শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭
প্রথম পাতা » জেলার খবর | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » সংরক্ষিত নয় সরাসরি ভোটে লড়তে চান সাবিনা আখতার তুহিনসহ অনেকে
সংরক্ষিত নয় সরাসরি ভোটে লড়তে চান সাবিনা আখতার তুহিনসহ অনেকে
পক্ষকাল সংবাদ ঃ
সংরক্ষিত কোটায় আর ধরনা না দিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিতে চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের কয়েকজন এমপি । তারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে যেতে চান সংসদে। এদের মধ্যে আছেন দলের কাজে গতিশীল কয়েকজন নেত্রী যারা বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন সময়ে মহিলা নেত্রীরা সাধ্যমতো দলের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছেন। ফলে সংরক্ষিত মহিলা কোটায় এমপি হয়েছেন। এই সব মহিলা নেত্রী ও এমপিদের সার্বিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা সন্তুষ্ট দলের হাইকমান্ড। তরুণ নেতৃত্বের পাশাপাশি দলে শিক্ষিত ও মার্জিত মহিলা নেত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া শুরু হয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকেই। নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতায় ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়নের আলোচনা চলছে। এতে আশান্বিত হয়ে উঠেছেন মহিলা নেত্রীরা। আগামীতে দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে এমন প্রত্যাশা তাদের। এর মধ্যে অনেকে হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলেও জানা গেছে।
দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনে এমপি নির্বাচিত হন ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী বর্তমান যুবমহিলা লীগ নেত্রী সাবিনা আক্তার তুহিন। বিরোধীদল থাকতে রাজপথে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন তিনি। ১/১১ দলের দুঃসময়ে নেত্রীর পক্ষে জোরালো ভুমিকা রাখেন। তার কর্মকাণ্ডে দলের হাইকমান্ডও সন্তুষ্ট হয়ে অনেকটা অল্প বয়সেই তাঁকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেয় দল। আর সংরক্ষিত নয়, এবার সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজপথ কাঁপানো ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের এই সভাপতি।
তুহিন বলেন, দেশের কোনো ক্ষেত্রেই মেয়েরা পিছিয়ে নেই। তাহলে কেন শুধু সংরক্ষিত আসনে আমাদের এমপি হতে হবে। পুরুষের পাশাপাশি আমরাও সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে চাই। ঢাকা-১৪ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। এই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছেন। এখানকার বর্তমান এমপি আসলামুল হকের সাথে তাঁর তুমুল বিরোধ রয়েছেও বলে জানা যায়। তিনি বলেন, সবক্ষেত্রেই মেয়েরা এগিয়ে। দেশের শীর্ষ দুই দলের প্রধান হচ্ছেন মহিলা। তাই মহিলাদের সামনে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া উচিত। এতে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আশা করি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-৪ আসন থেকে এডঃ সানজিদা খানম নির্বাচন করবেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং জয়লাভ করেছিলেন। দশম সংসদে জাপাকে ঐ আসন ছেড়ে দিলে তাঁকে সংরক্ষিত আসনে এমপি করা হয়। জাপা এবার এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, অতএব আগামীতে পাবেন এই ব্যাপারে বেশ আশাবাদী তিনি। তিনি বলেন, এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি আশা করি নেত্রী আবারও আমাকে মনোনয়ন দিবেন ।
টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর) থেকে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ছা্ত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তারানা হালিম। বর্তমানে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী । তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। আমার এলাকার সম্মানিত ভোটারদের সাথে যোগাযোগ রাখছি, তাঁদের জন্য কাজ করছি। দল আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিলে জনগণ তাকে নির্বাচিত করবেন বলে আশাবাদী।
চাঁদপুর-৫ (হাজিগঞ্জ-শাহারাস্তি) আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. নূরজাহান বেগম মুক্তা। সংরক্ষিত কোটা থেকে বেরিয়ে আসতে চান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেত্রী। এরই মধ্যে সংসদে এবং সংসদের বাইরে সফলতার স্বাক্ষর রেখে নিজ নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূলে নৌকার পক্ষে কর্মীসভা, উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে নানা কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরো শক্তিশালী করতেই আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তৃণমূল বর্তমানে যেভাবে কাজ করছে তাতে করে আগামী নির্বাচনে চাঁদপুর-৫ আসন থেকে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারবো।
জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসন থেকে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তমের কন্যা মাহজাবিন খালেদ বেবি। আধুনিক চিন্তাচেতনার শিক্ষিতা এই নারী অল্প দিনেই রাজনীতিতে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। তাই এবার আর সংরক্ষিত কোটায় নয় সরাসরি জনগণের ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হতে চান তিনি।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগনেত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। রাজনীতির মারপ্যাঁচে নিজ এলাকায় যদিও অনেকটা কোণঠাসা। বিগত সময়ে আন্দোলন সংগ্রামে যথেষ্ট ভূমিকা রাখায় দলে মূল্যায়ন করা হয়। মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরপর দু দফায় মহিলা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে টানা দুইবার সংরক্ষিত আসনের এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীতে সরাসরি নির্বাচনের জন্য দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা তার। যদিও বর্তমান এমপি কেন্দ্রীয় নেতা মৃনাল কান্তি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিনকে টপকিয়ে মনোনয়ন পাওয়া খুবই দুষ্কর।
বর্তমানে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত আওয়ামীলীগের ১৮ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। আরও একডজন সংরক্ষিত মহিলা এমপিসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেত্রী সরাসরি ভোটে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।