রবিবার, ২৬ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » জনগণের জানমালের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ সতর্কতা
জনগণের জানমালের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ সতর্কতা
পক্ষকাল ডেস্ক : একের পর এক জঙ্গি আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে পাল্টা হামলাকে নতুন কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে জঙ্গিরা।
মরিয়া হয়ে অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই জঙ্গিরা পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে অভিযানকালে পরপর দু’টি হামলাসহ গত দুই সপ্তাহে এ রকম অন্তত চারটি ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের পাল্টা হামলায় পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার পর জঙ্গিগোষ্ঠী মরিয়া হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এ কারণে সর্বশক্তি প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে জঙ্গিরা।
এই অবস্থায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিলেটে জঙ্গিদের পাল্টা হামলার পরপরই শনিবার দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস বিষয়টি নিশ্চিত রেছেন।
সংবাদমাধ্যমকে সহেলী ফেরদৌস বলেন, সারাদেশে এসপিদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। সবাই যেন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিলেটের শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহল’ নামে একটি ভবনে তিন দিনব্যাপী অভিযানের মধ্যেই ঘটনাস্থলের পাশেই শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা হামলা চালায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার একটি পুলিশ বক্সের সামনে আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। পরপর দু’দিন জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও জঙ্গিদের পাল্টা হামলার কারণে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে পুলিশ সদর দফতর।
শনিবার সন্ধ্যায় তিন জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পুলিশ সদর দফতর থেকে বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশি নাগরিক, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষ স্থাপনার সামনে জোর নজরদারি করাসহ দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিরা সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট না করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তাদের বিশেষ ক্ষোভ রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের কাজে বাধা হিসেবে মনে করে তারা। এজন্য ‘তাগুত শক্তি’র ওপর আক্রমণের চেষ্টা করছে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ মার্চ কুমিল্লার চান্দিনা থেকে গ্রেফতার হওয়া আহমেদ আজওয়াদ ইমতিয়াজ তালুকদার ওরফে অমি জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য দিয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভাগীয় এবং জেলা শহরে তাদের একাধিক আস্তানা রয়েছে। একইসঙ্গে তাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার নির্দেশনার কথাও জানিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, জঙ্গিদের মধ্যে পাল্টা হামলার এক ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পৃথক দু’টি অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানের একদিন পরই ১৭ মার্চ রাজধানীর আশকোনায় র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরের ভেতরে ঢুকে আত্মঘাতী হামলা চালায় এক জঙ্গি।
এর এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ মার্চ ভোরে সিলেটের শিববাড়ির ওই বাসায় অভিযান চালানো হয়। ওই দিন রাতেই ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচত্বর এলাকায় আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ, শনিবার সিলেটে অভিযানস্থলের পাশেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণকে পাল্টা হামলা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।
ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার কারণে জঙ্গিরা কিছুটা মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে জঙ্গিদের একাধিক আস্তানায় অভিযানের কারণে তাদের শক্তি-সামর্থ্যও কমে এসেছে। এ কারণে জঙ্গিরা পাল্টা অ্যাটাক করে শক্তি-সামর্থ্য জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। এখনও শীর্ষ কয়েকজন জঙ্গি পলাতক রয়েছে, যারা পাল্টা হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিচ্ছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় যে জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা এখনও রয়েছে, তা মোটামুটি নিশ্চিত। কারণ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দু’টি আত্মঘাতীর ঘটনায় স্পষ্ট যে আশকোনা বা এর আশেপাশের কোথাও জঙ্গিদের আস্তানা রয়েছে। সেই আস্তানা থেকে বেরিয়েই তারা সম্ভাব্য টার্গেটে হামলা করতে গিয়েছিল।
কারণ অনেক দূর থেকে সুইসাইডাল ভেস্ট নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। একারণে উত্তরা-আশকোনা, দক্ষিণখান, উত্তরখানসহ আশেপাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে আস্তানার খোঁজ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের মধ্যে আত্মঘাতী হামলা চালানোর প্রবণতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে সবচেয়ে বেশি। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলছেন, জঙ্গিরা পুলিশকে ‘তাগুত শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে টার্গেট করছে। হামলাকারীরা আত্মঘাতী হওয়ার কারণে ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশি।
কারণ সন্দেহভাজন কারও শরীর তল্লাশি করতে গিয়ে যদি বিস্ফোরণ ঘটে, তাহলেও পুলিশ সদস্যরা হতাহত হতে পারেন। এ কারণে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে সন্দেহভাজনদের গান-পয়েন্টে রেখে তল্লাশি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।