মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দেবে বিএনপি ও এলডিপি
রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রস্তাব দেবে বিএনপি ও এলডিপি
পক্ষকাল ডেস্ক” বিএনপি ও এলডিপি
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে আলোচনায় বসতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকা শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সোমবার বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এলডিপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও জাসদকে (ইনু) আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বঙ্গভবন থেকে। আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পরপরই দলগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে আলোচনার ইস্যু নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে হলেও বিএনপি ও এলডিপি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন বিষয়েও রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দেবে বলে দল দু’টির দুই শীর্ষ নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান।
এদিকে, আমন্ত্রিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দৃশ্যত ইসি গঠন নিয়ে দলীয় প্রস্তাবগুলো রাষ্ট্রপতিকে দিলেও মূল আলোচনায় থাকবে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুই। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার দেওয়া সহায়ক সরকারের প্রস্তাবটিকেই সামনে আনতে পারে বিএনপি। এ ব্যাপারে দলটির একজন শীর্ষ নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনই আলোচনার বিষয়বস্তু বলা যাচ্ছে না। আলোচনার বিষয় দৃশ্যত ইসি হলেও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়েও প্রস্তাব দেওয়া হবে।’
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। তবে বৈঠকে কতজন যাবেন, কী নিয়ে আলোচনা হবে-এসব বিষয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পরই ঠিক করা হবে। আজ-কালের মধ্যে তার সঙ্গে দলের নীতি-নির্ধারকদের বৈঠক হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর হোটেল ওয়েস্টিনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ইসি গঠনের প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রকিব কমিশনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি। প্রস্তাবে খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, কাদের নিয়ে গঠিত হবে, বাছাই কমিটি, বাছাই কমিটির কাঠামো, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণে দলের বিস্তারিত সুপারিশ তুলে ধরেন। এরপর এই প্রস্তাব নিয়ে জোর তৎপরতা চালায় বিএনপি। গত ৫ ডিসেম্বর বিএনপির সিদ্ধান্ত ছিল, এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনার জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি না পেলে বিকল্প পথে প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী দলের ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বঙ্গভবনে প্রস্তাব দিয়ে আসেন গত সপ্তাহে। এর আগে গত ২০ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রস্তাব জানাতে রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারকে ফোন করে সময় চেয়েছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর ২৩ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সময় চাওয়া হবে।’ এ দিনই বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল মহাসচিবের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন।
গত ৩ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে গণভবনে হাঙ্গেরি সফর বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দিয়েছে, বিষয়টি তিনিই দেখবেন।’ যদিও এ দিনই রাতে বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের জানান, ‘ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও একটি দলের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে বিএনপির প্রস্তাব এড়িয়ে গেলে চলবে না।’
আগামী ২১ ডিসেম্বর এলডিপি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে আলোচনা করবেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমরা ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে পরামর্শ দেব, তিনি যেন নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি লিখিত প্রস্তাবনা তুলে দেব রাষ্ট্রপতির হাতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সরকারের দমন-পীড়নসহ যারা গুম হয়েছেন, তাদের খুঁজে দিতে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করব। তিনি যেন সরকারকে এ ব্যাপারে আহ্বান জানান। এছাড়া রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারেও রাষ্ট্রপতিকে অবস্থান নিতে অনুরোধ জানাব।’
রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)কে পাঠানো চিঠির অনুলিপি
এলডিপির শীর্ষপর্যায়ের একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি তুলে ধরব। জামায়াতকে বাদ রেখে ৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোকে নিয়ে একটি সরকার গঠনের প্রস্তাব দেব। এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধা থাকলে তা সংশোধনের কথাও জানাব।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রস্তাবে স্বাধীনতার পর থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর কথা বলা হলেও আদতে সেটি সম্ভব নয়। এখন অনেক দল আছে, যেগুলো নিষ্ক্রিয়, নিবন্ধন থাকলেও কাজ নেই, তাদের সঙ্গে কিসের আলোচনা হবে? সহায়ক সরকারে জামায়াতকে ডাকা হবে না-এটি সরাসরি না বললেও আকারে-ইঙ্গিতে বিষয়টি রাষ্ট্রপতির নজরে আনব। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দেশে-বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে রাষ্ট্রপতির কাছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা কেবল চিঠি পেয়েছি। দলীয় প্রধানের সঙ্গে আলোচনা হবে। বিষয়বস্তু পরে জানা যাবে। তবে রাষ্ট্রপতির প্রস্তাব আমরা আন্তরিকভাবে দেখছি। ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে তার ভূমিকা পথপ্রদর্শন করবে। তিনি সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সংকট উত্তরণের জন্য তিনি ভূমিকা রাখবেন বলে প্রত্যাশা করি।’
বিএনপির প্রস্তাব দেওয়ার কয়েকদিন পরেই ইসি গঠনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাব দেন। ২৬ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া প্রস্তাবে এরশাদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের জন্য আলাদা সচিবালয় থাকতে হবে। বর্তমান সংসদেই এ আইন পাস করতে হবে।’
উল্লেখ্য, এ বিষয়টি বিএনপির প্রস্তাবেও ছিল। ইসির জন্য পৃথক সচিবালয় করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।
জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের এখনই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আগে চেয়ারম্যান চিঠি পাক, এরপর তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন, কী আলোচনা হবে। ইসি গঠনে যে প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন, এই বিষয়টি রাষ্ট্রপতি দেওয়া হতে পারে। বিশেষ করে ইসি গঠনে আইন করার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হতে পারে। তবে সবকিছু চেয়ারম্যান চূড়ান্ত করবেন।’
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকীও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি অনুষ্ঠানে ঢাকার বাইরে আছি। আগে সভাপতি চিঠি হাতে পাবেন, এরপর দলীয় ফোরামে আলোচনা করে ঠিক করব, রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে কী প্রস্তাব দেব।’
চিঠিপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এমপি বলেন, ‘মাত্রই চিঠি পেলাম। দলে এটা নিয়ে আলোচনা হবে, এরপর জানাব কী বিষয় নিয়ে আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করব।’
উল্লেখ্য, সংবিধানের নিয়ম অনুসারে নির্বাচন কমিশন গঠন করার এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে তিনি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিতে পারেন। যদিও ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করেছিলেন।