মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করব: নতুন সিইসি
দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করব: নতুন সিইসি
পক্ষকাল ডেস্ক;
রাজনীতির জটিল সময়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়ে সাংবিধানিক এই দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালনের অঙ্গীকার করেছেন কে এম নূরুল হুদা।
ইসি নিয়োগের সার্চ কমিটির তালিকা থেকে সোমবারই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পরবর্তী সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব নূরুল হুদাকে নিয়োগ দেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাষ্ট্রপতি আমাকে সাংবিধানিক এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ায় কৃতজ্ঞ। সাংবিধানিক দায়িত্বটি আমি নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও আইন মেনে পালন করব।”
সিইসির সঙ্গে চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগও দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন- সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে।
পাঁচ সদস্যের ইসিকে নিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করবেন বলে জানান ৬৯ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হুদা।
বিদায়ী কমিশনকে নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসা বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগেই বলে আসছিল, তারা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবে।
নবগঠিত এই ইসির অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। গত সংসদ নির্বাচনে সব দল না আসায় তাদের ভূমিকার উপর চোখ থাকবে সবার।
তবে নিয়োগ পেয়েই রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নিয়ে কথা বলতে নারাজ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রজন্মের ১৯৭৩ ব্যাচের কর্মকর্তা নূরুল হুদা।
“আমি আগে দায়িত্ব নিই; তারপর সবার সঙ্গে বসব। সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আপনাদের সঙ্গেও কথা বলব।”
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আলোচনা, মতামতকে গুরুত্ব দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এক যুগ আগে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া নূরুল হুদা পটুয়াখালীর বাউফলের বাসিন্দা। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পটুয়াখালী জেলা পাক হানাদার মুক্ত করতে ভূমিকা ছিল তার।
১৯৪৮ সালে জন্ম নেওয়া নূরুল হুদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যা বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের আবাসিক এ ছাত্র ১৯৭২-৭৩ সালে হল ছাত্র সংসদে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই বরিশাল অঞ্চলে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নূরুল হুদা। পরে জাসদের সঙ্গেও সম্পৃক্ততা ছিল তার।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে নূরুল হুদা বলেন, “৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের নেতৃত্বে আমরা অংশ নিই। আমরা প্রাণপণ লড়ে ৯ ডিসেম্বর পুরো পটুয়াখালী জেলা দখলে নিই। যুদ্ধের পরে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরি।”
নূরুল হুদা ১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সরকারি কর্মকমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরের ৩০ জুলাই প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন।
চাকরিজীবনে ফরিদপুর ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ছাড়াও কিছু মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কুমিল্লার জেলা প্রশাসক থাকার সময়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেরুয়ারি এবং ১২ জুলাই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন নূরুল হুদা।
এছাড়া তিনি এরশাদ আমলে ১৯৮৫ সালে উপজেলা নির্বাচন এবং ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালের ২৪ জুলাই বিএনপি ক্ষমতায় এসে কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে নূরুল হুদাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। সর্বোচ্চ আদালত পরে বিএনপি সরকারের ওই আদেশ বেআইনি ঘোষণা করে। পরে তিনি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন এবং সব ধরনের আর্থিক সুযোগ সুবিধা লাভ করেন।
সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন নূরুল হুদা।
সরকারি চাকরি শেষে ২০১০ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে, ছিলেন ৫ বছর। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি।
স্ত্রী হুসনে আরার সঙ্গে নূরুল হুদার সংসারে তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে প্রকৌশলী, কানাডায় রয়েছেন। মেজ মেয়ে বুয়েট থেকে পাস করে পিএইচডি শেষে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে থাকেন। ছোট মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠ চুকিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে কানাডায় রয়েছেন।