মুক্তিযোদ্ধা র্সূয বানুর জবানী
শফিকুল ইসলাম কাজল ঃ
তহন ধরেন যুদ্ধু শুরু হইছে আঠারো উনিশ দিন হইলো মোটামুটি। তহন আমরা হইলো কুইরা ঘরে আছিলো আর অইলো নৈাকা। আমরা নৈাকা দিয়া গেছি পট্টি আমগো নৈাকাডা যহন ঘাটে ভিরলো তহন ঐ পট্টি থিগা হুনা গেলো যে ইয়া আইতাছে মেলেটারি আইসতাছে আমগোর সিরাজগঞ্জে। তো আমি বালোক হেসুম। তো আমরা আনেক দিনে তো মানুষ জন সব আনেক অনেক যায়গায় চইলা গেলো। তো সেদিন রাইত তিনটার সময় ঐ ইয়াত আইলো আমগো সিরাজগঞ্জে যহন গাড়ি আইলো। ঐ দিন আমগোরে বিকাল বেলা নিয়া নেস্তা গলার উপরে কইরা যাইতকি হাতে কইরা নিয়া থুইয়া আইছে। আমরা দুই বোন সেইখানে চইলা গেছি, আমার বাই, বোন, বাই সবাই। কিন্তু আমার মা আমার বাপ বাড়িতে ছিলো, আমার চাচা চাচি বাড়িতে ছিলো। থুইয়া আসার পরে ঐ বাড়িত যখন
আগুন দিছে আমগো বাড়িত আগুন দিছে আমার বইন অইলো তহন পোলা পোয়াতি। আমার বইনের পেডে বাচ্চা। ঐ সময় তার পেন উটছে বেথা উডার পরে আমার বইনরে হেরোম কইরাই নিয়া গেছে খাগা যায়া হাইরা যহন আমাদের এইখানে আগুন দিছে ঘর বাড়িতে তহন আমার বইন খাগা ময়দানের বাড়ির ঘরের পিছনে অর বাচ্চা অইছে। হওয়ার পরে যেই গ্যারামে আমি মেলা দিন থাকছি হেয়ানে সব পুইরা মুইরা মানুষ জন মাইরা
গ্যারামের সব মেলা মাইরা হালাইছে। আমগোরে বাড়িত নিয়া আইলো আমার বাপজান বাড়িত নিয়া আইলো আসার পরে মনে করেন যে যুদ্দু আছিলো হইলা বাড়ি হেই যুদ্দুর পরের দিন অনেক মেলেটারি যাওয়া আসা কইরলো। ঐ পরের দিন আজগরের বাড়িত দুই জন মারাগেল। পরের দিন মেলেটারিরা আইসা আমগো গ্যারামের সামনে দিয়া বিলের মধ্যে এরম গোলা গুলি কইরলো গুলি আইসা আইসা অনেক গোলাগুলি করছিলো। পরে ভাইরে আমরা ভয় কইরা আমগো লগে ছোট বাচ্চা। মুক্তি যুদ্ধারা অনেক মারামারি কইরা মোরছিল মেলেটারিরাও মোরছিল। মেলেটারিরা দেকবার গেল যায়া হায়রা আমগো মধ্যে আইসা হায়রে গোলাগুলি করছে হেই গুলিতে আমাগোর কুনসুমির ভাই মারা গেছে। তো তহন নুইলছা পারার বাদশা আছিল ঐ বাদশা মিয়া মেলেটারি নিয়া আমগো বাড়ির ভিতর ঢুকছে। কয় গুলি কোরবো না ও তো বেডা ছওয়াল না মাইয়া ছাওয়াল, কয় মুক্তি যুদ্ধা, কয় না মাইয়া ছওয়্ল মানুষ হেসুম আমাক নিয়া আইলো টাইনা। আমার পোলারে আমগো কইলো হোন তোমরা সব পানির তোন উইট্টা আসো ভয় করোকে তোমরা ঘরের ভিতর থাকপা কেউ যেন বাইরে যয়া না। তারপর হেই পরের দিন সবটি বাড়িত আছিলো। বাদশা ঐ আজাকার আছিলো বাদশা। তো আমরা পরের দিন না ঘরের ভিতর সব মানুষ আছিলাম। তিন জন মুরুব্বি আছিলো,আমরা চার জন যুবুতি মানুষ। তখন আমার বয়স বাইস মনেকরেন আমি তখন সিয়ানা একেবারে যুবক সিয়ানা। ফেরার পথে বারোটার একটার মতন বাজে হেসুম সরক দিয়া দল ভইরা যাইতাছে। যইতাছে কইলো যে কিছু কইবোনা আমরা সেই সাহসে আমরা ঘরের ভিতর সবটি থাইকলাম। বেড়ার মধ্যে, পোড়া টিনের মধ্যে দেকতাছি যে মেলেটারিরা নাইমা আমগো বাড়ির ভিতর আইতাছে, ইআল্লা ও মা মেলেটারি আইসতাছে। ও বিনা আমার মা কইলোকি একটু আউলে থাকতে। আমার ভাই আপনের থিকা উচা সে কইরলোকি দরজায় আইসা দারাইলো, আমার বাবা ও দরজায় আইসা দারাইলো যে আইসতে না পারে ঘরের মধ্য। আমার বাবা বইসছে এই মুরায় ভাই বইসছে এই মুরায়। আর তারা কইরলোকি সেই টাইমে ঘরের ভিতর গেল যায়া হায়রা আমার বোনের যে, আমার বইন যেন আইসতাছে বেকটিতো আমরা ঝাইরা খারাইয়া রইছি ভয় কইরা। ছাওয়ালরে যাইয়া কুলে তুললো যে গ্যাদা বাচ্চা নিয়া তো আমারে নিবোইনা। যহন আমার বইন ছাওয়াল কোলে তুললো আমার বইনরে ছওয়াল হরাইয়া রাখতে কইতাছে,আমার মারে নিবার কইতাছে আমার মাও নিতাছেনা, তহন না মেলা খন ই করার পরে আমার মায়েরে বন্দুক দিয়া গুতা মাইরলো তাও মা নিলো না, তহন ছাওয়াল টাইনা দোলনার মধ্যে থুইলো, থুইয়া হাইরা মনে করেন যে আমার বইন কইলো হবায় ডেলিভারি হইছে, তারপর ও নিয়া গেল। নিয়া যাওয়ার পরে মনে করেন যে, এইযে এই বইন হের নাম হইলো আয়সা নিয়া গেল নিয়া যওয়ার পরে, তারপরে ফের নিয়াগেল আমারি ঘরের মধ্যে টাইনা হেইচরা হেই ঘরের মধ্যে নিয়া গেল হেই ঘরের চাইরো পাশে বেড়া। তারপর কি কইরলো যাতি কলে ঐযে যাতা লাগছেনা ফুচকি দিয়া দেহে যে আমি, আমার হাত টাইনা ধরছে আমি বাপ তাও আমারে মানে নাই। আমগো বাড়ির মধ্যে যে নিয়া গেছে, তিনডা ঘর আছিলো আমগো, ও আল্লা।
আমি তাত বুনাছি ম্যায়া মানুষ হইয়া মেসিন চালাইছি, দর্জির কাম করছি, বাশের কাম করছি। তারবাদে আমগো কেউ খোজ খবর নেয় নাই। আমরা কিছু পাইও নাই, আমগো নিয়া যে এক খানে করার তাও কেউ করে নাই। এতদিন মনেকরেন যে আমরা ঝারে জঙ্গলে যতই কষ্ট কইরা আমরা জীবন যাপন কাটাইছি। মানুষ জানে যে বাংলাদেশে একটা ধুলাও আছিলো না। বাংলাদেশ পুরা মাটি হইছিলো রেল ইষ্টিমার সব কিছু ধুলাউরা আমগো চোহে দেহা। খালেক মালেক ইষ্টিমার আছিলো হেই নদীত ডাবইছে, আজ পর্যন্ত খুইজা পায় না। আমার মা বাপ কই গেছে না গেছে হের খবরও নিবার পারি নাই তাইলে মনেকরেন যে কত্ত ওত্তাচার আমার উপুর দিয়া গেছে, কত্ত অশান্তিতে আমরা থাকছি, ও আল্লা দয়াল।