মার্চেই কি জাতীয় নির্বাচন?
পক্ষকাল প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে না শেষার্ধে তা নিয়ে ভাবনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। সংবিধান মোতাবেক ২০১৮ সালের শেষদিকেই নির্বাচন হওয়ার কথা। জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচনের পক্ষেও মত রয়েছে আওয়ামী লীগে। দলের কয়েকজন নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপকালে এমনটিই আভাস পাওয়া গেছে।
আলাপকালে জানা গেছে, সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট অংশ না নিলেও আগামী নির্বাচনে যে অংশ নেবে তা নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে দলের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিতের কৌশলের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের মার্চ অথবা এপ্রিলে নির্বাচনের পক্ষে মত রয়েছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মধ্যে। অন্যদিকে দলটির অন্য নেতারা নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০১৮-এর ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন।
দুপক্ষের নেতারা এ বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। ২০১৮-এর শেষার্ধের পক্ষের নেতারা মনে করেন, দেশে এমন কোনো বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে, নির্ধারিত সময়ের আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। সাধারণত দেশে কোনো জরুরি অবস্থা কিংবা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করলেই সংসদ ভেঙে নির্বাচন দেওয়া হয়। সংবিধান অনুযায়ী এই ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। কিন্তু তিনি কেন স্বাভাবিকতার বাইরে গিয়ে আগাম নির্বাচন দেবেন। তাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যখন বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি, তখন ওই নির্বাচনের পর একটা মধ্যবর্তী নির্বাচন বা আগাম নির্বাচনের দাবি উঠেছিল দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি পুরোটা ভিন্ন। বর্তমান সরকার সুষ্ঠুভাবে তিন বছরের বেশি সময় পার করে ফেলেছে। এখন প্রস্তুতি চলছে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের। এখন যদি আগাম নির্বাচন দেওয়া হয় তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল সেটা প্রমাণিত হবে। এ ছাড়া ২০১৮ সালের শেষদিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নির্বাচন হলে দক্ষিণবঙ্গের ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাবে। যে কারণে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে নির্বাচনের পক্ষে নন আওয়ামী লীগের এই অংশের নেতারা। এ জন্য সবদিক বিবেচনা করেই নির্ধারিত সময়েই নির্বাচনের পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের বেশিরভাগ নেতা।
অপরপক্ষের নেতাদের দাবি, ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগে যেভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেই তুলনায় অন্য সব দল পিছিয়ে। চলতি বছরের মধ্যেই সারা দেশের ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থীদের নিজ নিজ অবস্থান আরও শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও নির্বাচনী জনসভা করছেন সারা দেশে। এভাবে চলতি বছরের মধ্যে প্রস্তুতি গুছিয়ে আগামী বছরের প্রথমার্ধে নির্বাচন দিলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। কারণ হিসেবে এই পক্ষের নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা; বিশেষ করে তার চোখ এবং পায়ের অবস্থা সুবিধাজনক নয় বলে আমরা জেনেছি। দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা শেষে আগামী আট-নয় মাসের আগে তিনি রাজপথে নামতে পারবেন না বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগকে আরও চাঙ্গা করে নির্জীব বিএনপির বিপক্ষে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া সহজ হবে বলে ভাবছেন দলটির এ পক্ষের নেতারা। তা ছাড়া দিন যত যাবে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের আচরণের কারণে জনপ্রিয়তা তত কমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ করে উদ্বোধন করাটাও কঠিন বলে ভাবছেন এই পক্ষের নেতারা। এসব কারণেই ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেকেই।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি দেশে তৈরি হয়নি। তাহলে কেন নির্ধারিত সময়ের আগে নির্বাচন হবে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে রাজনৈতিক কৌশলের কারণে কিছুটা আগেও নির্বাচন হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক সাবেক সচিব রাশিদুল আলম এ বিষয়ে বলেন, ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের বতর্মান সংসদ সদস্য এবং আগামী নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী চলতি বছরের শুরু থেকেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকায় কাজে নেমে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও জেলা সফর করছেন, জনগণের কাছে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন, ভোট চাইছেন। আমি যেটা বুঝি তাতে নির্বাচনী প্রস্তুতির এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দলীয় কৌশল নির্ধারণ করা হবে।