বুধবার, ৭ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » অর্থনীতি | বিশ্ব সংবাদ | ব্রেকিং নিউজ » সৌদি-কাতার বিবাদে বিপদ বাংলাদেশেরও
সৌদি-কাতার বিবাদে বিপদ বাংলাদেশেরও
পক্ষকাল সংবাদ ঃ
কাতারের আমির তামিম বিন হামাল আল থানিকে সঙ্গে নিয়ে কিছু দিন আগেও লাল গালিচায় হেঁটেছিলেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ, এখন সম্পর্ক বৈরিতায়- ছবি: রয়টার্স‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’- বাংলাদেশের এই পররাষ্ট্র নীতিকে জটিলতার মুখে ফেলতে যাচ্ছে সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের বিবাদ।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি দেশেই বহু বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে, যাদের পাঠানো অর্থে গতিশীল দেশের অর্থনীতি। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে সৌদি আরবে; বিশ্বকাপ আয়োজন ঘিরে কাতারে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও বড় হচ্ছে।
এর মধ্যেই সোমবার কাতারের সঙ্গে কূটনেতিক সম্পর্কোচ্ছেদের ঘোষণা দেয় সৌদি আরবসহ পাঁচটি আরব রাষ্ট্র। অন্য দেশগুলো হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন ও মিশর।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে কাতারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত জানাল প্রতিবেশী দেশগুলো।
২০১৪ সালেও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল সৌদি আরব, পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এবার ঘোষণাটি এল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সৌদি সফরের পর, যেখানে ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ছিল ট্রাম্পের।
সৌদি আরবে যে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে ট্রাম্প বক্তৃতা করেছিলেন, তাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও যোগ দিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনের যৌথ বিবৃতিতে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের জন্য ইরানকে দায়ী করা হয়।
গত বছর সৌদি আরবের নেতৃত্বে যে সামরিক জোট গড়ে ওঠে, তার অংশীদার হয় বাংলাদেশও। ইয়েমেনে ইরানের মদদপুষ্ট হুতি বিদ্রোহদের উপর সৌদি আরবের হামলায়ও ঢাকার সমর্থন ছিল।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকটাই কোণঠাসা ইরান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহের কথা নানা সময়ই প্রকাশ করেছে। হজ নিয়ে গত বছর সৌদি আরব ও ইরানের দ্বন্দ্বের সময় বাংলাদেশ নীরবই থেকেছে।
কিন্তু এবার দেশটি কাতার এবং তা বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার হওয়ায় পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
প্রশ্নের উত্তরে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখনই কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভবিষ্যতে পড়তে পারে।
দুই আরব দেশের এই দ্বন্দ্বের ভেতরকার বিভিন্ন উপাদান বাংলাদেশের জন্য বিপদের হবে বলে শঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সঙ্কট চলতে থাকবে তা আমাদের জন্য শুভ হবে না।”
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব; দেশটিতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন খাতে কাজ করছেন। কাতারে এই সংখ্যা লাখের বেশি হলেও ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের কর্মযজ্ঞে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক বেড়েছে। ২০১৫ সালে সৌদি আরবের চেয়েও কাতারগামী বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি ছিল।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট কবীর বলেন, এটা এখনও স্পষ্ট নয় যে সৌদি-কাতার দ্বন্দ্ব কী রূপ নিতে যাচ্ছে।
“কিন্তু এটা যদি চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশের উপর কোনো পক্ষ নেওয়ার চাপ আসবে, যা সুখকর হবে না।”
দুটি দেশেই বাংলাদেশের স্বার্থ থাকায় এই ধরনের পরিস্থিতি হলে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তবেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
“সৌদি আরব তখন তার জোটের দেশগুলোর সমর্থন চাইতে পারে, সেক্ষেত্রে অনুরোধ আসবে বাংলাদেশের কাছেও। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হবে। কেননা, দুটি দেশেই আমাদের বহু মানুষ রয়েছে।”