মঙ্গলবার, ১৮ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » ইসলামপুরে বন্যার্ত প্রতিবন্ধীদের খোঁজে কেউ যায়নি
ইসলামপুরে বন্যার্ত প্রতিবন্ধীদের খোঁজে কেউ যায়নি
পক্ষকাল সংবাদ ঃ ইসলামপুরের বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দি ৮০০ প্রতিবন্ধি পরিবারের জীবন ধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বন্য্যার্ত প্রতিবন্ধিদের আয় রোজগার সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে গেছে। বন্যার পানিবন্দি দশায় ১২ দিন পার করলেও এখন পর্যন্ত প্রতিবন্ধিদের সাহায্যে কেউ যায়নি। প্রতিবন্ধিরা এখনো পায়নি কোন ত্রাণসামগ্রী। এতে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রায় ৮০০ প্রতিবন্ধী পরিবার পানিবন্দি দশায় খেয়ে না খেয়ে সর্বাধিক দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে মঙ্গলবার সকালে পাথর্শী ইউনিয়নের জারলতলা গ্রামের প্রতিবন্ধী আঃ করিম এক পা আর ক্র্যাচে ভর করে বন্যার পানি ভেঙে খাবার সংগ্রহে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, বন্যার পানিতে মাচার উপর ১২ দিন কেটে গেছে। ত্রাণ তো দূরের কথা কেউ খোঁজও নেয়নি। অথচ আঙ্গরে এহন বন্যার পানিতে পড়ে মরার দশা হইছে। একই ইউনিয়নের দেলীরপাড় গ্রামের প্রতিবন্ধী হবিবর রহমান হবি বন্যার পানিতে রাখা ট্রাইসাইকেলে বসে বলেন, ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছি, ও সাংবাদিক ভাই আজ কেউ ত্রাণ দিতে আসবো নাকি? খুব ক্ষুধা লাগছে। সাতদিন ধরে ভাত আইন্দে খাবার পাইনা। বানে ঘরের ভিতর থেকে পানি এহনো সরে নাই। ঘরবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হইছে। চকির উপর চকি বসিয়ে রাত্রি যাপন করছি। রাতে চৌকির উপর বিষধর সাপও উঠে আসে। আশপাশের টিউবওয়েল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। জীবন বাঁচানোর জন্য বানের পানিই খাইতাছি। একই গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সামিউল হক এর বাড়িতে গিয়ে তাকে ডাকতেই সাদাছড়ি ঠুকিয়ে ঘর থেকে বের হন। তিনি কাছে এলে পরিচয় দিয়ে কেমন আছেন বলতেই হাউ মাউ করে কেঁদে বলেন, ভাই আঙ্গরে বাড়িঘরে পানি উঠছে তাই সাতদিন ধরে ভাত আইন্দে খাবার পাইনা।
শুকনা চিড়া মুুড়ি বিস্কুট আর বানের পানি খাইয়া বাইচা আছি। এভাবে আর দুই চারদিন চলতে থাকলে বাঁচতে পারমু না। একইদিন ইসলামপুরের দক্ষিণ চিনাডুলি গ্রামের শাারিরিক প্রতিবন্ধি তোফাজ্জল হোসেন, জারুলতলা গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধি আব্দুর করিম , পূর্ব বামনা গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি মন্টু মিয়া, দরিয়াবাদ গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধি মিনারা বেগম, গাঁওকুড়া গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধি নান্নু মিয়া, বাটিকামারী গ্রামের শারিরিক প্রতিবন্ধি সাখাওয়াত হোসেনসহ অর্ধশতাধিক প্রতিবন্ধিদের সাথে দেখা করে জানা গেছে, ইসলামপুরে প্রায় প্রায় ৮০০ প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘর বাড়ীতে বন্যার পানি উঠেছে। এসব পানিবন্দি প্রতিবন্ধীদের জীবন ধারণ সর্বাধিক দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
জামালপুর জেলার ডিজএ্যাবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশন টু ডেভেলপমেন্ট (ডিপিওডি)এর পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ইসলামপুরে প্রায় ৮০০ প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘর বাড়ীতে বন্যার পানি উঠেছে। প্রতিবন্ধিদের শুকনো রাস্তায় চলতেই অন্যের সাহায্য নিতে হয়। তাই ঘর বাড়ীসহ বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি উঠায় প্রতিবন্ধীরাই সবচেয়ে বেশী কষ্টে আছেন। বন্যাদূর্গত প্রতিবন্ধী পরিবার গুলোর মাঝে খাবার, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণসহ তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা অত্যান্ত জরুরী। এছাড়াও বন্যা পরবর্তী পুর্নবাসন কর্মসূচীর মাধ্যমেও বন্যাদূর্গত প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।
ইসলামপুরের ইউএনও এবিএম এহছানুল মামুন জানান, ইসলামপুরের বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দি প্রতিবন্ধিদের তালিকা করে তাদের ঘরে ঘরে ত্রান সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চিনাডুলি ইউনিয়নের পূর্ব বামনা এবং সাপধরী ইউনিয়নের জোড়ডোবা গ্রামের প্রতিটি প্রতিবন্ধি পরিবারের ঘরে ঘরে নিজে গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।