রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » রাজনীতি » তিস্তাচুক্তি: মোদির মুখের কথায় সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে
তিস্তাচুক্তি: মোদির মুখের কথায় সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে
ডেস্ক পক্ষকাল : তিস্তা বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মৌখিক আশ্বাসেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যে বলেছেন ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমার সরকার এবং শেখ হাসিনার সরকার তিস্তা পানি বণ্টন সমস্যার আশু সমাধান করতে পারবে এবং করবে।’
কিন্তু বাংলাদেশের অনেক চেষ্টার পরেও তার (মোদির) এ মৌখিক বক্তব্য দুদেশের যৌথ লিখিত বিবৃতিতে সংযুক্ত করতে রাজি হয়নি ভারত।
দুই সরকারের যৌথ লিখিত বিবৃতির ৪০ নন্বর প্যারাতে বলা হয়েছে- ‘২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুপক্ষ একমত হয়েছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি নিষ্পত্তির করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুনর্ব্যক্ত করেন যে,‘এই চুক্তির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তার সরকারের সঙ্গে জড়িত সবার সঙ্গে কাজ করছেন।’
বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির আজকের (শনিবার)বক্তব্য দুদেশের যৌথ বিবৃতিতে সংযুক্ত করতে চেয়েছিল কিনা, জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘যৌথ ইশতেহার আগেই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কোনও দেশের প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) যখন তার বিবৃতিতে অন রেকর্ড কিছু বলেন,তখন সেটাকে এখানে-ওখানে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না।’
দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের পরে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি, গঙ্গা ব্যারাজ এবং অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবার অনুরোধ করছি।’
উল্লেখ্য,তিস্তাচুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে ছয় বছর আগে এবং ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এটি স্বাক্ষর হওয়ার কথা ছিল।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চরম বিরোধীতার কারণে সেসময় এটি স্বাক্ষর করা যায়নি।
এরপর গত ছয়বছর ধরে ভারতের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুধু আশ্বাসই দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে এবারও তিস্তা চুক্তি কবে হবে,ভারতের কাছ থেকে এ বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা আদায়ের চেষ্টা করেছিল ঢাকা। কিন্তু সেটি সফল হয়নি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন,শেখ হাসিনা শীর্ষ বৈঠকে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়াতে পানি নিয়ে সবার একসঙ্গে কাজ করা উচিৎ। তিনি তিস্তাচুক্তি করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করেছেন। এবং অববাহিকাভিত্তিক পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জোরালো সহযোগিতা আশা করে বাংলাদেশ।
গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত গঙ্গা ব্যারাজের বিষয়ে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই প্রধানমন্ত্রী এবং আশা করছেন, এ বিষয়ে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ শুরু করবে এবং সহসা একটি ডিজাইন তৈরি করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘গঙ্গা ব্যারাজের যৌথ কারিগরী টিম এ বিষয়ে একটি গবেষণা করবে এবং আমরা আশা করছি, এ টিম সহসাই স্টাডি করার জন্য বাংলাদেশে আসবে, যার ওপরে ভিত্তি করে ডিজাইন তৈরি করা হবে।’
গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে লিখিত বিবৃতিতে একটি প্যারা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই নেতা দুদেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল টিমকে দ্রুত বৈঠকের জন্য নির্দেশ দেবেন।
সরকারি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এরআগে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ‘দ্রুত বৈঠকের’ স্থলে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়ে দর কষাকষি করেছিল।কিন্তু ভারত তাতে রাজি হয়নি।
শেখহাসিনা ও মমতা বন্দোপাধ্যয়ের মধ্যে কথা হয়েছে কিনা, পররাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কথা হয়েছে। আমরা আশা করছি, ভারতের রাষ্ট্রপতি আগামীকাল যে নৈশভোজ দিচ্ছেন সেখানে তিনি থাকবেন।’