বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | পোশাক শিল্প | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে অসহনীয় বিদ্যুৎ সঙ্কট
সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে অসহনীয় বিদ্যুৎ সঙ্কট
পক্ষকাল ডেস্ক ঃ
সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে অসহনীয় বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি সবচাইতে খারাপ।এক দিকে অসহনীয় গরম, তার উপর বিদ্যুৎ সংকটের কারণে পরিস্থিতি কোথাও কোথাও মানুষজনকে বিক্ষুব্ধ ও সহিংস করে তুলছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। খবর বিবিসির।
লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার বাসিন্দারা বুধবার বিদ্যুতের একটি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে বলেও খবর আসছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান নয়ন বলছিলেন, তাদের গ্রামে একটানা এক ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না। লোডশেডিং হচ্ছে, দু ঘন্টা থেকে তিন ঘন্টা পর্যন্ত।
‘সন্ধ্যে সাতটার দিকে দোকানে যখন বেচা-বিক্রির সময়, তখন কারেন্ট যায়, আর আসে গিয়ে দশটার পর। তারপর কিছুক্ষণ থেকে আবার যায়। কোনও কোনওদিন সারারাত ঘুমাতে পারি না’ বলছিলেন নয়ন।
তিনি আরো উল্লেখ করছিলেন, পূর্ববর্তী বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় বিদ্যুতের যে অবস্থা ছিল এখন তার চাইতেও অনেক খারাপ।
‘তখন বিদ্যুতের যে দাম ছিল, এখন তার চাইতে দ্বিগুণ দাম দিচ্ছি, কিন্তু লোডশেডিংতো সাথে আছেই’ বলছিলেন মনিরুজ্জামান নয়ন।
গ্রামাঞ্চলে বা মফসসলে অনেকেই অভিযোগ করছেন দিনে এক ঘন্টার বেশি বিদ্যুৎ থাকছে না।
২০০৮ সালের নির্বাচনে পূর্বতন বিএনপি সরকারের পরাজয়ের একটি মূল কারণ বলে মনে করা হয় বিদ্যুৎ খাতে শোচনীয় ব্যর্থতা। আর আওয়ামী লীগ যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জিতেছিল, তার অন্যতম ছিল বিদ্যুত খাতের উন্নয়ন।
সেই প্রতিশ্রুতি পালনের পথে পরবর্তী বছরগুলোতে আওয়ামী লীগের সরকার বেশ ভাল ভাবেই এগিয়েছে দেখা যাচ্ছে।
২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার হাতিরঝিলে আলো জ্বালিয়ে, আতশবাজি পুড়িয়ে উদযাপন করা হয় দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জনের সাফল্য।
এর তিন বছর পর হাতিরঝিলে আরো একবার আতশবাজি পুড়েছে সক্ষমতা পনের হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানোয়। যদিও বাংলাদেশে এ যাবৎকালে একদিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড ৯ হাজার ২শ মেগাওয়াট।
তারপরও উৎপাদনের সাথে চাহিদার বিরাট পার্থক্য না থাকায়, বিগত বছরগুলোতে মানুষ খুব একটা অসুবিধা বোধ করেনি, যেটা করছে, বিগত কয়েকদিনে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলছেন, হঠাৎ করে ১৭শ মেগাওয়াটের মত উৎপাদন ক্ষমতার কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং মেঘনাঘাটে একটি টাওয়ার ভূপাতিত হওয়ায় আরো ৪শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যাচ্ছে না। এসব কারণেই আকস্মিক এই দুর্বিপাক তৈরি হয়েছে।
তবে পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কাজ চলছে এবং আগামী শনিবার নাগাদ সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
কিন্তু এদিকে বাংলাদেশে এখন চলছে তীব্র দাবদাহ। তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ছাড়াচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের।
বিদ্যুৎমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্য, পরিবেশবাদীরা সব ধরনের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতেই বাধা দিচ্ছেন।
একটু যারা অবস্থা সম্পন্ন তাদের মধ্যে বেড়ে গেছে শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহারের প্রবণতা। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা আরো বেড়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের হিসেবে প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে ২০০ মেগাওয়াট।
কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিকে অনন্য উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা এবং বলছেন অনেকগুলো বিপর্যয় একসাথে ঘটে গেছে এবং সেটা খুব খারাপ একটা সময়ে ঘটায় মানুষের এই দুর্দশা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে আওয়ামী লীগের যে সাফল্য সেটা যে ‘জোড়াতালি দেয়া সাফল্য’ এবং সেটা যে টেকসই নয় - তাও উল্লেখ করতে ভুলছেন না বিদ্যুত খাতের বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম তামিম।
‘যেখানে আমার বিদ্যুৎকেন্দ্র দরকার নেই, সেখানে রাজনৈতিক প্রভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। যে ধরণের ফুয়েল দিয়ে করা উচিত না সেটা দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের প্রভাবে করা হচ্ছে।’
‘এই যে পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে আমাদের যে অ্যাডহকের ভিত্তিতে নানারকম জোড়াতালি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা অবশ্যই আমাদের জন্য একটা বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা’ বলছিলেন প্রফেসর তামিম।
কিন্তু সরকার বলছে, বিদ্যুৎ খাতের অনেকগুলো দীর্ঘমেয়াদি ও বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা নিজেরাই রাজনীতির শিকার হচ্ছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী হামিদ বলছেন, ‘বড় প্ল্যান্ট যখনই করতে যাচ্ছি পরিবেশ আন্দোলনকারীরা বলছে করা যাবে না। নিউক্লিয়ার করা যাবে না। কোল পাওয়ার প্লান্ট করা যাবে না। তাহলে আমি বিদ্যুৎ দেব কোথা থেকে?’
‘আমার তো হাইড্রো-পাওয়ারের ক্যাপাসিটি নেই। আমি যদি এলএনজি এনে করি তাহলে বিদ্যুতের দাম পড়ে যাবে বিশ টাকা। তখন তো রাস্তায় নামবে সব লোকজন, বিদ্যুৎ কিনব কীভাবে! আমাকে তো বড় প্ল্যান্ট করতে হবে।’
‘বড় প্ল্যান্ট আসতেছে তিনটা বাকিগুলা তো অ্যাক্টিভিস্টরা আছেন তারা রাস্তাঘাটে বের হয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে দিচ্ছেন তারা করতে দিবেন না’ বলছিলেন নসরুল হামিদ।
ধারণা করা হয় বাংলাদেশে এই মুহুর্তে গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুতের চাহিদা কমবেশী এগারো হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে মঙ্গলবার বাংলাদেশের যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এদিন সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াটেরও কম।
উৎপাদনের অতিরিক্ত যে চাহিদা তার চাপ পড়েছে, কোনো সন্দেহ নেই ব্যবহারকারীদের বরাদ্দে। আর অবশ্যম্ভাবীভাবে গ্রামাঞ্চলে চাপ পড়েছে সবচাইতে বেশি।