সরকার বনাম বিচার বিভাগ
কাগজের সৌজন্যে:বেশ কিছুদিন ধরেই সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। টানাপোড়েন থেকে বাকযুদ্ধ, তারপর এখন আবার কিছুটা যুদ্ধেও রূপ নিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কয়েকদিন ধরেই একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন। গত বছরের ৭ নভেম্বর নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে সরকারকে নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই মূলত এ দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। শৃঙ্খলা বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলো আপিল বিভাগ। কিন্তু সরকার তা অনুসরণ করেনি। তারপর দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য আদেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু সরকার তা অনুসরণ করেনি। ফলে আদালতও ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন সরকারের উপর। যা এখন অনেকটা যুদ্ধে রূপ নেয়ার উপক্রম হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে এক রায় দেন। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা হয়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত বছরের ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। ওই তারিখে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় এলে অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো অগ্রগতি জানাতে না পারায় বিধিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা লিখিতভাবে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। পরদিন অ্যাটর্নি জেনারেল সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আবেদনটি ‘অস্পষ্ট’ জানিয়ে ২৪ নভেম্বরের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে জারি এবং আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। এরপর আরও দুই দফায় সাত দিন করে দুই সপ্তা সময় দেওয়া হয় সরকারকে।
এসময়ের মধ্যে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় ক্ষুব্ধ হয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করেন আদালত। তারই মধ্যে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা, শৃঙ্খলা বিধিমালা ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ সংশোধনকল্পে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত খসড়া গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই।
এ চিঠি পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতিকে এনিয়ে ভুল বুঝানো হয়েছে উল্লেখ করে গেজেট আকারে প্রকাশে আবারো সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত। মূলত: সেই থেকেই প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এনিয়ে বিভিন্ন সেমিনার ও অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। কথা বলেন বিচার বিভাগের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ ও আইনের শাসনের ঘাটতি নিয়ে। পরে প্রধান বিচারপতির এসব বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরকার ও বিচার বিভাগের দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে একপর্যায়ে মুখ খুলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
এদিকে, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিও বলছে দেশে আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র নেই। সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চাচ্ছে। আর বিশ্লেষকরাও বলছেন, স্বাধীনতার পর কোনো সরকারের সঙ্গেই বিচার বিভাগের এত টানাপোড়েনের ঘটনা ঘটেনি। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। অন্যথায় দেশে একদিন সাংবিধানিক সংকটও দেখা দিতে পারে।
দুই সচিবকে তলব
বার বার সময় দেওয়ার পরও অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা সরকার গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু সালেহ শেখ মো: জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে গত ১২ ডিসেম্বর আদালতে তলব করেন আপিল বিভাগ। বিচারক অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেন, লিখিত আদেশ দিলাম না। আপনাকে মৌখিকভাবে বলছি, সোমবার সকাল ৯টায় দুই সচিবকে নিয়ে হাজির হবেন। এটা একটা মেসেজ। পারলে ওই দুইজনকে আইনের খসড়া নিয়ে হাজির হতে বলবেন। আদালতের তলবে দুই সচিব হাজির হলে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে বলেন, বিধিমালা নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির চিঠি
বিচারকদের চাকরির বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশে সরকারকে বার বার তাগাদা দেয়ায় গত বছরের ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে
সুপ্রিমকোর্টকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা, শৃঙ্খলা বিধিমালা ও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা, ২০০৭ সংশোধনকল্পে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত খসড়া গেজেটে প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা নেই। আইন মন্ত্রণালয় থেকে চিঠিটি ওই দিনই সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়।
কিন্তু, রাষ্ট্রপতির দেয়া চিঠিকে আমলে নেয়নি আপিল বিভাগ। আবারো ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করার সময় বেঁধে দেন সর্বোচ্চ আদালত। এনিয়ে রাষ্ট্রপতিকে ভুল বোঝানো হয়েছে বলে সেদিন উল্লেখ করেন আদালত।
যা বললেন প্রধান বিচারপতি
বারবার সময় দেয়ার পরও আপিল বিভাগের দেয়া নির্দেশনা সরকার বাস্তবায়ন না করায় প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। এনিয়ে তিনি প্রায় সময়ই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে নির্বাহী বিভাগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। গত ১৫ এপ্রিল রাজধানীর কাকরাইলে উচ্চ আদালতের বিচারপতির জন্য আবাসনস্থল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন, একটি মহল সব সময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত। এরকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়। বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে পাশ কাটানো হয়েছে বলেও ওই অনুষ্ঠানে অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। এরপর ২৬ এপ্রিল হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির দেয়া এক সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক, তা প্রশাসন কোনো দিনই চায়নি। সব সরকারের আমলেই বিচার বিভাগের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ চলেছে। অথচ বিচার বিভাগই প্রশাসনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। কিন্তু আমলাতন্ত্র সব সময়ই বিচার বিভাগকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা যখন নিজ বিভাগে নিরাপত্তা পান না তখন তারা বিচার বিভাগের কাছেই আসেন। