মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি | সম্পাদক বলছি » কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস করতে প্রধানমন্ত্রীকে আল্লামা শফীর চিঠি
কওমি স্বীকৃতি জাতীয় সংসদে পাস করতে প্রধানমন্ত্রীকে আল্লামা শফীর চিঠি
পক্ষকাল সংবাদ ঃকওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমান প্রদানের বিষয়টি জাতীয় সংসদে পাস করার আবেদন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন আল্লামা আহমদ শফী। গত ১১ জুন এ চিঠি জাতীয় সংসদ ভবনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিয়ে যান আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধি আলেমগণ।
১১ জুন এ চিঠির আলোকে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী দ্রুত কওমি স্বীকৃতি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন।
চিঠিতে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর ও আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী প্রথমেই কওমি স্বীকৃতির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ও দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতিসমূহকে ভিত্তি ধরে কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স (ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি) এর সমমান প্রদান করা হল।’ আপনার এ যুগান্তকারী ঘোষণা দ্বারা একটি শুভ ইতিহাস ও সদকায়ে জারিয়া সূচিত হল। আমরা দুআ করি, মহান আল্লাহ তায়ালা আপনার সদকায়ে জারিয়া কবুল করুনএবং আপনার পিতা মরহুম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার পরিজনসহ ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণকারী সকলের আত্মার মাগফিরাত করুন।
ইউনিভার্সিটির অনুমোদন ছাড়া স্বতন্ত্র সনদ দেয়ার আহ্বান
চিঠিতে আল্লামা আহমদ শফী কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি স্বতন্ত্রভাবে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, (আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ) কমিটি সনদ বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বলে বিবেচিত হবে। আমরা জানি দারুল উলুম দেওবন্দের বিষয়টিও এরূপ। দারুল উলুম দেওবন্দ যে সনদ ছাত্রদের প্রদান করে তা গৃহীত হওয়ার জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ইউনিভার্সিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। আমাদের দাবি, কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য প্রজ্ঞাপনের এ ধারাটি যথোপযুক্ত। সনদ অনুমোদন করাতে আমাদের ছাত্রদের যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে না হয় তার প্রতি আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সনদ দেবে আল হাইআতুল উলয়া, নাম হবে তাকমিল
চিঠিতে বলা হয়, ‘দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান বাস্তবায়ন কমিটি’ দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা গ্রহণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়েছে ‘আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের উক্ত প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকেই সনদ দেয়া হবে। আরো উল্লেখ্য যে, ‘দাওরায়ে হাদিস’কে বর্তমানে ‘তাকমিল’ নামে অভিহিত করা হয়। এ জন্য সনদে তাকমিল নামটি বিদ্যমান থাকবে।
আমরা বিশ্বাস করি, কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা এবং দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি অক্ষুণ্ন রাখা তখনই সম্ভব যদি তা সরকারের মন্ত্রীসভায় পাস করত: জাতীয় সংসদে পাস করিয়ে নেয়া হয়। সনদ বিবেচনার জন্য অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হলে দারুল উলুম দেওবন্দের স্বকীয়তা ও মূলনীতি থেকে কওমি মাদরাসাকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে।
বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে স্বতন্ত্র মান দেয়া হতো
চিঠিতে বলা হয়, বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে দারুল উলুম দেওবন্দের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে উচ্চ পর্যায়ের মান দেয়া হত। এ মানের জন্য সনদধারী ছাত্রকে অন্য কোনো ইউনিভার্সিটির অনুমোদন গ্রহণ করার প্রয়োজন হত না। যারা সনদ দিতেন তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেই এ সনদ গ্রহণযোগ্যতা পেত। আমরা মনে করি, আপনি এবং আপনার সরকার দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান বাস্তাবায়ন কমিটির উপর যথার্থই গভীর আস্থঅ পোষণ করেন। এ গভীর আস্থা পোষণের জন্য আমরা আপনার এবং আপনার সরকারের শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গি ইজতেমার জমি প্রসঙ্গ
চিঠিতে সরকারের ইসলামি কার্যক্রমের দিকগুলো তুলে ধরা হয়। লেখা হয়, আপনার পিতা মরহুম শহীদ শেখ মুজিবুর রহমান তাবলীগ জামাতের মারকায প্রতিষ্ঠার জন্য কাকরাইল মসজিদের জায়গাটি বরাদ্ধ দিয়েছিলেন। েএর উসিলায় বর্তমানে সারা বিশ্বের সবচে বড় ইজতেমা বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিরাট গৌরবের বিষয়। এমনিভাবে তিনি জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশের মুসলিমগণ ইসলামের শিক্ষা ও বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা লাভ করে থাকেন।
আপনি বিশ্ব ইজতেমার জন্য টঙ্গীতে প্রায় একশ ষাট একর জমি দিয়েছেন। যা কেবলমাত্র তাবলীগ জামাতের লোকজন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এতে সরকারের সহযোাগিতা থাকে, কিন্তু সরকারের কোনো প্রকার অংশীদারিত্ব থাকে না। বর্তমানে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সমগ্র বিশ্ব থেকৈ বহু মুসলিম বাংলাদেশে আগমন করেন। এটাও বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য গৌরবের বিষয়।
সনদের আইনগত ভিত্তি আমার জীবনের সর্বশেষ কামনা
চিঠিতে কওমি সনদের আইনগত ভিত্তি জীবনের সর্বশেষ কামনা বলে উল্লেখ করেন আল্লামা শাহ আমদ শফী। লিখেন, আপনি দেশ, জাতি ও কওমি মাদরাসার একজন অভিভাবক। কওমি মাদরাসার সনদের মান প্রদান একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। সনদের মান প্রদান আপনার জীবনেতিহাসের একটি সোনালী অধ্যায়। এটা অবশ্যই আপনার পার্থিব জীবন ও পরকারীন জবিনের মঙ্গল বয়ে আনবে ইনশাল্লাহ।
আমি আমার বয়সের শেষপ্রান্তে উপনীত। আর কত দিন বেঁচে থাকব তার একমাত্র মহান আল্লাহই জানেন। কওমি মাদরাসার সনদের মানের আইনগত ভিত্তি রচিত হোক, এটাই আমার জীবনের সর্বশেষ কামনা। আপনার কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ, কালবিলম্ব না করে সনদের মান আপনার মন্ত্রীসভায় পাস করতঃ আগামী সংসদ অধিবেশনে তা পাস করিয়ে নেবেন। আমি এবং আমরা দুআ করি, মহান আল্লাহ আপনার ও আপনার বংশধরকে ইহকাল এবং পরকালে মঙ্গল দান করুন।
উল্লেখ্য, এই চিঠিসহ গত ১১ জুন বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আশরাফ আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন, আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ, আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আবদুল বাছেত বরকতপুরী, মুফতি নূরুল আমিন, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা নূরুল ইসলামও মাওলানা উসামা আমিন।