সোমবার, ২৭ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » নৌকার পক্ষে বাহার ও আফজল খানের সমর্থকরা কাজ করছে
নৌকার পক্ষে বাহার ও আফজল খানের সমর্থকরা কাজ করছে
কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দুই অংশের পুরনো বিরোধ মিটে যাওয়ার দাবি করছেন নেতা-কর্মীরা। দুই নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন বাহার ও আফজল খানের সমর্থক কর্মীদেরকে প্রকাশ্যেই নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার পক্ষে প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে।
ঢাকা থেকে কেদ্রিয় যুব মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক অপু উকিলের নেত্রিত্তে কুমিল্লা ২২ নং ওয়ার্ড নৌকার প্রার্থী সীমা পক্ষে প্রচারনার সময় এই বিষয়ে জানতে চাইলে ত্নিনি বলন আমরাআমাদের প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনার নৌকা ,বঙ্গবন্ধুর নৌকার জন্য জনগনের কাছে দুয়ারে ভোট চাচ্ছি আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নাই আমরা একতা বদ্ধ ।
কুমিল্লায় নির্বাচন আসলেই ভোটের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিযোগিতা নিয়ে যত না আলোচনা হয়, তার চেয় বেশি কথা হয় বাহার ও আফজলের দ্বন্দ্ব নিয়ে। এই দুই নেতা একজন প্রার্থী দলে অন্যজন বিরোধিতা করেছেন, আর ব্যাপক জন সমর্থন থাকলেও ভোটের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে এসেছে কমই।
২০১২ সালের কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রথম ভোটে আফজল খানের বড় ব্যবধানে হারে একটি কারণ হিসেবে ধরা হয় বাহারের নীরব বিরোধিতাকে। ২০১৪ সালে বাহার যখন সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট করেছিলেন, তখন আবার আফজল খানের ছেলে নির্বাচন করেছেন স্বতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে।
এবার আফজলের মেয়ে সীমাকে নৌকা প্রতীক দেয়ার পরই কথা উঠে, বাহার-আফজলের দ্বন্দ্ব ভোটে প্রভাব ফেলে কি না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলেন, দুই নেতার দ্বন্দ্ব মিটবে।
এরপর বাহারকে ডেকে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে বারবার পাঠানো হয়েছে কুমিল্লায়। তারা দুই পক্ষের সঙ্গে বসেছেন, কথা বলেছেন। আর এই প্রক্রিয়াতেই বিরোধ মিটেছে বলে দাবি করছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, প্রচার শুরুর পর শুরুতে সীমার পক্ষে বাহার সমর্থিত কর্মীদের অংশগ্রহণ ছিলো না। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্র পাল্টেছে। এখন পুরোদমে তারা নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘প্রথম দিকে দুই নেতার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কর্মীরা মাঠে নেই শুনে আমরা চিন্তিত ছিলাম। পরবর্তিতে আমরা যখন এসে কাজ শুরু করলাম তখন সবাই ভেদাভেদ ভুলে মাঠে নেমেছে। আশা করি নির্বাচন পরবর্তি সময়েও এ ঐক্য বজায় থাকবে।’
আরেকজন নেতা বলেন, ‘কুমিল্লা মহানগরের আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কমিটি নেই। সম্মেলন না হওয়ায় সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতারাই পদ-পদবি নাই। আমরা আসার পর তাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের আশ্বস্ত করেছি। নির্বাচনের পরেই এ কমিটি হবে। এতে যোগ্য, ত্যাগী এবং দলের প্রতি অনুগতদের মূল্যায়ন করা হবে।’
শনিবার সকালে নগরীর কাপ্তান বাজার এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, মেয়রপ্রার্থী সীমার পক্ষে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছেন বাহারের বড় মেয়ে তাহসিন বাহার সূচি।
নির্বাচনী কাজে এমপি বাহারের সহযোগিতা পাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নে- আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ‘এই যে প্রচারণার বাহার চাচার মেয়ে সূচি আসছে। যদি আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব থাকতো তাহলে তো সে আসার কথা না।’
এ সময় তাহসিন বাহার সূচিও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কুমিল্লা জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা কুমিল্লায় ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনী প্রচার ও প্রচারণা চালাচ্ছি। এখানে আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। আমরা নৌকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ।’
কুমিল্লা মহানগর যুবলীগ নেতা আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লায় বাহারের অনুসারী হিসাবেই পরিচিত। তিনিও এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পেলেও তিনি সীমার পক্ষেই সক্রিয়। রিফাত বলেন, ‘আমরা নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছি। এখানে ব্যক্তি মুখ্য না, দলই প্রধান।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আমি সংসদ সদস্য থাকায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছি না। আমার মেয়ে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন এবার আপনি বুঝে নেন, আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই।’
আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার করছি। আমরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছি। যেখানে আমরা অনেক সাড়া পাচ্ছি।’কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় দল সেখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকতে পারে কিন্তু নৌকার প্রশ্নে কোন প্রতিযোগিতা নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণা করছি। এতে আমরা পজিটিভ রেজাল্ট পাবো। আর বাহার সাহেবের মেয়ে যে প্রচারণায় নেমেছে সেটাকো আমরা পজিটিভলি দেখছি।’