রবিবার, ৭ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » চীনা সম্মেলন নিয়ে ভারতের অবস্থান
চীনা সম্মেলন নিয়ে ভারতের অবস্থান
সুহাসিনী হায়দারভারত যদি ১৪-১৫ মের চীনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে দেশটি ‘নিঃসঙ্গ’ হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকবে বলে জানিয়েছেন এক সিনিয়র চীনা কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ভারতের অংশগ্রহণ নিয়ে ‘পর্যাপ্ত ব্যবস্থা’ করার জন্য সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই ৬০ জাতি বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো উদ্যোগে অংশ না নিলেও ফোরামে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে - এ কথাটি উল্লেখ করে ওই চীনা কর্মকর্তা বলেন, ভারত এখনো তাদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে কোনো কথা জানায়নি। এমনকি তাদের বেইজিং দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতও এতে যোগ দেবে কিনা তা জানায়নি। একদল নির্বাচিত সাংবাদিককে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘জাপানের চেয়ে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো। সেই জাপানও যেখানে কর্মকর্তা পাঠাচ্ছে, সেখানে ভারত যোগ দেবে কি দেবে না সে ব্যাপারে কিছুই প্রকাশ করেনি।’
‘অনুপস্থিতি টের পাওয়া যাবে’
এই ইস্যুতে প্রকাশ্য বক্তব্য রাখার মাধ্যমে ভারতের ওপর চীন চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বলে যে অভিযোগ ওঠেছে, ওই কর্মকর্তা তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘২৮ নেতা এবং শতাধিক দেশের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ সত্ত্বেও আমরা জানি, দ্বিপক্ষীয়ভাবে ফোরামে ভারতের অনুপস্থিতি গভীরভাবে টের পাওয়া যাবে। ভারতের সব প্রতিবেশী এতে অংশ নেবে।… এতে অংশ না নিলে ভারতের নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হবে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও চীনের মধ্যকার ‘মূলধারার’ ও বাণিজ্য সম্পর্ক এখনো জোরালো রয়েছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, ভারতের এনএসজি সদস্যপদ লাভ এবং জাতিসঙ্ঘে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্তিতে চীনের প্রতিবন্ধকতা আরোপ এবং সেইসাথে অরুনাচল প্রদেশে দালাই লামার সাম্প্রতিক সফরের ফলে দেশ দুটির মধ্যকার রাজনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত আশা করে, এসব ইস্যুর উদ্বেগ চীন উপলব্ধি করবে। আমরা আশা করি, ভারত দালাই লামাকে ধর্মীয় নেতা হিসেবে স্বাগত জানাবে, চীন সরকারের বিরুদ্ধে প্রবাসী সরকার হিসেবে তিনি যে রাজনীতি করছেন, সেটা থেকে তাকে বিরত রাখবে। তিনি দালাই লামার সফরটিকে বেদনাদায়ক হিসেবে অভিহিত করেন।
দালাই লামা ঘটনাটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি কাঁটার আঘাত। এমনকি আঘাতের পরও ব্যথা রয়ে গেছে।
ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, সম্পর্কে টানাপোড়েন সত্ত্বেও ভারত ও চীন চলতি বছর বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং জুনে কাজাখস্তানে সাংহাই কোঅপরাশেন অর্গ্যানাইজেশন শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন।
চীনা কর্মকর্তার মন্তব্যের কোনো জবাব দিতে অস্বীকার করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। সরকার বলে আসছে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরামে ভারত যোগ দেবে কিনা সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ভারত এটাও বলে আসছে, সিপিইসি প্রকল্পটি পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মির দিয়ে তৈরির পরিকল্পনা করায় ভারতের পক্ষে এতে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ভারত গিলগিট-বালটিস্তানকে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ করাকে ভারত তার ‘সার্বভৌমত্বের’ লঙ্ঘন বিবেচনা করে।
সাবেক দূতের দৃষ্টিভঙ্গি
‘ভারতের উচিত চীনকে জিজ্ঞাসা করা, তারা উচ্চ পর্যায়ের ভারতীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য এ ধরনের উদ্বেগ দূর করতে আগ্রহী কিনা। চীন কি সিপিইসিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যেগ থেকে আলাদা করে কেবল চীন-পাকিস্তান পৃথক দ্বিপক্ষীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করতে ইচ্ছুক?’ সাবেক রাষ্ট্রদূত পি এস রাঘবন এই প্রশ্নটি করেছেন। তিনি বর্তমানে ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাভভাইজরি বোর্ডের আহ্বায়ক। তিনি বৃহস্পতিবার হিন্দু পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন লিখে পরামর্শ দিয়েছেন, ভারতের অবস্থান বদলানোর লক্ষ্যে চীনের উচিত ভারতের উদ্বেগ দূর করা।