শনিবার, ৭ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ » পানির ন্যূনতম বিল তিন গুণ বাড়ল
পানির ন্যূনতম বিল তিন গুণ বাড়ল
পক্ষকাল সংবাদ : চট্টগ্রাম ওয়াসা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ন্যূনতম পানির খরচ তিন গুণেরও বেশি বাড়াল । এখন থেকে আবাসিক গ্রাহকদের মাসে ন্যূনতম বিল দিতে হবে ৫৯৬ টাকা। ডিসেম্বর মাসের বিলের সঙ্গেই নতুন এই বিল জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। আগে আবাসিক গ্রাহকদের ন্যূনতম বিল ছিল ১৭৮ টাকা। আর অনাবাসিক (বাণিজ্যিক) গ্রাহকদের জন্য ন্যূনতম বিল ধরা হয়েছে দেড় হাজার টাকা। আগে এটি ছিল ৫০৬ টাকা।
নগরের চট্টেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা মো. মোবারক হোসেন বলেন, গত বুধবার ৭৯৬ টাকা পানির বিল (ডিসেম্বর মাসের) পেয়েছেন তিনি। ওয়াসা কার্যালয়ে গিয়েও এর প্রতিকার পাননি তিনি। ক্ষুব্ধ মোবারক বলেন, ‘আমাদের পানির খরচ খুব কম হয়। মিটারও চালু আছে। প্রতি মাসে বিল দিতাম ১৮০ বা ১৯০ টাকা। কিন্তু এখন সেটি একলাফে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানায়, এত দিন গ্রাহককে ন্যূনতম ২১ ইউনিটের বিল দিতে হতো। এখন থেকে ন্যূনতম বিল দিতে হবে ৬৮ ইউনিটের। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আবাসিকে ১৮ শতাংশ পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে প্রতি ইউনিট (এক হাজার লিটার) পানির দাম আবাসিকে পড়বে ৯ টাকা করে। আগে এটি ছিল ৭ টাকা ৬১ পয়সা। অনাবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির খরচ পড়বে ২৫ টাকা। আগে ছিল ২১ টাকা ৫৬ পয়সা। ইউনিটপ্রতি পানির খরচ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ন্যূনতম পানির বিলও একলাফে তিন গুণের বেশি বাড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক গ্রাহক।
ওয়াসার কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একটি সংযোগের (গ্রাহক) বিপরীতে বেশ কয়েকটি পরিবার পানি ব্যবহার করে। বহুতল ভবনকেও একটি সংযোগ ধরা হয়। একটি সংযোগের বিপরীতে একটি পরিবারের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। এখন পানি সরবরাহ বাড়ায় বেশির ভাগ গ্রাহক পানি পাচ্ছেন। কিন্তু মিটার চালু না থাকায় তাঁদের পানির খরচ কত আসছে, তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। গ্রাহককে মিটার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ও পানির ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য ন্যূনতম পানির খরচ বাড়ানো হয়েছে। ওয়াসার মোট গ্রাহক ৬৩ হাজার ৫৪৫ জন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, এক যুগেরও বেশি সময় আগে ন্যূনতম পানির বিল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তখন পানির সরবরাহ কম থাকায় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিন্তু এখন তো গ্রাহক নিয়মিত পানি পাচ্ছে। এখন টাকা দিতে সমস্যা কোথায়? মাসে ৬৮ ইউনিট পানি খরচ হয় না এমন পরিবারের সংখ্যা হাতে গোনা।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পানির উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসার খরচও বেড়ে গেছে। ঋণ শোধেরও ব্যাপার আছে। এ জন্য সরকার পানির দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু পানির সঠিক বিল না দেওয়ার জন্য অনেক গ্রাহকই কারসাজি করে মিটার চুরি গেছে বলে ওয়াসাকে জানাচ্ছেন। এখন ন্যূনতম খরচ বাড়িয়ে দেওয়ায় সবাই মিটার ব্যবহার করবেন। তবে যদি কেউ প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাহলে তিনি লিখিত আবেদন করতে পারেন। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এটি যাচাইবাছাই করে দেখবে।
গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প চালু করা হয়। এর ফলে বর্তমানে ওয়াসা গ্রাহককে দিনে গড়ে ২৮-২৯ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারছে। এর আগে ওয়াসা পানি সরবরাহ করতে পারত দৈনিক ১৭-১৮ কোটি লিটার। চট্টগ্রামে পানির চাহিদা ধরা হয় দৈনিক গড়ে ৫০ কোটি লিটার।
ন্যূনতম পানির দাম বাড়ানো নিয়ে ওয়াসার যুক্তির সঙ্গে একমত নয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম ক্যাবের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বহুতল ভবনের মালিকের কাছ থেকে পানির প্রকৃত দাম আদায় করতে গিয়ে নিম্ন আয়ের ও একক পরিবারগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করল ওয়াসা। ওয়াসার উচিত সব গ্রাহকের মিটার চালু করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এতে যাঁরা পানি বেশি খরচ করবেন, তাঁরা বিল বেশি দেবেন। যাঁরা পানি কম খরচ করবেন, তাঁরা কেন বাড়তি বিল দেবেন? আগে ঘোষণা দিয়ে মিটার লাগানোর জন্য গ্রাহককে সময় দেওয়া উচিত ছিল।