বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক হোন: মালিকদের প্রধানমন্ত্রী
শ্রমিকদের প্রতি আন্তরিক হোন: মালিকদের প্রধানমন্ত্রী
পক্ষকাল সংবাদ : বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে কারখানার শ্রমিকদের প্রতি মালিকদের সহানুভূতিশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি কর্মীদেরও মালিকদের প্রতি আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের বলব, যারা যেখানে কাজ করে, যেহেতু তাদের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা হয়, কাজেই সেই সমস্ত শিল্প করকারখানা যাতে ভালভাবে চালু থাকে, তারা সে ব্যাপারে যেন আন্তরিক হন।’
‘আবার যারা মালিক শ্রেণি আছেন, তাদেরও বলব, যারা শ্রম দিয়ে শিল্প কল-কারখানা চালু রাখে, উৎপাদন বৃদ্ধি করে, তারা যেন সেই শ্রমিকদের প্রতি আরো বেশি সহানুভূতিশীল হন, তাদের ভালোমন্দের দিকে যেন আরো বেশি করে তাকান, সেটাই আমরা চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশ এগিয়ে যাবে, আরো উন্নত হবে। এই উন্নয়নের মুলে যে মেহনতি মানুষ রয়েছে, তাদের কল্যাণ করা সরকারের দায়িত্ব।
‘সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং তার সুফলও আমরা পাচ্ছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’
বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয় এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ইনশাল্লাহ একটা মানুষও এদেশে দরিদ্র থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।’
শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে এ দফায় ৬৪ জনকে ৭৯ লাখ টাকার দেক দেওয়া হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ৬২ জন উপস্থিতি থেকে প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে চেক গ্রহণ করেন।
চেক পাওয়া ৬৪ জনের মধ্যে ২৭ জন হলে নিহত ও মৃত শ্রমিকদের ওয়ারিশ। বাকি ৩৭ জন শ্রমিকদের সন্তান, যারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন, মেডিকেল কলেজের ১০ জন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ জন এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন রয়েছেন।
‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল’ গঠন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ এর আওতায় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কল্যাণ ও সুরক্ষা এবং তাদের সন্তানদের সুশিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে তিনি সরকার গঠনের পর এ তহবিলের স্থিতির পরিমাণ ৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি মুনাফা এ তহবিলের প্রধান উৎস।
এ তহবিল থেকে বিভিন্ন খাতে কর্মরত এক হাজারের বেশি শ্রমিককে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা কল্যাণ, গোষ্ঠিবীমার প্রিমিয়াম ও শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত।
বর্তমান সরকারের সময় শ্রমিকদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন এ অনুষ্ঠানে।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্পসহ ৩৮টি শিল্পখাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়েছে তার সরকারের সময়েই। নারী শ্রমিকদের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ডরমিটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ঈশ্বরদীতে তিনটি ডরমিটরি কাম-ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে।
৫৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬২টি চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
তিনি শ্রমিকদের পেশাগত দক্ষতা ও মানোন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন এবং আহত শ্রমিকদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা জার্মানির এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম পরিদর্শন করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও আমরা এটা করতে চাই।’
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে হাসপাতাল গড়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকগণ প্রায়ই পেশাগত কারণে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের সুস্বাস্থ্য ও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় দেশে প্রথমবারের মত আমরা অকুপেশনাল ডিজিস হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি জানান, এ হাসপাতালের ৩৩ শতাংশ শয্যা শিল্প কারখানার শ্রমিকদের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। শ্রমিকরা সেখানে কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারবেন।
‘আমাদের রাজনীতি কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের উন্নয়নের জন্য। দোয়া করবেন, আপনাদের সেবা যেন আমরা করে যেতে পারি। আপনারা দেশের সেবা করবেন। আমরা আপনাদের সেবা করব,’ বলেন শেখ হাসিনা।
অন্যদের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, সংসদ সদস্য মুন্নুজান সুফিয়ান ও শ্রম সচিব মিকাইল শিপার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।