বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ঘোড়ার আগে গাড়ি দুই দলে বিতর্ক তুঙ্গে
ঘোড়ার আগে গাড়ি দুই দলে বিতর্ক তুঙ্গে
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি ঘোষণার আগেই বড় দুই দলে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিতর্কের সূচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে সাবেক বিচারপতি কে এম হাসানের নাম বিএনপি প্রস্তাব করেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমন দাবি করায় নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে নানামুখী বক্তব্যের ডালপালা মেলেছে। কে এম হাসানের নাম দেয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ চায় না নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন হোক। রাষ্ট্রপতির সাথে গোপন যোগসাজশ আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের বিতর্ক অহেতুক, জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। সমঝোতা ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের যে আকাক্সক্ষা, তা সুদূরপরাহত হয়ে যাচ্ছে।
কাজী রকীবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সংবিধান অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে ৩১টি দলের সাথে পৃথক সংলাপ শেষ করেছেন। রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে বিএনপি সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর জোর দিয়ে নানা সুপারিশ তুলে ধরে। আওয়ামী লীগ আইন প্রণয়নসহ চার দফা সুপারিশের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবে বলে জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুটি বেশ কিছু দিন ধরে রাজনীতিতে প্রধান আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে দিন তিনেক আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কে এম হাসানের নাম বিএনপির প্রস্তাবে আছে, এমন দাবি করায় বিতর্ক ধূমায়িত হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ওবায়দুল কাদেরের এ দাবিকে সর্বৈব মিথ্যা অভিহিত করে বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জানা গেছে, সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপি ১০ জনের একটি তালিকা দিলেও দলের পক্ষ থেকে সে ব্যাপারে গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ রকম একটি গোপনীয় বিষয় সামনে নিয়ে আসায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও সমালোচনার মুখে পড়েন। বিএনপি অভিযোগ করে, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। অবশ্য এক দিন পর ওবায়দুল কাদের তার ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে বলেন, গোপন কথা জানতে বঙ্গভবনের আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বিএনপি নেতারা জেল-জুলুমের ভয়ে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছেন।
এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা দীর্ঘ দিন ধরেই আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে রাজনীতি করছেন। বিএনপি নেতারা জুলুমের ভয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কে এম হাসানের নাম বলে দেবেন, এ ধরনের বক্তব্য হাস্যকর। সস্তা-চটকদারি ছাড়া কিছুই নয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটির নাম ঘোষণা করবেন রাষ্ট্রপতি। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে যে প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল, এবারো ঠিক একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতে পারে। তবে এবার কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে। যুক্ত হবেন নারী সদস্যও। গতবার সার্চ কমিটিতে সদস্য ছিলেন চারজন। এতে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে প্রধান করা হয়। সেই সার্চ কমিটির অন্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ছিলেন। এবার সদস্য সংখ্যা পাঁচজন থেকে ৯ জন পর্যন্ত হতে পারে।
জানা গেছে, সার্চ কমিটি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্য নানা ধরনের সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। ইস্যুটি নিয়ে রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়িও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। তাই সার্চ কমিটি ঘোষণা নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ করা যুক্তিযুক্ত হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণেই আজ-কালের মধ্যে কমিটি ঘোষণা করা হবে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। সে হিসেবে সময়ও খুব কম। ঘোষিত সার্চ কমিটিকে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় দিতে হবে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে যোগ্য ব্যক্তিদের বাছাইয়ের জন্য। ফলে চলতি সপ্তাহেই সার্চ কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত।