রুস্তম আলী ফরাজীর আওয়ামী লীগে যোগদান
পক্ষকাল সংবাদ : পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। ফরাজিসহ মোট ১৪ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগে এলেন।রুস্তুম আলী ফরাজীর আওয়ামীলীগে যোগদানের বিষয়টি ঘনিষ্ঠ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওই নেতা জানান, বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সাধারণ সম্পাদক নূর-ই-আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদের ১৬ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের মধ্যে ১৪ জন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাঁরা হলেন গাইবান্ধা-৪-এর আবুল কালাম আজাদ, নওগাঁ-৩ এর ছলিম উদ্দীন তরফদার, কুষ্টিয়া-১-এর রেজাউল হক চৌধুরী, ঝিনাইদহ-২-এর তাহজীব আলম সিদ্দিকী, যশোর-৫-এর স্বপন ভট্টাচার্য্য, পিরোজপুর-৩-এর রুস্তম আলী ফরাজী, ঢাকা-৭-এর হাজি মো. সেলিম, নরসিংদী-২-এর কামরুল আশরাফ খান, নরসিংদী-৩-এর সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, ফরিদপুর-৪-এর মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, মৌলভীবাজার-২-এর আব্দুল মতিন, কুমিল্লা-৩-এর ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, কুমিল্লা-৪-এর রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এবং পার্বত্য রাঙামাটির ঊষাতন তালুকদার।
রুস্তম আলী ফরাজী ১৯৯৬ সালে জাতীয় পাটি ও ২০০১ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে জিতে যান।
তবে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই স্থানীয় বিএনপির সাথে তাঁর বৈরীতা শুরু হলে তিনি সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে কেন্দ্রে বিতর্কিত হন। ফলে তিনি মনোয়নবঞ্চিত হন।
রুস্তুম আলী ফরাজীর বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলার আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নে। তিনি ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের মঠবাড়িয়া উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন। পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন।
৬৯ সালে ফরাজী ১১ দফা আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। ৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মঠবাড়িয়ার আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ফরাজী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। সেবার নির্বাচিত হলেও এরশাদ সরকার তার ফলাফল কেড়ে নেয়। দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে। এ নিয়ে মঠবাড়িয়ায় রুস্তুম আলী ফরাজীর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে নিয়ন্ত্রণ করেন। এরপর ১৯৯০ সালে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেন। বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা বিলুপ্ত করে।
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মহিউদ্দীন আহমেদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালেও তিনি পিরোজপুর-৩ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদা সওগাতকে পরাজিত করেন।
২০০৯ সালের নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করলেও বিএনপির প্রার্থীকে পেছনে ফেলে ফরাজী দ্বিতীয় হন।২০১৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ার হোসেনকে পরাজিত করেন।ফরাজির দলে ভেরায় মঠবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন কোন মোড় নেবে কিনা সেটা এখন সময়ের জন্য অপেক্ষা।