এবার ঈদে ভোট রাজনীতি জমজমাট
পক্ষকাল ডেস্কঃ
এবারের ঈদ হবে একটু ভিন্ন আমেজের। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঢেউ লাগায় এবার ঈদ অনেকটা রূপ নিয়েছে নির্বাচনী উৎসবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, মাঠের বিরোধী দল বিএনপি, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রীরা ছুটছেন নিজ নিজ এলাকায়। শুধু এমপি-মন্ত্রীরাই নন, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই এবার ঈদ উদযাপন করবেন গ্রামে। অনেকে ইতিমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় চলে গেছেন। তাদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে ঈদ রাজনীতি। বাকিরা ঈদের আগেই যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
শুক্রবার জুমাতুল বিদা আদায়ের পর কোলাকুলির মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঈদে ভোটের রাজনীতি শুরু করেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। চলবে ঈদের পর আরও দু-তিন দিন। এ সময়ে ভোটারদের মন জয় করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটিই করবেন না তারা।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঈদের পর নতুনমাত্রায় সারা দেশে প্রচার ও গণসংযোগ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই ভিন্নমাত্রার প্রচার শুরু করে দিয়েছেন নেতারা।
এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঢাকায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ও সিনিয়র নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা। খালেদা জিয়া চিঠির মাধ্যমে এলাকায় যেতে নেতাদের এমন নির্দেশনা দেন।
সক্রিয়দের পাশাপাশি দীর্ঘদিন যারা এলাকাবিমুখ ছিলেন, সেই বসন্তের কোকিলরাও নির্বাচন সামনে রেখে নিজ নিজ এলাকায় পা রাখছেন। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার কয়েকগুণ বেশি নগদ টাকা নিয়ে এলাকায় যাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ঈদ বকশিশের নামে অনেককেই দিচ্ছেন নগদ টাকা। এলাকায় প্রভাব রয়েছে, এমন নেতাদের কাছে টানতে তাদের বকশিশের পরিমাণ একটু বেশি দিচ্ছেন। সবমিলে নির্বাচনী আমেজে গ্রামীণ অর্থনীতিও এবার বেশ চাঙ্গা। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতিমধ্যে প্রথমপর্ব জাকাতের কাজ শেষ করেছেন।
ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ছবি সংবলিত বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুনে এমনকি মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়েও উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এবার তিন দলেই তুলনামূলকভাবে প্রবীণদের তুলনায় নবীনদের সংখ্যাই বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে অনেকদিন পর কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের এলাকায় আগমনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলের নেতাকর্মীরাও।
আওয়ামী লীগ : দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরের মতো এবারও ঈদ করবেন ঢাকায়। এদিন সকালে তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের নেতাকর্মীসহ আপামর জনসাধারণের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সিলেট, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ঢাকায়, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলায় ঈদ করবেন। তোফায়েল আহমেদ রমজানের প্রতি সপ্তাহে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ভোলায় গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কাজী জাফরউল্লাহ, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ঢাকায় ঈদ করবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সকালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে যাবেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ঈদের দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। পরের দিন নির্বাচনী এলাকা সিরাজগঞ্জ যাবেন। মন্ত্রীদের মধ্যে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রামে, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারীতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেট, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গাজীপুর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাঁদপুর, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ঢাকা, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কুমিল্লা, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মির্জা আজম জামালপুর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নিজ এলাকা কেরানীগঞ্জে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম রাজশাহী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু নরসিংদী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক নাটোরে ঈদ করবেন।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আহমদ হোসেন নেত্রকোনা, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ সিলেট, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম মাদারীপুর, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাট, বিএম মোজাম্মেল ঢাকায়, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দিনাজপুরে ঈদ করবেন। এছাড়া প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ মাদারীপুর, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ এবং বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন নিজ জেলা মাদারীপুরে, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী নোয়াখালীতে ঈদ করবেন।
