে আমেরিকা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাচ্ছে। দ্যা ইকোনমিস্ট মতামত দিয়ে শেষ করতে চাই- যুক্তরাষ্ট্র একটি শব্দ “তেল” ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। যত লোকই মারা যাক, তবুও তা চালিয়ে যেতে হবে।
উৎস সমূহ :
১. নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, তারেক শামসুর রেহমান
২. বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর, তারেক শামসুর রেহমান
৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, মোঃ আবদুল হালিম
৪. প্রথম আলো, দ্যা গার্ডিয়ান, নিউ এ্যাজ
৫. John T. Rourkeand Mark A. Boyer, International Politics on the World Stage, New York,1996 Politics on the World Stage, New York,1996
৬. Brigadier Mohammad Yousuf : The Bear Trap : 1992/93
লেখক,
মোঃ আব্দুর রশিদ, সাবেক ছাত্র, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।