বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » খালেদা জিয়ার জঙ্গিপক্ষ অবলম্বন কৌশল নয়, আদর্শিক
খালেদা জিয়ার জঙ্গিপক্ষ অবলম্বন কৌশল নয়, আদর্শিক
পক্ষকাল সংবাদঃ বেগম জিয়ার জঙ্গিপক্ষ অবলম্বন কোনো কৌশলগত অবস্থান নয়, এটি আদর্শিক অবস্থান।
বেগম খালেদা জিয়া দুটি জিনিস প্রমাণ করেছেন। তিনি জঙ্গিদের দোসর, সঙ্গী ও প্রতিনিধি, ভয়ঙ্কর খুনীদের সিন্ডিকেটপ্রধান এবং সেই সাথে পাকিস্তানের নব্যদালাল।
-জঙ্গি উৎপাদন ও জঙ্গি উৎপাত বন্ধে জঙ্গিদের যেমন নির্মূল ও ধ্বংস করতে হবে, তেমনি জঙ্গি প্রতিনিধি খালেদা জিয়াকেও রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিদায় জানাতে হবে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানবেন। আশা করি সবাই ভাল আছেন, সুস্থ আছেন। বেশ কিছু দিন পরে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হবার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগছে।
অগ্নিঝরা মার্চের শেষাশেষি এ দিনে আমি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সকল শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। সেই সাথে সাম্প্রতিক সময়ে চলমান জঙ্গিবিরোধী অভিযানে শহীদ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের আত্মার মাহফিরাত কামনা করছি, তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং গুরুতর আহত র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্ণেল আবুল কালাম আজাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। একইসাথে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সাফল্যের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সকল সামরিক ও বেসামরিক সংস্থার সদস্যদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আবার ঠিক এ সময়েই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে ‘জঙ্গিতোষণ’ নীতি অনুসরণ করছেন, ২৫ শে মার্চ গণহত্যা দিবসকে অস্বীকার করে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পন্থা নিয়েছেন ও একাত্তরের মহাযুদ্ধে পাকিস্তানীদের গণহত্যার অপরাধের দায় মোচনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করছেন, তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারা লক্ষ্য করেছেন যখন ১০১ জনকে হত্যার অভিযোগে জঙ্গিহোতা মুফতি হান্নানের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, জঙ্গি হামলার তদন্ত ও বিচারে দন্ডিত জঙ্গিরা ফাঁসির অপেক্ষায় দিন গুনছে, জঙ্গিদের বিষয়ে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি (জিরো টলারেন্স নীতি) অনুসরণ করে সরকার একে একে জঙ্গিদের ঘাঁটি-ঘুঁটি চিহ্নিত করে ধ্বংস করে দিচ্ছে, জঙ্গি হামলা ঘটার সম্ভাবনা তিরোহিত করতে আগেই প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিচ্ছে, অর্থাৎ ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর’ পদ্ধতি অবলম্বন করে জনজীবন নিরাপদ রাখার সর্বাত্মক চেষ্টায় দিনরাত পরিশ্রম করছে, ঠিক তখনই বেগম খালেদা জিয়া জঙ্গিদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে তিনি বলছেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত করা উচিত’। তিনি বলছেন, ‘গণতন্ত্রের ঘাটতি পূরণ করবে জঙ্গিবাদ’। জনগণ ও গণমাধ্যমের চোখের সামনে জঙ্গিদের বাড়ির ভেতর থেকে বোমা-গ্রেনেড ছোঁড়া হচ্ছে, আর তিনি বলছেন ‘তদন্ত করে দেখুন’।
প্রিয় বন্ধুরা, আমি এতে অবাক হইনি। কারণ, এটি তার কোনো নূতন অবস্থান নয়। হেফাজতে ইসলামের জঙ্গি তান্ডবে তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে জঙ্গিদের রসদ সরবরাহে লিপ্ত ছিলেন, দেশকে সংবিধানের বাইরে ঠেলে অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের জন্য পুড়িয়ে মানুষ হত্যার চক্রান্ত করেছেন, দেশের ওপর আগুনযুদ্ধ চাপিয়েছেন, যখনই জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলেছে, তখনই ‘তারা’ জঙ্গি কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে ঃ
-জঙ্গিদের প্রতি খালেদা জিয়ার এই সহমর্মিতা কেন ?
-বেগম জিয়া কি জঙ্গিদের নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান ?
-জঙ্গি সমর্থন ছাড়া কি খালেদা জিয়া ও তার দল অসহায় ?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, গণতন্ত্রের ঘাটতির জন্য যদি জঙ্গিবাদের প্রকোপ বাড়ে, তবে খালেদা জিয়ার আমলে যে শায়খ আব্দুর রহমান বা বাংলা ভাইয়ের মতো জঙ্গিদের উত্থান হয়েছিল, তখনও কি গণতন্ত্রের ঘাটতি ছিল ? -আসলে জঙ্গিবাদের সাথে গণতন্ত্রের বা ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের নয়, একটি বৈশ্বিক সমস্যা। মনে রাখা দরকার যে, ইউরোপ-আরেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে যেখানে গণতন্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই, সে দেশগুলোও ক্রমাগত জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হচ্ছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইন্দোনেশিয়াসহ মুসলমান প্রধান দেশগুলোতেও যেখানে ইসলাম চর্চার কোনো ঘাটতি নেই, সেখানেও জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটছে। তাই সমগ্র বিশ্বের সাথে এই সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। আর এ মোকাবিলায় খালেদা জিয়া ছাড়া দেশের সবাই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সে কারণেই বেগম জিয়ার মুখে জাতীয়ভাবে জঙ্গি মোকাবিলার কথা মানায় না।
মনে রাখতে হবে, জঙ্গিবাদ একটি রাজনৈতিক প্রপঞ্চ। এটি একটি মনগড়া ব্যবস্থা যা গায়ের জোরে, শক্তি প্রয়োগ করে চাপিয়ে দেয়া হয়। জঙ্গিরা ধর্ম মানেনা, দেশ-জাতি মানে না। এরা ঈদের দিন, পূজোর দিন হামলা করে, মসজিদে-মন্দিরে-গীর্জা প্রার্থনারত মানুষ হত্যা করে। লক্ষ্য করে দেখবেন এরা যতনা অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যা করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মুসলমানদের হত্যা করেছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার মাস অগ্নিঝরা মার্চে তারা আক্রমণ-চক্রান্ত করে। দেশের জাতীয় দিবসগুলোতে হামলার অপচেষ্টা চালায়। এরা দেশবিরোধী, জাতিবিরোধী, ধর্মবিরোধী, গণতন্ত্রবিরোধী। আর সেই জঙ্গিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছেন, প্রতিনিধিত্ব করছেন বেগম খালেদা জিয়া।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বেগম জিয়া ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসকে অস্বীকার করেছেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ নিরস্ত্র হাজার হাজার বাঙালিকে রাতের আঁধারে নারকীয় হত্যা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত হানাদার পাকিস্তানী-রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী যে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করেছে, ইতিহাসের সেই জঘন্যতম গণহত্যাকে তিনি অস্বীকার করেছেন। বাঙালি জাতির প্রাণদানকে অস্বীকার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করেছেন। কেন ?
কারণ, তিনি হানাদার পাকিস্তানী-রাজাকার-আলবদর-আলশামসদেরই দোসর। জিয়াউর রহমান যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেছেন, বেগম জিয়া তেমনি তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছেন দেশের পতাকা। আজ যখন পুরো দেশ ও জাতি গণহত্যা দিবস পালন করছে, বেগম জিয়ার অন্তর কাঁদছে সেই হত্যাকারীদের জন্য। গণহত্যা দিবসকে অস্বীকার করার মানে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা। বেগম জিয়া আসলে একাত্তরে মহাযুদ্ধে পাকিস্তানীদের গণহত্যার অপরাধের দায় মোচনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। জামাতে ইসলামী ছিল পাকিস্তানীদের প্রত্যক্ষ গণহত্যার শরিক আর খালেদা জিয়া হচ্ছেন পাকিস্তানের নব্য দালাল ও প্রতিনিধি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনাদের মাধ্যমে জাতির কাছে আমার প্রশ্ন, জাতির ইতিহাস যে মানেনা, ৩০ লক্ষ বাঙালির আত্মাহুতিকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করে, ইতিহাসের জঘন্যতম নির্মম গণহত্যাকে যে অস্বীকার করে, ক্ষমতার লোভে যে দেশের ওপর আগুন যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যায় ইন্ধন যোগায়, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের যে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করে, গণতন্ত্রের রাজনীতিতে তার অংশগ্রহণের কোনো অধিকার থাকে কি না ? –আমরা মনে করি, এমন দল বা ব্যক্তি যারা জঙ্গির সঙ্গী, তারা সন্ত্রাসের অপরাধে অপরাধী এবং তাদের রাজনীতির বাইরে থাকা উচিত।
বেগম খালেদা জিয়া দুটি জিনিস প্রমাণ করেছেন। তিনি জঙ্গিদের দোসর, সঙ্গী ও প্রতিনিধি, ভয়ঙ্কর খুনীদের সিন্ডিকেটপ্রধান এবং সেই সাথে পাকিস্তানের নব্যদালাল। আর তাই জঙ্গিদের যেমন নির্মূল ও ধ্বংস করতে হবে, তেমনি জঙ্গি প্রতিনিধি খালেদা জিয়াকেও রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ বিদায় জানাতে হবে। দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও শান্তির প্রয়োজনে এর কোনো বিকল্প নেই।
বেগম জিয়ার জঙ্গিপক্ষ অবলম্বন কোনো কৌশলগত অবস্থান নয়, এটি আদর্শিক অবস্থান। জিয়াউর রহমান রাজনীতিতে রাজাকার-জামাতে ইসলামীদের আমদানী করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বেগম জিয়া একাত্তরের খুনীদের পক্ষ নিয়েছেন, দলে স্থান দিয়েছেন, জামাতের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছেন, একুশে আগষ্টের খুনীদের রক্ষার চেষ্টা করেছেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য দেশের মানুষের ওপর ৯৩ দিনের আগুনযুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছেন। তাই মুখে তিনি যাই বলুন না কেন, জঙ্গিদের বাঁচানোই তার আসল উদ্দেশ্য। জঙ্গি উৎপাতকে যারা গণতন্ত্রের ঘাটতি বা ধর্মের ঘাটতি বলছেন, তাদের জন্য বলছি, সত্যিটা হলো এই যে, জঙ্গি নির্মূলের সাথে সাথে জঙ্গির লালন-পালনকারীদেরও ধ্বংস করা গেলেই কেবল জঙ্গি উৎপাদন ও জঙ্গি উৎপাত বন্ধ হবে।