রবিবার, ৭ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » নেপালের প্রধান বিচারপতির অভিসংশন চেষ্টা আটকে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট
নেপালের প্রধান বিচারপতির অভিসংশন চেষ্টা আটকে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্ট
পক্ষকাল ডেস্কঃ
নেপালের প্রধান বিচারপতি সুশিলা কারকিকে অভিসংশন করার যে উদ্যোগ দেশটির সরকার নিয়েছিলো সুপ্রিম কোর্ট তা আটকে দিয়েছে। শুক্রবার আদালতের রায় ঘোষণার পরপরই নিজ দফতরে ফিরেছেন প্রধান বিচারপতি। এদিন আদালতের কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। আর রোববার থেকে পুরোদস্তুর কাজ শুরু করবেন বলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিশু জার পাউদেল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।আদালত তার রায়ে কারকি’র বিরুদ্ধে আনা অভিসংশন প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর না হতে পার্লামেন্টকে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবিলম্বে কারকিকে দায়িত্ব পালন শুরু করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
সরকারের আনা অভিসংশন প্রস্তাব সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী বলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি চোলেন্দ্র রানা তার রায়ে উল্লেখ করেন।
নেপালের কোয়ালিশন সরকারের দুই অংশীদার নেপাল কংগ্রেস ও সিপিএন (মাওবাদি কেন্দ্র)’র ২৪৯ জন এমপি মিলে গত ৩০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট সচিবালয়ে অভিসংশন প্রস্তাব নিবন্ধন করেন। দেশটির আইন অনুযায়ী এ ধরনের কোন প্রস্তাব আনা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পদে আর দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। শুক্রবার দুপুরে অভিসংশন প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপনের কথা ছিলো। কিন্তু পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল সিপিএন-ইউএমএল’র বাধায় তা আর উত্থাপিত হয়নি।
আদালতের রায়ে বলা হয়, ‘বিচারবিভাগ রাষ্ট্রের খুবই স্পর্শকাতর একটি অঙ্গ। কোন প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিসংশন প্রস্তাব কেবল তখনই সাংবিধানিক, বাস্তবসম্মত ও যথাযথ বলে বিবেচিত হতে পারে যখন ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে একাডেমিক মহল ও সুশিল সমাজ এ ব্যাপারে একমত হবে।… এমনটা নাহলে অভিসংশন প্রস্তাবকে সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করা যাবে না।’
আদালতের রায়ে আরো বলা হয়, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নীতি যদি অনধিকার চর্চার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে তাহলে আদালত রাষ্ট্রের কোন অঙ্গ বা কোন নাগরিকের অধিকারকে সুরক্ষা দিতে পারবে না।’
বিচারপতি রানা এই রায় দিতে গিয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, এই অভিসংশন প্রস্তাব সকল বিচারকের মুখে কালিমা লেপন করেছে, তাদের নৈতিক মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে কি হবে তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। জনগণের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অব্যাহত রাখা আমার দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।’
আদালত বাদিদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি পেশ করার নির্দেশ দেয়।
এদিকে, এনসি ও সিপিএন আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মাওবাদি কেন্দ্রের মুখপাত্র পম্প ভুশাল জানান যে রোববার সরকার আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ক্ষমতাসীন দুই দলের নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ভুশাল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে পার্লামেন্টের বিশেষ ক্ষমতা উপেক্ষা করা হয়েছে। তাই রোববার রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হবে।’
এদিকে, আদালতের রায় নেপালের ক্ষমতাসীন জোটকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহলের তথ্য উপদেষ্টা গোবিন্দ আচারিয়া জানান, ক্ষমতাসীন জোটের অংশীদাররা সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন।
অন্যদিকে, মাওবাদি কেন্দ্রের মুখপাত্র ভুশালের মতে সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ রায় পার্লামেন্টের জন্য একটি আঘাত। এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন জোট আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
তবে মুখপাত্র বলেন, আদালতের এই অন্তর্বর্তী নির্দেশ আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিতব্য স্থানীয় নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলবে না।
শীর্ষ আদালতের রায়ের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে নেপাল কংগ্রেসের এমপি মিন বিশ্বকর্মা বলেন, এই রায় অচিন্ত্যনীয় এবং এর কোন ভিত্তি নেই।