বৃহস্পতিবার, ২৫ মে ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » বিচারপতিদের অপসারণ: তিন অ্যামিকাস কিউরি যা বললেন
বিচারপতিদের অপসারণ: তিন অ্যামিকাস কিউরি যা বললেন
পক্ষকাল ডেস্ক;সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতাসংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের আপিল শুনানিতে তিন অ্যামিকাস কিউরি ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং পৃথিবীর অনেক দেশই ‘পার্লামেন্টারি রিম্যুভাল’ থেকে সরে আসতে বাধ্য হচ্ছে বলে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। এসময় সংসদের মাধ্যমে অপসারণের ফলে দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন তারা। মতামত উপস্থাপন করেন, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত উপস্থাপন শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রবিবার (২৮ মে) দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
বক্তব্য উপস্থাপনকালে সাবেক বিচারপতি এবং সিনিয়র আইনজীবী টিএইচ খান ষোড়শ সংশোধনীকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মতামত দিয়েছেন। সকালে আপিল বিভাগে মতামত উপস্থাপনের পর তার ছেলে আফজাল এইচ খান সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। টিএইচ খান আদালতকে আরও বলেন, ‘অনেক অনেক কথা হবে, কিন্তু আপনাদের উচিত জুডিশিয়ারি রক্ষা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর সমাধান না করে সরকার চলে গেছে ষোড়শ সংশোধনীতে।’
‘পার্লামেন্টারি রিম্যুভাল’ কোনও দেশেই কার্যকর হতে পারছে না
ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম তার মতামত পেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক যেসব আইন-কানুন জাতিসংঘ থেকে শুরু করে কমনওয়েলথ-এর দেশগুলো মেনে চলে, সব জায়গায় জুডিশিয়ারির দক্ষতা, নিয়োগ বা যে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে হলে, সেটা জুডিশিয়ারিই করে। আমাদের এখানেও সেরকম পদ্ধতি চালু আছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বিষয়টি দেখবে।‘পার্লামেন্টারি রিম্যুভাল’ কোনও দেশেই কার্যকর হতে পারছে না। বেশিরভাগ দেশই এটা থেকে সরে আসছে। দুনিয়াজোড়া যে অবস্থান দেখছি, সেখানে সেলফ ডিসিপ্লিনড অ্যাণ্ড সেলফ মনিটরিং -এর কথাই বলা হচ্ছে। জুডিশিয়ারি অসদাচরণ হয়েছে মনে করলে জুডিশিয়ারিই সেটা ঠিক করবে। এবিষয়ে বিভিন্ন দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছি। এখন বিবেচনার বিষয়টি আদালতের।’
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে বিচারপতি অপসারণ কীভাবে
সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে কীভাবে বিচারপতি অপসারণ করা হবে, এমন প্রশ্নও রেখেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদের মতামত উপস্থাপনের সময় এ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আদালত বলেন, এখন না হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। কিন্তু কোনও সময় যদি তা না থাকে,যদি ‘হ্যাঙ্গিং পার্লামেন্ট’ হয়, তাহলে কী হবে? কীভাবে অপসারণ করা হবে? তখনতো একটা ভেক্যুয়াম (শুন্যতা) সৃষ্টি হবে। জবাবে রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার লিখিত সাবমিশনে এটা আছে। আমি নিজেও এ প্রশ্ন তুলেছি।’
এদেশের সংসদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদের তুলনা করলে হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এদেশে পুলিশ, নির্বাহী বিভাগ, সংসদ সদস্যরা অসদাচরণ করলে তাদের নিজস্ব আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাহলে জুডিশিয়ারিতে কেন সংশোধন। যদি এই সংশোধন বহাল হয়, তাহলে বেঞ্চ গঠন ছাড়া আপনাদের কোনও কাজ নেই। রায় হলে তখন সংসদে আলোচনা হবে।’
গত বছর ৫ মে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, ‘বলতে দ্বিধা নেই, ষোড়শ সংশোধনী একটি কালারেবল লেজিসলেশন (কোনও কাজ সংবিধানের মধ্যে থেকে করার সুযোগ না থাকলে আইনসভা যখন ছদ্ম আবরণে ভিন্ন প্রয়োজনের যুক্তি দেখিয়ে একটি আইন তৈরি করে), যা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভা থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন।