বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » অপরাধ | ব্রেকিং নিউজ | রাজনীতি » আজ ১২তম বার্ষিকী দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার
আজ ১২তম বার্ষিকী দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার
পক্ষকাল সংবাদ : এক যুগেও দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার সব মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ১৬১ টি মামলা দায়ের হয়। এই এক যুগে ১০২ টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৫৯ টি মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। তবে এগুলো কবে শেষ হবে সে ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
২০০৫ সালের এই দিনে সারাদেশের ৬৩টি জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৫ শ’র বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলার মাধ্যমে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’য়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি জঙ্গিরা প্রকাশ্যে তাদের অবস্থান জানান দেয়। ওই হামলায় দু’জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও নামে-বেনামে বারবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। বর্তমানে নতুন নামে, ভিন্ন পরিচয়ে আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেছে তারা।
গত বছরের ১ জুলাই দেশের ইতিহাসের সব চেয়ে বড় জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের হলি আর্টিজানে। এক সপ্তাহের মাথায় ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত চলাকালে প্রকাশ্যে জঙ্গিরা হামলা চালায়। এর আগে ২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করে। জেএমবি’র কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে এখন এই সংগঠনটি নব্য জেএমবি নাম ধারণ করে বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গি হামলার চেষ্টা করছে। পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, এই মুহূর্তে জঙ্গিরা বিচ্ছিন্নভাবে হামলা চালানোর মতো ক্ষমতায় থাকলেও তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে জেএমবির ওই ঘটনায় দেশের ৬৩ জেলায় ১৬১টি মামলা হয়। আসামি করা হয় ৬৬০ জনকে। এর মধ্যে ৪৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে ১০২ টি মামলার। তার মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২৪৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ১১৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাসেল, আবদুল কাফি, এমএ সিদ্দিক বাবলু, রানা ওরফে আবদুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আবদুর রউফ এবং রায়হান ওরফে উবায়েদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছে। এসব মামলায় পুলিশের হিসাবে ৫০ জন আসামি পলাতক রয়েছে। জামিনে রয়েছে ৩৫ জন।
সূত্র জানায়, সেদিন রাজধানীর ৩৩টি স্পটে বোমা হামলার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা হয়। ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার বাইরের ৫৯ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অনেক মামলায় সাক্ষীদের না পাওয়ার কারণে মামলা শেষ করতে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। আবার সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় জঙ্গিদের শাস্তিও সঠিকভাবে হচ্ছে না। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরিবর্তন করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করে আসছে। তারপরও জঙ্গিদের যাতে কঠোর সাজা হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাতশ’ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর এই মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আসাদুল ইসলাম আরিফের ফাঁসি কার্যকর হয়। সিলেটে শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হরকাতুল জিহাদের আমীর মুফতি আব্দুল হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি কার্যকর হয় এ বছরের ১৩ এপ্রিল।
বর্তমানে জেএমবি সংগঠনটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। ২০১০ সালের ২৫ জুন জেএমবি’র আমীর মওলানা সাইদুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর আমীর হন তাসনীম। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবি সালেহউদ্দিন ওরফে সালেহীন, বোমারু মিজান ও হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিবকে ছিনতাই করে। এদের মধ্যে রাকিব পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। জেএমবি’র আমীরের দায়িত্ব পায় সালেহ উদ্দিন।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে বাংলাদেশের জেএমবি’র সংশ্লিষ্টতার সূত্র পায় গোয়েন্দারা। ওই বিস্ফোরণের মূল হোতা ছিল সালেহ উদ্দিন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অপআদর্শিক এ দলটি একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তারা খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় রয়েছে। তাদের বড় ধরণের হামলার কোন সক্ষমতা নেই।