আমি শুধু সরকারের রাষ্ট্রপতি নই
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘আমি শুধু সরকারের রাষ্ট্রপতি নই। আমি বাংলাদেশের সবার রাষ্ট্রপতি। তাই সবার কথা শুনব, জানব।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, হাওরাঞ্চল রক্ষা করতে হলে নদী খননের বিকল্প নেই। এ নিয়ে স্থায়ীভাবে কাজ করতে হবে। ভারতে থেকে যেসব নদ-নদী দিয়ে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে, সেসব নদী ওই সীমানা থেকে ভৈরব পর্যন্ত গভীরভাবে খনন করতে হবে। যদিও এ প্রকল্পে সরকারের অনেক টাকা খরচ হবে। কিন্তু তারপরও সরকারকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
গতকাল সোমবার রাতে সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন শেষে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসন রাজা মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, হাওর অঞ্চলে অতীতে এভাবে কখনো কাঁচা ধান তলিয়ে যায়নি। হাওর এলাকায় দুই-তিন বছর পরপর ফসলহানি ঘটে। তবে সেই ধান থাকে পাকা। মানুষ কিছু হলেও ফসল গোলায় তুলতে পারে। কিন্তু চৈত্র মাসে কখনো এভাবে সব কাঁচা ধান তলিয়ে যায়নি, যা এ বছর হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সুনামগঞ্জের কান্না কিশোরগঞ্জে গিয়ে শেষ হয়। কারণ, যে পাহাড়ি ঢল কিংবা বন্যার পানি সুনামগঞ্জে হয়, তা ২৪ ঘণ্টা পরে কিশোরগঞ্জে গিয়ে পড়ে। এ সময় রাষ্ট্রপতি ১০ টাকা কেজি মূল্যের চালের মেয়াদ আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত বৃদ্ধির কথা বলেন। সেই সঙ্গে হাওরাঞ্চলের সমস্যা নিয়ে সংসদে বেশি বেশি কথা বলার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ৫ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এলাকায় আর আসা হয়নি। এর আগে বহুবার সুনামগঞ্জে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অনেক কারণে তাঁর আসা হয়নি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সুনামগঞ্জের এমন খারাপ সময়ে আসতে হবে, তা জানতাম না। আমি কৃষকের সন্তান, তাই কৃষকদের কথা ভেবে সুনামগঞ্জ সফরে এসেছি। এবার হাওরাঞ্চলের এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যদি ফসলহারা মানুষের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তাহলে এই এলাকার মানুষ কাজের জন্য ঢাকায় ছুটবে। ঢাকায় যেতে মানুষের লাইন পড়ে যাবে।’
আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে হাওর এলাকার সর্বনাশের কথা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, চিন্তা না করতে। হাওর এলাকার কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে এত সুন্দর করে হাওরাঞ্চলের নানান সমস্যা ও দুর্নীতির কথা বললেন, সত্যিই যদি আপনারা মন থেকে বলেন, যদি সত্যিই মন থেকে চান, তাহলে অবশ্যই সুনামগঞ্জে দুর্নীতি প্রতিহত হবে। আর দুর্নীতি হবে না।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যেভাবে আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলাম, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলাম। আজও সেভাবেই বিপদের সময় আসলাম। যখন এসেই পড়েছি, তখন কিছু তো হবেই। আপনাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার দুপুর আড়াইটায় হেলিকপ্টারযোগে কিশোরগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে আসেন। আসার পথে তিনি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করেন।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, ছাতক-দোয়ারা আসনের সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা, জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামসুন্নাহার বেগম শাহানা, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ূব বখত জগলুল, পরিমল কান্তি দে, মুক্তিযোদ্ধা আলী আমজাদ, ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক বজলুল মজিদ চৌধুরী, সাংবাদিক পঙ্কজ কান্তি দে।
এর আগে বিকেলে রাষ্ট্রপতি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে মতিবিনিময় করেন। পরে পৌর শহরের জাদুঘর পরিদর্শন করেন। রাত ১১টায় তিনি সার্কিট হাউসে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউসে রাতযাপন করেন। আজ মঙ্গলবার আবার সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করবেন। দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন রাষ্ট্রপতি।