রবিবার, ৭ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » ১০ মে ভিশন-২০৩০ নিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া
১০ মে ভিশন-২০৩০ নিয়ে আসছেন খালেদা জিয়া
পক্ষকাল সংবাদ ঃ সংসদ হবে উচ্চ-নিম্ন কক্ষ, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ
নতুন ধারার রাজনীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগামী ১০ মে ভিশন-২০৩০ নিয়ে আসছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সংসদকে উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ করার পরিকল্পনার কথা জানাবেন বিএনপি প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা হ্রাস করার পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনাও তুলে ধরবেন তিনি। সাংবিধানিক পদে নিয়োগে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে আমূল সংস্কার আনা হবে। দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস নয় এমন প্রতিশ্রুতিও থাকবে বিএনপির ভিশন-২০৩০ এ। জানা যায়, রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বিকাল সাড়ে ৪টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, বিশিষ্টজনসহ গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। দলীয় একটি সূত্র জানায়, কূটনীতিকসহ পেশাজীবীদের পরামর্শেই বিএনপি ভিশন-২০৩০ ঘোষণা করছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্বে গেলে কী কী কাজ করব, ২০৩০ সালে আমরা কেমন দেশ দেখতে চাই, সেই স্বপ্নটা কীভাবে জাতিকে দেখাতে চাই-সেই বিষয়গুলো তুলে ধরবেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আমাদের জাতীয় কাউন্সিলে ম্যাডামের বক্তব্যে ‘ভিশন-২০৩০’ এর রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল আউটলাইন। এখন পূর্ণাঙ্গ করে দেওয়া হবে। এটার সঙ্গে নির্বাচনী ইশতেহার বা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখার কোনো সম্পর্ক নেই। ” সূত্র জানায়, সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত নন, এমন কয়েকজন বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও আমলার নেতৃত্বে ‘ভিশন-২০৩০’ শীর্ষক রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এরপর তা দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে দেখানো হয়। গত এক বছর ধরে তারা এ কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে তা অনুমোদন করিয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন বেগম জিয়া। উল্লেখ্য, গণতন্ত্র চর্চায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ দুটি দেশ যুক্তরাজ্য ও ভারতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। জানা যায়, ভিশন-২০৩০-তে বিএনপি চেয়ারপারসন নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেবেন। এ জন্য নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য করতে ভিশনে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা সংসদীয় সরকারের আবরণে স্বৈরাচারী একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। এর অবসানকল্পে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনা হবে। দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রসঙ্গে খসড়া ভিশনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রী চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জনগণের সম্মতি গ্রহণের পন্থা ‘রেফারেন্ডাম’ বা ‘গণভোট’ ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রবর্তন করার ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া। ভিশনে বলা হয়, সুশাসন প্রসঙ্গে তিনটি ‘গুড’ বা ‘সু’ অর্থাৎ থ্রিজির সমন্বয় ঘটানো হবে। এই থ্রিজি হলো : গুড পলিসি, গুড গভর্ন্যান্স ও গুড গভর্নমেন্ট। অর্থাৎ সুনীতি, সুশাসন ও সু-সরকার। গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সুশাসনের জন্য নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মতো সাংবিধানিক ও আধাসাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি, অনিয়ম ও দলীয়করণমুক্ত করার কথা বলা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং মাথাপিছু আয় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার ও এর জন্য বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ‘ডবল ডিজিটে’ উন্নীত করার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
প্রশাসনকে গতিশীল করার লক্ষ্যে ভিশনে উল্লেখ করা হয়, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করে সততা, দক্ষতা, মেধা, যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও বিচার ক্ষমতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন, পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার কথা বলা হবে। সব কালা কানুন বাতিল করা হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং আটক অবস্থায় দৈহিক-মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। আটকাবস্থায় মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার জন্য তদন্তের ব্যবস্থা থাকবে। উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা ও পদ্ধতিসংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবে বিএনপি। দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি আইন ও পদ্ধতিগত সংস্কার এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ন্যায়পালের পদ ও কার্যালয় সক্রিয় করবে দলটি। ভবিষ্যতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে কঠোরতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে দলটি। বিএনপি মনে করে, সন্ত্রাসবাদ সব রাষ্ট্রের জন্যই হুমকির কারণ। এ কারণে বিএনপি বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মধ্যে কোনো রকম সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা বরদাস্ত করবে না। বাংলাদেশের মাটি থেকে অন্য কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাও মেনে নেবে না।
আঞ্চলিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, জাতীয় স্বার্থ ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও যোগাযোগ বাড়াতে কানেকটিভিটি স্থাপন, সম্প্রসারণ ও জোরদার করতে বলিষ্ঠ ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া, কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি না করা, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ সোহার্দ, বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ রোধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দেশের অভ্যন্তরে প্রাপ্ত জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার, আবাসন খাতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ, ওয়াক্ফ সম্পত্তির পরিচালনা ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত, দেবোত্তর সম্পত্তিসমূহ হিন্দু শাস্ত্রের বিধান অনুযায়ী পরিচালনার জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করাসহ নতুন এক সামাজিক সমঝোতা বা চুক্তিতে উপনীত হতে বিএনপি উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিভিন্ন দেশের মধ্যে চুক্তিসহ নতুন কিছু বিষয় সম্পর্কে বিএনপি তার অবস্থান পরিষ্কার করবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘গত বছরের মার্চে বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসন ‘ভিশন-২০৩০’ শিরোনামে যে সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দিয়েছিলেন, তা বিস্তারিত আকারে তৈরি করা হয়েছে। এটার ভিত্তিতে পরবর্তীতে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। ‘
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভিশন-২০৩০ চূড়ান্ত। এখন শুধু সংবাদ সম্মেলনে তা ঘোষণা করবেন আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।