জানতে চাইলে রংপুরের মিঠাপুকুর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার যুগান্তরকে বলেন, ইতিমধ্যে অনেক নেতা এলাকায় পৌঁছেছেন। তারা হাটে-বাজারে, মসজিদে এলাকার মানুষের সঙ্গে দেখা করছেন। যোগ দিচ্ছেন ইফতার মাহফিলে। আর এ লক্ষ্যে এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে উচ্ছ্বাস। তারা সদলবলে কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপি : বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার ও বনানী কবরস্থানে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করবেন তিনি। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ইংল্যান্ডে ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এবার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে তাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী মেয়ের সঙ্গে ঈদ করবেন। এদিকে বিএনপির সিনিয়র, মাঝারি ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাই এবার নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন বলে জানা গেছে। যারা যেতে পারবেন না, তারা ইতিমধ্যে এলাকায় গিয়ে ঘুরে এসেছেন।
জানতে চাইলে মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জামান কামাল মোল্লা নূরউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, সামনে যেহেতু নির্বাচন। তাই এবারের ঈদ একটা ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করতে হচ্ছে। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার সব ধরনের প্রস্তুতিই একটু বেশি। রমজান শুরুর পর এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইফতারসহ নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। গরিব ও অসহায় নেতাকর্মীদের সাধ্যমতো সহায়তা করেছি, যাতে তারা খুশিমনে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।
নেতাদের পারিবারিক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম যশোরে, ড. আবদুল মঈন খান নরসিংদী ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঈদের দিন সকালে তার নির্বাচনী এলাকা কেরানীগঞ্জে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে ঢাকায় চেয়ারপারসনের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। চট্টগ্রামে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন- ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, এসএম ফজলুল হক, মাহবুবুর রহমান শামীম, কাদের গনি চৌধুরী। নির্বাচনী এলাকা নোয়াখালীতে ঈদ করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন। লক্ষ্মীপুরে ঈদ করবেন প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতা শওকত মাহমুদ কুমিল্লায়, মজিবুর রহমান সরোয়ার বরিশাল, হারুনুর রশিদ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খায়রুল কবির খোকন নরসিংদী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ময়মনসিংহ, ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন সিলেটে, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত যশোর, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নেত্রকোনা, তাইফুল ইসলাম টিপু নাটোর, আমিরুল ইসলাম খান আলীম সিরাজগঞ্জ, মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু ফরিদপুর, অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহার পটুয়াখালীতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ করবেন। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জল, ফরহাদ হোসেন আজাদ, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আবদুল মতিন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, এম আমিনুল ইসলাম, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফরী, সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, রেহেনা আক্তার রানু, শহীদুল্লাহ ইমরান, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, বিল্লাল হোসেন তারেক নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করবেন। তাদের অনেকেই ইতিমধ্যে ঢাকা ছেড়েছেন।
তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আবদুস সালাম আজাদ, হাসান মামুন ঢাকায় ঈদ করবেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদল সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান ঢাকায় ঈদ করবেন।
সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন ঈদের দিন চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু বলেন, নির্বাচন এলে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় বেড়ে যায়। বিগত সময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কেউ খোঁজ নেননি। নির্বাচনের ছোঁয়া লাগায় অনেকেই এখন এলাকায় ভিড় করছেন। তিনি বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারও কয়েক লাখ টাকার জাকাত দিয়েছি। নেতাকর্মীদের নানাভাবে বকশিশ দেয়ার চেষ্টা করছি। এবারের ঈদে নির্বাচনী ছোঁয়া লাগায় অন্যান্য বারের চেয়ে খরচ একটু বেশি হবে বলে জানান এ নেতা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবারও কারাবন্দিদের সঙ্গে ঈদ করছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু ও যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীও কারাগারে ঈদ করবেন।
