শুক্রবার, ২ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » ই-পেপার | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » দু:শাসন ঢাকতে ধর্মকে ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
দু:শাসন ঢাকতে ধর্মকে ব্যবহার করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
উৎসঃ সাউথ এশিয়ান মনিটর/পক্ষকাল ডেস্ক ;বাংলাদেশের গণতন্ত্রে অনেক ক্ষত তৈরি করেছেন শেখ হাসিনা ওয়াজেদ। প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য তিনি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জঘন্য প্রতিশোধ নিয়েছেন, তার সমর্থকদের তাড়া করে ফিরছেন, তার দলের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছেন। তার প্রতি বিনয়াবনত না হলেই যে কোন বিশিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর তিনি চড়াও হচ্ছেন। ক্ষুদ্রঋণের দিকপাল মোহাম্মদ ইউনুস থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান- ইসলামী ব্যাংক - কেউ বাদ যায়নি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া যুদ্ধে নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ তুলে তিনি দেশটির প্রধান ইসলামী দলটিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছেন, এর বহুসংখ্যক নেতাকে ফাঁসি দিয়েছেন। এসবের তুলনায় তার সর্বশেষ ব্যর্থতা - ইসলামী আন্দোলনকারীদের দাবির সহযোগি হওয়া ও সংবিধানের সেক্যুলার নীতি অক্ষুণ্ন রাখতে অস্বীকৃতি- এগুলোকে সামান্য বলেই অনেকে মনে করছেন। কিন্তু এর পরিণতি হবে সুদূরপ্রসারি।
শেখ হাসিনা অমিতাচারী হলেও বাংলাদেশের মানুষ কমবেশি উদার। জনসংখ্যার ৯০% মুসলমান হলেও দেশটির সংবিধানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতার গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে। এখানে সুফি ধারার ইসলামের প্রবল প্রভাব রয়েছে। হিন্দুরা জনসংখ্যার ৯ শতাংশ হলেও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের সমাজে সাম্প্রতিক সময়ে এক ধরনের ধর্মীয় পুনরুত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ধর্মের প্রতি অবমাননা হচ্ছে এমন অভিযোগে ধর্মীয় গ্রুপগুলোর মধ্যে ক্ষোভ জোরদার হয়ে উঠছে, তারা রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। অমুসলিম এমনকি সেক্যুলার বা সমকামীদের মতো ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদেরকে অচ্ছ্যুৎ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসলামপন্থীদের সৃষ্ট এই আতংকের পরিবেশ দূর করার পরিবর্তে শেখ হাসিনার সরকার বলছে যে, খুন হওয়া উদারপন্থীরা নিজেরাই তাদের পরিণতির জন্য দায়ী। আসলে বাংলাদেশে ধ্বংসন্মোখ গণতন্ত্র নিয়ে, অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যে বৈধতা পেতে পারতো তা থেকে বঞ্চিত হয়ে সরকার এখন ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছে। সৌদি আরবের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ডলার উপহার পেয়ে সরকার প্রতি শহরে একটি করে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে।
নারীদের সমান অধিকার দিয়ে উত্তরাধিকারী আইন সংস্কার ও বাল্যবিয়ে বন্ধের প্রচেষ্টা থেকে তারা এখন পিছিয়ে এসেছে। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে তারা সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ন্যায়বিচারে প্রতীক শাড়ী পরিহিত চোখ বাধা এক নারীর মূর্তি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো, এই শেখ হাসিনার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি সংবিধানে সেক্যুলারিজম যুক্ত করেছিলেন। শেখ হাসিনা নিজে দেশের সবেচেয়ে বড় ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীকে গুড়িয়ে দিয়েছেন। তার ছেলেই স্বীকার করেছে যে সরকারের এই ধর্মপ্রীতির রূপ কোন বিশ্বাস থেকে নয়, এটা হলো ধর্মীয় দলগুলোর সমালোচনা থেকে আত্মরক্ষার একটি উপায়।
ধর্মান্ধরা কখনো সন্তুষ্ট হয় না
তবে, এ ধরনের তোষণ কখনো ফলদায়ক হবে না। এতে বিক্ষোভকারীরা আরো বেশি দাবি জানাতে সাহসী হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে তারা ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা স্কুল ও ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে। অন্য বহু দেশে স্বৈরশাসকরা নিজেদের বৈধতা জোরদার করতে ধর্মীয় অনুভুতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে। তবে, এটা করতে গিয়ে তারা এক দুষ্টচক্রে আটকা পড়ে। এতে উদারপন্থীরা আতংকিত হয়। অন্যদিকে, ধর্মান্ধদের কাছ থেকে ক্রমাগতভাবে চরম দাবি উত্থাপিত হতে তাকে।
এর একমাত্র ওষুধ হলো মুক্ত গণতন্ত্রের চর্চা। তখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষই ঠিক করতে পারবে তাদের সরকার কতটা ধর্মপরায়ন হবে। বেশিরভাগ ভোটার মূলত অর্থনীতি নিয়ে বেশি আগ্রহী। অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাই শেখ হাসিনা যদি ভোটারদেরকে তাদের পছন্দ মতো ভোট দানের সুযোগ দেন তাহলে হয়তো তারা তাকেই আবার বেছে নেবে। তখন ওই সব বিক্ষুদ্ধ ধর্মগুরুদের কথায় কান না দিলেও তার চলবে।