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগই তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। অথচ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশাসন চায় না। তারা বিচার বিভাগকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ২ মে বগুড়ায় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা মন্তব্য করেন, কোনো বিধান আইন ও সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা বাতিল করতে সুপ্রীম কোর্ট পিছপা হবে না। একটি গণতান্ত্রিক সরকার যদি বিচার বিভাগকে সহায়তা না করে তবে তা সত্যিই দুঃখজনক। বিচার বিভাগকে পঙ্গু করার চেষ্টা করলে তা বরদাশত করা হবে না। আমি যেদিন থেকে দায়িত্ব নিয়েছি, সেদিন থেকেই বিচার বিভাগকে রোল মডেল করার চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু সরকারের একটি মহল আমার এই চেষ্টায় সহযোগিতা না করায় দিন দিন মামলাজট বাড়ছে। আর ৩ মে জয়পুরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, প্রতিটি সরকারেই কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকে, যারা সরকারকে ভুল পরামর্শ দিয়ে জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজ করতে বাধ্য করে। এমন কিছু সুপারিশ করে যা আইনের শাসনের পরিপন্থি। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার প্রধান যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করেন তাহলে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে।
যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে মুখ খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রধান বিচারপতিদের বক্তব্য নিয়ে সংসদে প্রশ্নও তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ১৫ এপ্রিল কাকরাইলে উচ্চ আদালতের বিচারপতির জন্য আবাসনস্থল উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাননীয় বিচারপতি কিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন। আমি তাকে অনুরোধ করব …রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়া এবং বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া। এখানে কিন্তু আমার কোনো ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমন্বয় থাকার উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একে অপরের সম্পূরক হিসাবেই কাজ করবে। একে অপরকে অতিক্রম করে না. এখানে ক্ষমতার শক্তি দেখিয়ে না.. ক্ষমতা কারও কিন্তু কম নয়। এখন কে কাকে সম্মান করবে, কে কাকে করবে না, কে কার সিদ্ধান্ত নাকচ করবে, কে কাকে মানবে, না মানবে; এই দ্বন্দ্বে যদি আমরা যাই, তাহলে কিন্তু একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। তিনি বলেন, এখানে কোনো রকম কিছু হলে রাষ্ট্রপতির সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করাটাই ভালো। সেটা করলেই ভালো। আর, এক্ষেত্রে আমাদের যদি কিছু করণীয় থাকে, নিশ্চয়ই আমাদের পক্ষ থেকে তা দেখব।
এরপর আইনমন্ত্রী আর প্রধান বিচারপতির বাকবিত-া যখন চরম আকার ধারণ করেছে তখন প্রধানমন্ত্রী ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আরেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, পারস্পরিক দোষারোপের পথে না হেঁটে সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগকে সমঝোতার মাধ্যমে আরও সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার এই তিনটা স্তম্ভের মধ্যে একটা সমঝোতা নিয়েই চলতে হবে, কাজ করতে হবে। একটি আরেকটিকে দোষারোপ করে কোনোদিন একটা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। এই বিষয়টায় সকলকে আমি একটু সচেতন থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এরপর ‘দেশে আইনের শাসনের ঘাটতি আছে’ প্রধান বিচারপতির দেয়া এমন বক্তব্যে সরাসরি সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি জানি না আমাদের চিফ জাস্টিস কিভাবে বললেনÑ আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই।
যা বললেন আইনমন্ত্রী
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। ২৬ এপ্রিল তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশের প্রধান বিচারপতিরা প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না। আপনার যদি কোন দুঃখ-কষ্ট থাকে কিংবা কোন উষ্মা প্রকাশ করার থাকে কিংবা কোন কথা বলার থাকে, সেটা পাবলিকলি না বলে আমাদের বলুন। আপনার যে কোন দুঃখ-কষ্ট বা সমস্যার কথা জানতে পারলে আমরা সেই সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ নিতে পারতাম। সমস্যার সমাধান করতে পারতাম। আমি আপনাদের সবিনয়ে এবং প্রধান বিচারপতির প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলব, আপনারা অনেক উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ দেখেছেন, আপনারা প্রতিবেশী দেশও দেখেছেন। কোনো দেশে বিচার কাজ ছাড়া প্রধান বিচারপতিরা এত উষ্মা, এত কথা পাবলিকলি বলেন না। এর দুই দিন পর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আবার বলেন, কোনো সরকারই চায়না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক। এরপর ৩ মে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য রেখেছেন, আমি সেই সম্বন্ধে কোনো কথাই বলব না। আর যেসব বক্তব্য উনি দিয়েছেন, সেটার ব্যাপারে আপনারা, গণমাধ্যম সেটা বিচার করবেন, দেখবেন। আমার যদি কিছু বলতে হয়, তাহলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সামনে গিয়েই আমি বলব।
গণভবন ও বঙ্গভবনের দূরত্ব কত?
গত ৮মে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পুনরায় সময়ের আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা কি সময়ের আবেদন? আমরা তো ভেবেছি গেজেট। এরপর তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে প্রশ্ন করেনÑ বলেন তো, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর কোনটা?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেনÑ ‘টোকিও’। প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, ‘আমি তো জানতাম নিউ ইয়র্ক। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম এ সময় বলেন, আপনার হিসেবে নিউ ইয়র্ক, আমার মনে হয় টোকিও। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, বলেন তো, নিউ ইয়র্ক থেকে টোকিও যেতে কত সময় লাগবে? অ্যাটর্নি জেনারেল চুপ করে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর ঢাকা।
তিনি আবার জানতে চান ‘সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন আর গণভবনের দূরত্ব কত?’ এবারো নিশ্চুপ থাকেন মাহবুবে আলম। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমার মনে হয় কয়েক লাখ মাইলেরও বেশি, কারণ একটি ফাইল সুপ্রিম কোর্ট থেকে বঙ্গভবন আর গণভবনে যেতে আড়াই বছরের বেশি সময় লাগে। মনে হয়, আড়াই হাজার বছরেও পাড়ি দেয়া যাবে না।