নেতাদের রাজধানী ছাড়তে খালেদার নির্দেশ
পক্ষকাল সংবাদ ;বিগত ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বয়কট করলেও আগামীতে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো রকম ছাড়া দিতে নারাজ বিএনপি। যে কারণ নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবি আদায়ের আন্দোলন ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানীতে অবস্থানরত দলের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায়ে জনমত গড়ে তোলার জন্য এই ঈদকে কাজে লাগাতে নেতাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিয়েছেন দলীয় প্রধান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে দলের নেতাদের মধ্যে যারাই যাচ্ছেন, তাদেরকে তিনি বলছেন- ‘আপনারা যার যার এলাকায় যান। দলের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান, জনগণের পাশে দাঁড়ান। সুযোগ পেলে গণসংযোগ করুন। জনগণকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তৈরি করুন।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঈদের দিন ১২টা থেকে পৌনে একটা পর্যন্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে, এরপর বিশিষ্ট নাগরিক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন তিন। পরে বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন। এরপর বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাবেন।
বিগত কয়েক বছরে স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে লন্ডনে ঈদ উদযাপন করেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এবার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে তারেক রহমানের পরিবারের সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করবেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ের সঙ্গে ঈদ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র, মাঝারি সারি ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাই এবারও নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। আর যারা ঢাকা ঈদ করবেন তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে নিজে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার গরীব ও দুঃস্থদের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি, চিনি-সেমাই বিতরণ করেছেন।
পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোরে, ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদী ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন সকালে তার নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঢাকায় চেয়ারপারসনের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ঢাকায় ঈদ করে পরের দিন নোয়াখালী নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, মাহবুবুর রহমান শামীম, কাদের গনি চৌধুরী। নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ করবেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও যুগ্ম-মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতা শওকত মাহমুদ কুমিল্লায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশালে, হারুনুর রশিদ চাপাইনবাবগঞ্জে, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদীতে, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহে, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনায়, শফিউল বারী বাবু লক্ষীপুরে, তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোরের লালপুরে, আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জে, মাহবুবুল হাসান ভূইয়া ফরিদপুরে, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোরে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করবেন।
এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে হাসান মামুন, অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার, আনোয়ার হোসেন উজ্জল রাজশাহীতে, ফরহাদ হোসেন আজাদ, আবদুল মতিন, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, শাম্মী আক্তার, এম আমিনুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফরী, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, শহীদুল্লাহ ইমরান ও বিল্লাল হোসেন তারেক নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। এদের অনেকেই ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ঢাকায় ঈদ করবেন।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ঢাকায় ঈদ করবেন. এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, এনাম আহমেদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ঢাকায় ঈদ করবেন।
বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ অনেকেই ঢাকায় ঈদ করবেন।
কারাগারে ঈদ করবেন অনেকে:
বিগত বছরের তুলনায় এবার কারাগারে ঈদ করা বিএনপির নেতাদের সংখ্যা কিছুটা কম। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বেশ কয়েক বছর ধরেই কারাবন্দিদের সঙ্গে ঈদ করছেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরীসহ তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী এবার কারাগারে ঈদ করবেন।