জাতীয় পার্টি : ঈদ সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ গোছাতে দলের সংসদ সদস্যসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ঢাকায় বসে না থেকে যার যার নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যেতে এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মনোযোগী হতে বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, পার্টি চেয়ারম্যানের নির্দেশনা পেয়ে দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য যার যার নির্বাচনী এলাকায় ছুটেছেন। সংসদ সদস্য নন, কিন্তু আগামী সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির টিকিটে নির্বাচন করতে চান, এমন সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেক আগেই ছুটে গেছেন এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদ করতে।
পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইতিমধ্যে তার নির্বাচনী এলাকা রংপুর থেকে ঘুরে এসেছেন। দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ময়মনসিংহে এবং আরেক কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের রংপুরে ঈদ করবেন। প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু চট্টগ্রামে ঈদ করবেন। জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ওমরা থেকে ফিরে ছুটে যাবেন নির্বাচনী এলাকায়।
জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত ঢাকার তিনটি আসনের সংসদ সদস্যের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম নিজ নির্বাচনী এলাকা নবাবগঞ্জ ও দোহারে ঈদ করবেন। এছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং সম্ভাব্য প্রার্থী মীর আবদুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহম্মেদ মিলন ঢাকায় ঈদ করবেন।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন মুলতবি হওয়ার পরপরই নিজ নিজ এলাকার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম উমর, ইয়াহিয়া চৌধুরী, এমএ নোমান, পীর ফজলুর রহমান, শওকত চৌধুরী, মশিউর রহমান রাঙ্গা, একেএম মাইদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, নূর ই হাসনা চৌধুরী লিলি, নাসরিন জাহান রত্না, মাহজাবিন মোর্শেদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সেলিম ওসমান, সেলিম উদ্দিন, আমির হোসেন, নুরুল ইসলাম মিলন, মোহাম্মদ ইলিয়াস প্রমুখ।
জানতে চাইলে দলের সাবেক মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘পার্টি চেয়ারম্যান সবাইকে এলাকায় গিয়ে এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।’
বিভিন্ন ব্যুরো অফিসে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে আরও জানা গেছে, সারা দেশেই বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখরিত। উত্তরাঞ্চলের সবক’টি আসনেই এখন ঈদ রাজনীতিতে মুখর। মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাকর্মীদের পদচারণায় ব্যস্ত তারা। বগুড়ায় ঈদ সামনে রেখে সাত আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা মাঠে। তাদের সঙ্গে বসন্তের কোকিলখ্যাত অনেকেই এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন। কুমিল্লায় ১১টি নির্বাচনী আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইফতার পার্টি, জাকাত, ফিতরা, ঈদ বকশিশ, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি বিতরণ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত আছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে জানান দিচ্ছেন। ঈদকে ঘিরে ময়মনসিংহের ১১টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে সরব।
দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিসহ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকায় এলেও এর সম্পূর্ণ উল্টোচিত্র বিএনপি নেতাদের ক্ষেত্রে। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আশায় বিএনপির যেসব নেতারা বছরজুড়ে লবিং-তদবির করছেন তাদেরও এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না এলাকায়। পরিস্থিতি এমন যে, এলাকায় আসা তো দূরের কথা, মাঠের কর্মীদের ঈদ আবদার পূরণের ভয়ে মোবাইল ফোন পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছেন বিএনপির অনেক নেতা। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদেরও রয়েছে ভিন্ন ব্যাখ্যা। চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি সংসদসীয় আসনে বর্তমান এমপি-মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে এবার নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনী ঈদ কাটাবেন। এরই মধ্যে তারা ইফতার সামগ্রী বিতরণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন। নিজেদের নির্বাচনী এলাকায় কেউ কেউ অকাতরে বিলাচ্ছেন ‘ঈদ উপহার’। দলীয় নেতাকর্মী, অনুসারীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে তালিকা করে গরিব ও অসহায়দের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি, পাঞ্জাবিসহ ঈদবস্ত্র বিতরণ করেছেন।