বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বর্ষবরণের সঙ্গে ধর্মের সংঘাত নেই: প্রধানমন্ত্রী
বর্ষবরণের সঙ্গে ধর্মের সংঘাত নেই: প্রধানমন্ত্রী
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ বর্ষবরণকে ‘দেশের সব মানুষের উৎসব’ আখ্যায়িত এর সঙ্গে ধর্মকে জড়িত না করে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার গণভবনে হাতিরঝিলের দুটি বিনোদন প্রকল্প উদ্বোধনের সময় বর্ষবরণের প্রসঙ্গ তুলেন তিনি।
পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানকে ‘অনৈসলামিক ও হিন্দুয়ানি’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে কয়েকটি কট্টর ইসলামী সংগঠন। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানও জঙ্গি হামলার শিকারও হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে কোনো সংঘাতপূর্ণ নয় এবং এর সঙ্গে কেউ জড়িতের চেষ্টা যেন না করে। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসবমূখর পরিবেশে এই নববর্ষটা যেন উদযাপন করা যায়।
“কারণ এটা একটা উৎসব, যেখানে বাংলাদেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে একসাথে পালন করে।”
সম্রাট আকবরের সময় থেকে বাংলা নববর্ষ পালনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা নববর্ষটা বাঙালির। ঠিক এই অঞ্চলে আমরা বাংলা নবর্ষটা উদযাপন করি।
“এর সঙ্গে কোনো ধর্মের সংঘাতও নেই, কোনও ধর্মের সম্পৃক্ততাও নেই। এটা সম্পূর্ণ একটা বাঙালি সংস্কৃতি। বাঙালির চর্চা।”
নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাঙালির ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ও হালখাতার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকেই এটাকে নানাভাবে বিবৃত করতে চান। কিন্তু আসলে মূলত এর সঙ্গে কোনো ধর্মীয় সংঘাতের বিষয় নাই।”
নববর্ষের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলা নববর্ষের এ অনুষ্ঠানকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।
চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কোর ‘নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক’ ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গত বছর।
বিষয়টির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন যে, মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানে কিন্তু কোনো ধর্মীয় বিষয় না।
“এখানে আমাদের বাঙালির যে শিল্পকলা, মাটির পুতুল, হাতি, ঘোড়া, হাড়ি, পাতিল বানানো; নানারকম রং দিয়ে নানা কিছু সাজানো এটা আমাদের দেশে প্রচলিত।”
হাতিরঝিলের বিনোদন প্রকল্পের উদ্বোধনের পর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সে ময়মনসিংহ বিভাগের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “আজকে আমাদের একটা নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে। সেটা হল-জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস। যে করেই হোক এর হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে হবে।”
জঙ্গি-সন্ত্রাস কখনো ইসলামের পথ না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা এটা কখনো ইসলাম অনুমোদন করে না।
“কিছু লোক অপকর্ম ও আত্মঘাতী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মটাকে কলুষিত করছে, বদনাম করছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “সকলের কাছে এটাই চাইবো, যে করেই হোক এর হাত থেকে আপনাদের ছেলেপেলেকে মুক্ত রাখতে হবে।”
তিনি শিক্ষক ও ইমামসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের কাছে নিজ নিজ ছেলেমেয়েদের খবর রাখতে অনুরোধ করেন।
শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় শিক্ষাসহ বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, “সুন্দরভাবে জীবন-যাপন করতে যা যা প্রয়োজন আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। তাহলে বিভ্রান্তির পথে যাবে কেন?
“আমরা এটাই চাই, এই ধরনের আত্মঘাতী পথ থেকে আমাদের ছেলেমেয়েরা ফিরে আসুক।”
কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদকের পথ ছেড়ে দিলে তাদের পুর্নবাসনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা সকল ধর্মকে মর্যাদা দেয়। যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে মর্যাদার সঙ্গে- এটাই আমাদের নীতি। এটাই আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষ মানে ধর্মহীনতা নয়।”
বঙ্গবন্ধুর সময় ‘ইসলামের প্রচার-প্রসারে’ বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তার সরকার ইসলামের প্রচার-প্রসারে ‘যথেষ্ঠ কাজ’ করছেন বলে জানান তিনি।
উন্নয়নের জন্য দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরে তিনি বলেন, “কারো কাছে হাত পেতে নয়, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। কাজেই দেশে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। দেশে একটা সুন্দর পরিবেশ থাকলে উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
“কাজেই এখানে আমি বলবো, সকলকে আজকে এক হতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে। কারো জীবন নিয়ে নয়- জীবন বাঁচাতে হবে, এটাইতো ইসলামে শিক্ষা।”
মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর সঞ্চালনায় ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।