খানসামায় কাঁঠাল গাছে ফল ধরা শুরু
খানসামা দিনাজপুর:
কাঁঠাল শুধু একটি সুস্বাদু আর সু-পরিচিত ফলই নয়। এটি বাংলাদেশে জাতীয় ফল। এছাড়াও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে কাঁঠাল গাছ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আর এসব কাঁঠাল গাছে জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ফুল আসা শুরু হলেও কিছু কিছু আগাম ফলনশীল কাঁঠাল গাছে ফুল আসে সময়ের অনেক আগেই। খানসামা উপজেলা হাসপাতাল চত্ত্বরে এমনই একটি কাঁঠাল গাছে প্রায় দেড়শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত শতাধিক কাঁঠাল ধরতে দেখা গেছে। হাসপাতালের একজন কর্মচারী জানায়, প্রতি বছর গাছটিতে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আগাম কাঁঠাল ধরে এবং এসব কাঁঠাল আগেই পেকে যায়। পরে মৌসুমের সময় আবারও কাঁঠাল ধরে। সব মিলে গাছটিতে প্রায় ২শ থেকে ৩শতাধিক কাঁঠাল ধরে।
কাঁঠাল ভারত উপ-মহাদেশে উৎপত্তি স্থান হিসেবে বিবেচিত বলে বাংলাদেশ, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণ ভারত, বিহার, মিয়ানমার, মালয় এবং শ্রীলংকায় কাঁঠাল গাছ বেশি পরিমাণে দেখা যায়। তবে ব্রাজিল, ওয়েস্টে ইন্ডিজের জ্যামাইকা দেশে সীমিত আকারে কাঁঠাল জন্মে থাকে বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এজামুল হক ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মজিবর রহমান জানান। তারা বলেন, কিছু কিছু গাছ আছে সময়ের আগেই ফল আসে। আবার কতগুলো গাছ আছে প্রায় সারা বছর কাঁঠাল ধরে। কিন্তু এসব কাঁঠাল মৌসুমী ফলের মত ততটা স্বাদ হয় না।
বাংলাদেশের যে সব কাঁঠাল পাওয়া যায় তার মধ্যে গালা, খাজা এবং হাজারী কাঁঠাল উল্লেখযোগ্য। তবে ভারতসহ অন্যান্য দেশে রসখাজা, রুদ্রাক্ষি, সিঙ্গাপুর, সিলোন, বারোমাসী, গোলাপগন্ধা, চম্পাগন্ধা, পদ্মরাজ কাঁঠাল রয়েছে। কাঁঠালে এসব জাত ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০০৮ সালে বারি কাঁঠাল-১ এবং ২০১০ সালে বারি কাঁঠাল-২ নামে দুটি উচ্চ ফলনশীল জাতের কাঁঠাল উদ্ভাবন করে।
কাঁঠাল এমন একটি ফল যার প্রতিটি অংশই কোন না কোন কাজে লাগে। কাঁঠালের কোয়া খাওয়ার পর বীজ ও ছোট কাঁঠাল ফল তরকারি হিসেবে জনপ্রিয় এবং কাঁঠালের খোসা গরু-ছাগলের পুষ্টিকর পছন্দের খাদ্য।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আহাদ বকস জানান, এছাড়াও কাঁঠালে খাদ্যআঁশ, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়া, ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ, ভিটামি-এ, ভিটামিন-সি, থায়ামিন (ভিটামিন বি১) রিবোফ্লেবিন (ভিটা বি২), নায়াসিন (ভিটা বি৩), ভিটামিন বি৬ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এছাড়াও কাঁঠাল খেলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, নার্ভাসনেস, হাঁপানী, হৃদ রোগ, আলসার, ক্যান্সার, ব্লাড প্রেসার, বার্ধক্য ও ডায়রিয়া রোধ করে এবং হাড় গঠন ও শক্তিশালীকরণে বিশেষ ভাবে কাজ করে।
বহুল পরিচিত এই ফলটিকে তামিল ভাষায় বলা হয় ‘মুক্কানী’। আর ইংরেজিতে বলা হয় ‘জ্যাকফ্রুট’। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘অ্যার্টোকার্পাস হেটেরোফাইলাস’। তবে কাঁঠালের আমসত্ব হয় না এমন কথা লোকে মুখে মুখে প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে কাঁঠালের কোষ থেকে রস নিঙড়ে শুকিয়ে আমসত্বের মত ‘কাঠালসত্ব’ তৈরি, থাইল্যান্ডে কাঁঠালের চিপস, কাঁঠালের ছোবড়ায় পেকটিন থাকায় তা থেকে জেলি এবং শাঁস থেকে কাঁচা মধু আহরণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।