মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আওয়ামী লীগে প্রতিক্রিয়া
রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে আওয়ামী লীগে প্রতিক্রিয়া
পক্ষকাল সংবাদ নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোকে বৈঠকে বসতে যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও সরকারের মন্ত্রী। রাষ্ট্রপতির এই আহ্বানকে তারা শুভ উদ্যোগ বলে অভিহিত করে বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে অস্থিরতা চলছে, তা এই উদ্যোগের মাধ্যমেই কেটে যাবে। তবে বিএনপির ‘নেতিবাচক রাজনীতি চর্চা’ এই শুভ উদ্যোগটি বিতর্কিত করতে পারে বলেও তারা মনে করছেন।
কাজী রবিকউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিশনে নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে তার আগেই। এরই অংশ হিসেবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ১৮ ডিসেম্বর বিএনপি, ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন শরিক দল এলডিপি ও জোটের বাইরের দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ২২ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে রাষ্ট্রপতি আলোচনায় বসবেন। পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত সব দলের সঙ্গেই বসবেন এবং দলগুলোর পরামর্শ নেবেন রাষ্ট্রপতি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের আগেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। এরপর পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দলটি নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দনও জানিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখনই নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছে, তখনই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেছে দলটি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির আলোচনায় বসার আহ্বান শুভ উদ্যোগ। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসবে। সব কিছুকে বিতর্কিত করার তাদের যে অপচেষ্টা, তা থেকেও এবার দলটি বেরিয়ে আসবে।’
রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে শুভ উদ্যোগ আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমি মনে করি, রাষ্ট্রপতির আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক রাজনৈতিক মানসিকতার পরিচয় দেবে। রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে বিতর্কিত করার কোনও চেষ্টা করবে না দলটি।’
এই উদ্যোগের ফলে রাজনীতির মাঠের অস্থিরতা কেটে যাবে বলে মন্তব্য করে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রপতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, বিএনপি গঠনমূলক প্রস্তাব দেবে। এখানে তারা নেতিবাচক রাজনৈতিক চর্চা করা থেকে বিরত থাকবে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগকে বিএনপি বিতর্কিত করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির আলোচনা একটি শুভ উদ্যোগ। তিনি দেশের ঐক্যের প্রতীক। আমরা মনে করি, তার এই উদ্যোগ সফল হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল নির্মোহভাবে রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করবে। তবে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চর্চা আমাদের ভীত করে তোলে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেখে আসছি, বিএনপি সব কিছুকে বিতর্কিত করতে চায়। তাই দুশ্চিন্তাও থেকে যায়।’
বিষয়টি ইতিবাচক আখ্যায়িত করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি একটি শুভ উদ্যোগ নিয়েছেন। আমরা আশা করি, দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতিকে সহযোগিতা করবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসবে।’
তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে বিরক্ত করবেন না। সব বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না। এছাড়া সব বিষয়ে কথা না বলতে দলের একটি সিদ্ধান্তও রয়েছে। কথা বলার জন্য দলের ৪ জন মুখপাত্র ঠিক করা আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলুন।’
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যেকোনও সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ মেনে নেবে। তিনি দেশের। তাই তিনি যেকোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’